প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পৃথিবীর সম্পূর্ণ জলভাগকে ভাগ করা হয়ে ৫টি ভাগে। আমরা যেগুলোকে মহাসাগর বলি। আর স্থলভাগকে ভাগ করা হয়েছে ৭ ভাগে। এগুলো মহাদেশ। প্রতিটি মহাদেশই নিজস্ব অবাক করা ভৌগলিক ফ্যাক্ট সমৃদ্ধ। কোনটাতে মানুষের বসবাস বেশি আবার কোনটা জনমানব শূন্য। কোথাও তীব্র শীত আবার কোথাও দাবদাহ চলছে বছরের একই সময়ে।

সব মহাদেশে মাটি আবহাওয়া যেমন একই রকম নয়, তেমনি সব মহাদেশের জীব বাস্তুসংস্থানেও আছে ভিন্নতা। এই ভিন্নতাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য্য। আজকের এই লেখায় আমরা এই সাতটি মহাদেশের কিছু অবাক করা ভৌগলিক ফ্যাক্ট বা তথ্য জানবো সংক্ষেপে।

মহাদেশগুলোর অবাক করা ভৌগলিক ফ্যাক্ট

মহাদেশের অবাক করা ভৌগলিক ফ্যাক্ট

পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষে বাস যে মহাদেশে

পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ হচ্ছে এশিয়া। পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগের ৩০ ভাগ নিয়ে এই মহাদেশ। আর এখানে বাস করে ৪৩০ কোটিরও বেশি মানুষ। যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ ভাগ।

তবে, সবসময় কিন্তু এতো বেশি জনসংখ্যা ছিলো না এই মহাদেশে। বলা হয়ে থাকে, গতো বিংশ শতাব্দিতেই এশিয়া মহাদেশের জনসংখ্যা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ শিক্ষা, সচেতনতা, জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন।

এশিয়া মহাদেশ সম্পর্কিত আরও একটি মজার তথ্য হচ্ছে, এই মহাদেশের বাসিন্দাদের প্রধান এবং প্রিয় খাবার ভাত বা চাল থেকে প্রস্তুতকৃত খাবার। প্রতিবছর পৃথিবীর উৎপাদিত মোট চালের ৯০% শতাংশ এশিয়া মহাদেশে খাওয়া হয়ে থাকে।

সবচেয়ে ছোট মহাদেশ

আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে ছোট মহাদেশটি হচ্ছে ওশেনিয়া। ছোটবড় ১৪টি রাষ্ট্র রয়েছে এই মহাদেশে। এই মহাদেশের সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রায় সাড়ে তিনকোটি মানুষ বাস করেন এখানে। এবং এই জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশই অস্ট্রেলিয়ান বা অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসী।

৯০ শতাংশ মিঠা পানির মজুদ রয়েছে যে মহাদেশে

পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম মহাদেশ এন্টার্টিকা। দক্ষিণমেরুতে অবস্থিত এই মহাদেশে গড় তাপমাত্রা -৬৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। সম্পূর্ণ বরফ আচ্ছাদিত হওয়ায় এখানে জীবন ধারণ করা খুবই কষ্টসাধ্য। এই মহাদেশে যেহেতু জনবসতি প্রায় নেই বললেই চলে। তাই এখানে নেই কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থা। তাই ১৯৫৯ সালে ১২টি দেশের মধ্য এন্টার্টিকা চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে এই মহাদেশে সকল সামরিক কর্মকান্ড এবং খনিজ সম্পদ আরোহণ নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে ৩৮ট দেশ বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য এন্টার্টিকার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করছে।

এন্টার্টিকার আবহাওয়া বেশিরভাগ প্রাণির জন্য প্রতিকূল হলেও এখানে পেঙ্গুইন সহ বিভিন্ন বসবাস করে আসছে বহুকাল থেকে। এন্টার্টিকা মহাদেশের বরফের নিচে রয়েছে ছোটবড় প্রায় ৩০০টির মতো হৃদ। পৃথিবীর মিঠাপানির ৯০ শতাংশ বরফ কিংবা তরল পানির অবস্থায় জমা আছে এই মহাদেশে।

এন্টার্টিকা মহাদেশ

যে মহাদেশে নেই পিঁপড়ার রাজত্ব

এন্টার্টিকা মহাদেশ সম্পর্কে আরও একটি অবাক করা তথ্য হচ্ছে, এই মহাদেশে নেই পিঁপড়ার বসবাস। ক্ষুদ্র এই প্রানির দেখা মেলে পৃথিবীর সকল অঞ্চলে শুধুমাত্র এন্টার্টিকা বাদে। প্রতিকূল আবহাও্য়া এবং খাদ্যের অভাব মূলত এজন্য দায়ী।

চকোলেটের মহাদেশ আফ্রিকা

চকোলেট ছোটবড় সকলেরই পছন্দের খাবার। মজাদার এই খাবারটি তৈরী হত মূলত থিওব্রোমা ক্যাকাও বা ক্যাকাও গাছের ফল থেকে। ক্যাকাও গাছ ক্রান্তীয় জীবাঞ্চলের উদ্ভিদ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আফ্রিকা মহাদেশে এই গাছ সবচেয়ে পরিমাণে হয়ে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ চকোলেট উৎপাদিত হয় এখানে

এছাড়া খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে এই মহাদেশে। সোনা, রূপা কিংবা হীরার পাশাপাশি ইউরেনিয়ামের মতো মূল্যবান খনিজও পাওয়া যায় আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে।

আরও পড়তে পারেনঃ ইউটিউব সম্পর্কিত ১০টি অবাক করা তথ্য, আপনি জানেন কি?

