পছন্দ করুন বা ঘৃণা করুন, বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনে ফেসবুক এর উপস্থিতি অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। মাত্র ১৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। মুনাফা আয় কিংবা ব্যবহারকারী উভয় দিক থেকেই এটি এখনকার সময়ের শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

আমাদের দেশে বর্তমানে ফেসবুক সাধারণের মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে বলা যায়। ইন্টারনেট কি জিনিস তা না বুঝলেও ফেসবুক বর্তমানে সবাই বোঝে। যা সত্যিকার অর্থেই দুশ্চিন্তার বিষয়। তবে, আজকের আলোচনা ফেসবুক ভালো না মন্দ সেটা নিয়ে নয়। সে তর্ক না হয় আরেকদিনের জন্য তোলা থাক।

আজকে এই লেখার মাঝে আমরা Facebook সম্পর্কে কিছু অজানা কিন্তু চমকপ্রদ তথ্য জানার চেষ্টা করবো। যে তথ্যগুলো আপনাকে সত্যিকার অর্থেই বিস্মিত করবে। আপনি Facebook ব্যবহারকারী হন বা না হন তাতে কোন সমস্যা নেই।

ফেসবুক সম্পর্কিত ১০টি চমকপ্রদ তথ্য

ফেসবুক সম্পর্কিত ১০টি চমকপ্রদ তথ্য

চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই Facebook সম্পর্কিত ১০ টি চমকপ্রদ তথ্য।

০১. Facebook নয় Facemash নামক ওয়েবসাইট তৈরির আইডিয়া ছিলো প্রথমে জাকারবার্গের।

হাভার্ডে পড়াকালীন সময় মার্ক জাকারবার্গ এমন একটি সাইট তৈরীর চিন্তা করেন, যেখানে ব্যবহারকারীরা অন্যদের চেহারা মাঝে তুলনা করতে পারবে। এবং কে সবচেয়ে বেশি আবেদনময়/আবেদনময়ী তা বের করতে পারবে। স্বাভাবিকভাবে আইডিয়াটি হার্ভার্ড প্রশাসনের পছন্দ হয়নি। এবং পরবর্তীতে জাকারবার্গের ফেসম্যাশ তৈরির প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যায়। সাথে সাথে জাকারবার্গকে বহিস্কারের ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়।

০২. মার্ক জাকারবার্গের দ্বিতীয় আইডিয়াটি ছিলো অনলাইন স্টুডেন্ট ডিরেক্টোরি তৈরী করা।

তিনি এই ডিরেক্টরির নাম দেন, “দ্যফেসবুক”। যেখানে ব্যবহারকারীরা-

  • হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অন্যান্য শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করতে পারবে।
  • কোন শিক্ষক কোন ক্লাস নিচ্ছেন তা জানতে পারবে।
  • অন্য একজন ব্যবহারকারীর বন্ধু সম্পর্কে জানতে পারবে।
  • এটি সামাজিক যোগাযোগ ম্যাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।

এমন চিন্তাধারা এবং শুধুমাত্র হার্ভাড-এ পড়া শিক্ষার্থীদের একটি অনলাইন ডিরেক্টরি হিসেবে এর যাত্রা শুরু হলেও; একপর্যায়ে তা ১৩ বছর বয়সের উপরে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যেটা আজকের Facebook নামে পরিচিত।

০৩. ফেসবুক তৈরী শুরুর দিকেই আইডিয়া চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হন জাকারবার্গ।

শুরুর দিকে Facebook যখন জনপ্রিয় হতে শুরু করে; ঠিক তখন হার্ভাড-এ পড়া তিন শিক্ষার্থী দিব্য নরেন্দ্র, ক্যামেরন উইংকল্ভস এবং টেইলর উইংকল্ভস অভিযোগ করেন যে, জাকারবার্গ তাদের আইডিয়া চুরি করে Facebook তৈরী করেছেন। অবশেষে দীর্ঘ ৪ বছর মামলা চলার পর জাকারবার্গ তাদের কাছে হেরে যান। এবং জরিমানা স্বরুপ তাদের তিনজনকে ৬৫ মিলিয়ন অর্থ পরিশোধ করেন। সাথে সাথে তাদের ফেসবুকের শেয়ারেও অন্তর্ভুক্ত করে নিয়ে একটি সমঝোতায় আসেন।

০৪. বর্তমানে ফেসবুক বিশ্বের তৃতীয় জনপ্রিয় ওয়েবসাইট।

প্রথম দুইটি অবস্থানে রয়েছে গুগল ও ইউটিউব। সারা পৃথিবীতে গুগল এবং ইউটিউব পরপরই সবচেয়ে বেশি মানুষ Facebook ব্যবহার করে থাকেন।

০৫. ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এখন পর্যন্ত ২৫০ বিলিয়নেরও বেশি ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছেন।

এর অর্থ এই আর্টিকেল লেখার সময় পর্যন্ত দিনে গড়ে ৩৫০ মিলিয়নের বেশি ছবি আপলোড হয়েছে।

০৬. নারীরা পুরুষদের চেয়ে ফেসবুক ব্যবহারে এগিয়ে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপ অনুসারে ৭৫% নারী Facebook ব্যবহার করে থাকেন। যেখানে পুরুষ ব্যবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ৬৩%।

পুরুষ এবং নারী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তুলনামূলক পরিসংখ্যান

০৭. গ্রাম পর্যায়ে ফেসবুক সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

ফেসবুক ব্যবহারকারী আমেরিকানদের প্রতি চারজনের তিনজন শহরে বসবাস করেন। তাই বলে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে গ্রাম অঞ্চলে ফেসবুক কম জনপ্রিয়। বরং উল্টোটা সত্যি। আমেরিকার গ্রাম অঞ্চলের ৬৬% প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন। যেখানে তাদের মধ্য ইউটিউব এবং পিন্টারেস্ট ব্যাবহারকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৬৪% এবং ২৬%।

০৮. বয়ষ্ক ব্যাক্তি তরুণ প্রজন্মের চেয়েও বেশি ফেসবুক ব্যবহারে আগ্রহী।

২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ৭১% আমেরিকান তরুণ তরুনী ফেসবুক ব্যবহার করতেন। যা বর্তমানে ৫১% এ নেমে এসেছে। অন্যদিকে ফেসবুকে বয়স্ক মানুষদের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। ২০১৯ সালের হিসেবে বর্তমানে প্রায় ৬০% বয়ষ্ক ব্যাক্তিরা এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার করছেন।

০৯. ৭১% মার্কিন নাগরিক ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন।

আপাতত দৃষ্টিতে ৭১% কে খুব বেশি মনে না হলেও; এক্ষেত্রে এটা অনেকবড় একটি সংখ্যা। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীর সাথে তুলনা করলে বিষয়টি বোঝা যায়। আমেরিকার মোট ৩৮% মানুষ ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করেন, টুইটার ব্যবহারকারী আরও কম; মাত্র ২৩% মানুষ।

১০. মোট ব্যবহারকারীর অনুপাতে আমেরিকানদের সংখ্যা ফেসবুকে সবচেয়ে কম।

এতোক্ষণ ফেসবুক সম্পর্কে আমেরিকানদের যে পরিসংখ্যান দেখলেন তা পৃথিবীর অন্য যেকোন দেশের ব্যবহারকারী অনুপাতে সবচেয়ে কম। ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বড় একটা আমেরিকা এবং কানাডার বাইরে বসবাস করেন।

daily active user of facebook

ফেসবুক নিয়ে এই ছিলো আজকের ১০টি চমকপ্রদ তথ্য। সার্চ ইঞ্জিন জার্নাল নামক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। এর সত্য মিথ্যা কিংবা গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের ভার পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি আমরা। তবে আগামীতে এরকম আরও চমকপ্রদ তথ্য নিয়ে লেখা প্রকাশিত হবে কেন্দ্রবাংলায়, ইনশাআল্লাহ্‌।

তথ্যগুলো আপনার কাছে কেমন লাগলো? এসম্পর্কে আপনার মতামত কী? ফেসবুক সম্পর্কে আপনার জানা আর কোন চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে কী? থাকলে জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট কমেন্টবক্সে। কেন্দ্রবাংলায় ভবিষ্যতে কী ধরণের লেখা দেখতে চান তাও আমাদের জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনার চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত মানসম্মত লেখা তুলে ধরতে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved