আপনি সম্ভবত জানেন যে পৃথিবীর বেশিরভাগ জায়াগাই পানি বা সমুদ্রের নিচে নিমজ্জিত। শতকার হিসেবে প্রায় ৭১ ভাগ জায়গা জুড়েই রয়েছে জলাভূমি। বিশাল এই জলাভূমির পায় পুরোটাই সমুদ্র বা মহাসমুদ্রের অন্তর্ভুক্ত। সমুদ্র সম্পর্কিত ১০টি ফ্যাক্ট নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
যেগুলো জেনে আপনিও হয়ত আমার মতোই বিস্মিত হবেন। প্রতিটি ফ্যাক্টের সাথে থাকবে তথ্যসূত্রের লিংক, যাতে করে আগ্রহীরা ফায়ক্টের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারবেন। এরপরও লেখার মাঝে কোন ভুল বা অসংগতিপূর্ণ তথ্য থাকলে কমেন্টে আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমরা সংশোধন করে নিবো ইনশাআল্লাহ। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই, সমুদ্র সম্পর্কিত ১০টি ফ্যাক্ট!
সমুদ্র সম্পর্কিত ১০টি ফ্যাক্ট

পৃথিবীর প্রায় ৯৫% জীবের আবাসস্থল যেখানে
সব প্রাণিরই বেঁচে থাকার জন্য পানি আবশ্যক একটি উপাদান। যেখানে জলজপ্রাণির সংখ্যা বেশি হবে, সেটা স্বাভাবিক। তাছাড়া, পৃথিবীতে জলভাগের পরিমাণও বেশি স্থলভাগের তুলনায়।
যুক্তরাষ্ট সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং ফেস্টিভাল এর এক তথ্যানুসারে, পৃথিবী প্রায় ৯৫ ভাগ প্রাণি জলজ। এগুলো সমুদ্র এবং বিভিন্ন নদ-নদীতে বসবাস করে। সেদিক দিয়ে স্থলচর জীবের সংখ্যা বিবেচনা করলে জলজপ্রাণির পরিমাণ কিছুটা করাও কঠিন হয়ে যায়।
সমুদ্রের ঢেউ শুধু পৃষ্ঠেই থাকে না
কক্সবাজার, কুয়াকাটা বা অন্য যে কোন সমুদ্র সৈকতে মানুষের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ থাকে সমুদ্রের ঢেউ। বিশাল ফেনিল জলরাশি কতো পথ পাড়ি দিয়ে বালুকাবেলায় আছড়ে পড়ছে, এই দৃশ্য যে কোন মানুষকেই অবাক করে দেয়, রোমাঞ্চিত করে তোলে।
আবার ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে এই ঢেউগুলোই ভাসিয়ে নিয়ে যায় জনপদ; খড়কুটোর মতো ডুবিয়ে দেয় বিশাল জাহাজকে। সবকিছু দেখে অনেকেরই মনে হতে পারে, ঢেউ বুঝি শুধুমাত্র পানির উপরিভাগেই থাকে।
আরও পড়তে পারেনঃ ৭টি মহাদেশের ১০টি অবাক করা ভৌগলিক ফ্যাক্ট
কিন্তু আসলে সেটা সত্য নয়। বরং সমুদ্রের সবচেয়ে বড় ঢেউগুলো বয় সমুদ্রের তলদেশে। সমুদ্রবিজ্ঞানী কিম মার্টিনি ডিপ সি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানান, সমুদ্রে বয়ে চলে এই ঢেউগুলোকে অভ্যান্তরিন ঢেউ বলা হয়। যেগুলো তৈরী হয় পানির ঘনত্বের তারতম্যের কারণে। অভ্যান্তরিন এই ঢেউগুলো একসাথে হাজার হাজার মাইল পর্যন্ত ভ্রমণ করে; এবং এদের উচ্চতা ৬৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
সমুদ্রগর্ভে থাকা স্বর্ণের পরিমাণ আপনার কম্পনাকে হার মানাবে
সমুদ্র যেমন জীববৈচিত্রে পরিপূর্ণ, তেমনি মূল্যবান সম্পদে ভরপুর। ন্যাশনাল ওশান সার্ভিসের এক তথ্যানুসারে, মহাসাগরজুড়ে প্রায় ২০ মিলিয়ন টন স্বর্ণ ছড়িয়ে আছে।
এই পরিমাণটা এতোটাই বিশাল যে, সমুদ্রের সব স্বর্ণ তুলে যদি পৃথিবীর মানুষকে ভাগ করে দেওয়া যায়; তাহলে, প্রত্যেকেই প্রায় ৪ কেজি করে স্বর্ণের মালিক হয়ে যেত!
তবে, এর বেশিভাগটাই বিভিন্ন উপাদানের সাথে দ্রবীভূত অবস্থায় আছে। অদ্রবীভূত অবস্থায় যেগুলো আছে তার পরিমাণও নেহায়েত কম নয়।
তবে, সেগুলো খনন করে তোলা অত্যান্ত ব্যয় সাপেক্ষ। তাই স্বর্ণের প্রাচুর্য থাকলেও সেটা আপাতত মানুষের ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে না।
আরও পড়তে পারেনঃ কম্পিউটার নিয়ে বিস্ময়কর অথচ সত্য ১৫টি তথ্য!
সমুদ্রের বরফ কিন্তু পান করা যায়
অতিরিক্ত লবণ থাকায় সমুদ্রের পানি পান করা যায় না। তবে, বহুবছরের জমানো সমুদ্রের বরফ পান করা যায়। মাল্টিইয়ার আইস নামের এই বরফগুলোর মাঝে অনেক কম পরিমাণ ব্রাইন এবং অনেক বেশি পরিমাণ এয়ার পকেট থাকে।
যার ফলে, পুরনো হলেও এদের ভেতরে পানি বেশ তাজা অবস্থায় থাকে। এগুলো বরফকে গলিয়ে তা পান করা যায়। মেরু অভিযানে পানির চাহিদা পূরণের জন্য অভিযাত্রীরা এই বরফগুলোকে ব্যবহার করে থাকে।
সমুদ্রে রয়েছে পৃথিবী সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সক্রিয় আগ্নেয়গিরি
ভূ-পৃষ্ঠের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কী ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, তা অনেকেই হয়ত জানেন। আগ্নেয়গিরির লাভার নিচে পুরো শহর নিশ্চিহ্ন হওয়ার মতো ঘটনাও আমরা দেখতে পাই ইতিহাসে।
জানলে অবাক হতে পারেন, সক্রিয় আগ্নেয়গিরির বেশিরভাগেরই অবস্থান সমুদ্রে। নাসার একটি তথ্যসুত্র অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ সক্রিয় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটে সমুদ্রে।
সুনামির গতিবেগ ঘন্টায় ১০০০ কিলোমিটার
ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির উগগীরণ, ভূমিধ্বসের প্রভাবে সৃষ্ট সমুদ্রের প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাসকে সুনামী হিসেবে অবহিত করা হয়। এসময় ঢেউ এর উচ্চতা ৬৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং এর থেকেও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, গভীর পানিতে সুনামীর গতিবেগ ঘন্টায় ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে!
যুক্তরাষ্ট্র তাদের হাইড্রোজেন বোমা হারিয়ে ফেলেছিলো সমুদ্রে
প্রতিবছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা নানা কারণে বিভিন্ন জাহাজ সমুদ্রে তাদের কন্টেইনার বা মালামাল হারিয়ে থাকে। তবে, ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্রে হারিয়েছিলো তাদের একটি হাইড্রোজেন বোমা! হিস্টোরি ডট কমের তথ্য অনুসারে, পরবর্তীতে স্প্যানিশ এক জেলের বোমাটি খুঁজে পান!
সমুদ্রে নিচে আছে প্রায় ৩০ লক্ষ জাহাজের ধ্বংসাবশেষ
টাইটেনিক থেকে কলম্বাসের সান্তা মারিয়া; এরকম প্রচুর জাহাজের অন্তিম শয্য হয়েছে সমুদ্রের তলদেশে! ইউনেসকোর একটি আর্টিকেল থেকে জানা যায়, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ লক্ষ জাহাজ সমুদ্রের পানিতে ডুবে ভাবলীলা সাঙ্গ করেছে।
দুইমেরুর সব বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ২৬২ ফুট
পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে গলে যাচ্ছে মেরু অঞ্চলের বরফ। যা নিম্নভূমি অঞ্ছলের জন্য শুধুমাত্র ভয়াবহ অশনী সংকেতই নয়, বরং সারা পৃথিবীর জন্যই এক ভয়াবহ বার্তা।
নাসার জেট প্রোপালেশন গবেষণাগারের এক তথ্য অনুসারে, পৃথিবীর মেরুতে থাকা সব বরফ যদি গলে যায় তাহলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ২৬২ ফুট। যা প্রায় ২৬ তলা একটি ভবনের সমান।
আরও পড়তে পারেনঃ ফেসবুক সম্পর্কিত ১০টি চমকপ্রদ তথ্য, যা হয়তো আপনার অজানা
ফলশ্রুতিতে সমুদ্র গর্ভে হারিয়ে যাবে পৃথিবীর বেশিরভাগ এলাকা। এই মহাদুর্যোগ রোধে তাই এখন থেকেই আমাদের সবার সচেতন হওয়া উচিত। যেন করে পরিবেশ দুষণ কমিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা নিরাপদ অবস্থায় রাখা যায়।
অক্সিজেনের আধার হচ্ছে সমুদ্র
গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয় একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু, অক্সিজেনের সবচেয়ে বড় উৎস যে সমুদ্র এটা আপনি জানতেন? সমুদ্রের বিভিন্ন উদ্ভিদ, বিশেষ করে ফাইটপ্লাঙ্কটন, কেলপ, অ্যালগাল প্লাঙ্কটন ইত্যাদি বায়ু মন্ডলের বেশিভার অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এর একটি তথ্য অনুসারে, বায়ুমন্ডলে ৭০ ভাগ অক্সিজেনের জোগান আসে সমুদ্র থেকে। আর সেই সমুদ্রকে আমরা দিনদিন প্লাস্টিকের মতো বিপদজনক আবর্জনা দিয়ে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত করে তুলছি। পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে সমুদ্রকে দুষণমুক্ত রাখাটা অত্যান্ত জরুরী।
সমুদ্র সম্পর্কিত ১০টি ফ্যাক্ট নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের আলোচনা। কেমন লাগলো আপনার কাছে? লেখাটি ভালো লাগলে ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে নিতে পারেন। ভবিষ্যতে কেমন লেখা কেন্দ্রবাংলাইয় পড়োতে চান তা কমেন্টে লিখে জানাতে পারেন।
Pingback: যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে যে কারণে আঙ্কেল স্যাম ডাকা হয় - কেন্দ্রবাংলা