দক্ষিণ আমেরিকার জীববৈচিত্র্য

জীববৈচিত্র্য ভরপুর উত্তর আমেরিকা মহাদেশ। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাণি এবং উদ্ভিদের সকল প্রজাতির মধ্য প্রায় ৪০ শতাংশের দেখা মিলেছে এই মহাদেশে। এর আয়তন কিন্তু খুব বেশি নয়। পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ১২ শতাংশ মাত্র।

এই মহাদেশের বুক চিরে বয়ে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে পানি ধারণক্ষমতার দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নদী অ্যামাজন। মিঠা পানির নানা জীব প্রজাতির আবাসস্থল এই নদী।

জিব্রাল্টার প্রণালী পৃথক করেছে যে দুইটি মহাদেশকে

জিব্রাল্টার প্রণালী হচ্ছে আল্টান্টিক এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যকার একটি সরু সমুদ্র অঞ্চল। এর প্রশস্থতা মাত্র ১৪.৩ কিলোমিটার। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই প্রণালি আল্টান্টিক এবং ভূমধ্যসাগরের মতো দুইটি মহাসাগরকে যেমন সংযুক্ত করেছে তেমনি পৃথক করেছে আফ্রিকা এবং ইউরোপ মহাদেশকে।

জিব্রাল্টার প্রণালী

মশা নেই যেখানে

পৃথিবী জুড়েই মশার রাজত্ব। তবে, এই যন্ত্রণা থেকে শান্তিতে আছেন আইসল্যান্ডের প্রায় সাড়ে তিল লাখ মানুষ। পযার্প্ত জলাভূমি আর উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় ইউরোপের এই দেশে নেই মশার কোন আনাগোনা। আইসল্যান্ড ছাড়া এন্টার্টকাতেও অবশ্য মধার উপদ্রব নেই।

হ্রদের দেশ সুইজারল্যান্ড

৭০০০ এরও বেশি প্রাকৃতিক লেক বা হৃদ রয়েছে ইউরোপের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দেশ সুইজারল্যান্ডে। অনেকের মতে, সুইজারল্যান্ডে আপনি কখনোই হৃদ থেকে ১০ মাইলের বেশি দূরে থাকতে পারবেন না। অন্যকোন একটা হৃদের কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন।

আরও পড়তে পারেনঃ কম্পিউটার নিয়ে বিস্ময়কর অথচ সত্য ১৫টি তথ্য!

মাউনা কেয়া এবং প্রধান জীবাঞ্চলের মহাদেশ

আপনাকে যদি বলি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি মাউনা কেয়া উত্তর আমেরিকাতে অবস্থিত তাহলে হয়ত মেনে নিবেন। কিন্তু যদি বলি, এই আগ্নেয়গিরি মাউন্ট এভারেস্টের চেয়েও প্রায় ৩,০০০ ফুট উঁচু, তাহলে কী বিশ্বাস করবেন? অবিশ্বাস্য শোনালেও তথ্যটি আসলে সত্য।

তবে, মাউনা কেয়া নামের এই আগ্নেয়গিরিটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৪,২০৭ ফুট উঁচু। যেখানে এভারেস্ট সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৯,০০০ ফুট উঁচু! মাউনা কেয়ার বাকি অংশ সমুদ্রের পানিতে নিমজ্জিত। একারণে ভূপৃষ্ঠ থেকে এটা খুব বেশি উঁচু মনে হয় না।

মাউনা কেয়া আগ্নেয়গিরি

উত্তর আমেরিকা মহাদেশ সম্পর্কিত আরও একটি অবাক করা ফ্যাক্ট হচ্ছে, এই মহাদেশে প্রধান সব জীব অঞ্চল বা বায়োমের সমন্বয় ঘটেছে। যার মধ্য আছে, তুন্দ্রা, তৃণভূমি, গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইন ফরেস্ট এবং মরুভূমি।

৭টি মহাদেশেরর ১০টি অবাক করা ভৌগলিক ফ্যাক্ট নিয়ে এই ছিলো আমাদের আয়োজন। সবকিছু তথ্যের সাথে আমরা তথ্যসূত্র যোগ করে দিয়েছি। যেন করে বিভ্রান্তিতে না পড়েন। তবে, এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরী এখানকার বেশিরভাগ তথ্যই পরিবর্তনশীল। কোন তথ্যর পরিবর্তন আপনার জানা থাকলে কমেন্টে আমাদেরকে জানিয়ে দিতে পারেন। আমরা তা দ্রুত সংশোধন করে দিবো ইনশাআল্লাহ্‌।


Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved