গ্রাফিক্স ডিজাইনের জগতে অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটর প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটি সফটওয়্যার। আপনি যদি একজন প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হন, তাহলে শুধুমাত্র অ্যাডোবির সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারের জন্যই হয়ত উইন্ডোজ বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম ছেড়ে যেতে চাইবেন না। আর তাই একজন উইন্ডোজ বা ম্যাক ওএস ব্যাবহারকারীর জন্য অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটরের বিকল্প কোন সফটওয়্যার খোজার প্রয়োজন নেই।

কিন্তু আপনি যদি লিনাক্স ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটের বিকল্প সফটওয়্যার আপনাকে খুঁজতে হতে পারে। কারণ লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অ্যাডোবি তাদের কোন সফটওয়্যার তৈরী করে না। যদিও ওয়াইন বা কোন ভার্চুয়াল বক্স এর মাধ্যমে উইন্ডোজের যে কোন সফটওয়্যার লিনাক্সে ব্যবহার করা যায়।

আরও পড়তে পারেনঃ লিনাক্স কেন অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম থেকে এগিয়ে?

কিন্তু সেক্ষেত্রে আসল সফটওয়্যার ব্যবহারের মজা বেশিরভাগ সময় পাওয়া যায় না বলে অনেকেই তা করতে চান না। তবে, লিনাক্সে অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটর ব্যবহার করা না গেলেও অনেক চমৎকার কিছু গ্রাফিক্স ডিজাইনের সফটওয়্যার রয়েছে। যা দিয়ে চাইলেই সাধারণ ডিজাইনের কাজ থেকে শুরু করে প্রফেশনাল কাজও করা সম্ভব।

আজকে আমরা এরকম চারটি সফটওয়্যার নিয়ে কথা বলবো। যেগুলো অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটরের মতো এতোটা পাওয়ারফুল না হলেও; ডিজাইনের কাজে আপনি চাইলে অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটরের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটরের বিকল্প সফটওয়্যার

লিনাক্সের জন্য ৪টি অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটরের বিকল্প সফটওয়্যার

অ্যাডবি ইলেস্ট্রেটরের বিকল্প – ইঙ্কস্কেপ (Inkscape)

আমাদের তালিকার শুরুতে যে সফটওয়্যারটি আছে, সেটি ইঙ্কস্কেপ। গ্রাফিক্স ডিজাইনের জন্য বেশ জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার এটি। ওপেন-সোর্স এই সফটওয়্যারটি আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন যে কোন লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে।

যারা অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটর ব্যবহারে অভ্যাস্ত তাদের কাছে এর ইউজার ইন্টারফেসটি কিছুটা অপরিচিত মনে হবে। তবে, তা জটিল নয়; কয়েকদিন ব্যবহার করলে বেশ হ্যান্ডি মনে হবে। ব্যবহারকারীরা এতে হাতে আঁকা সহ, শেপ কিংবা পেন টুলের মতো ফিচার ব্যবহার করে সাধারণ থেকে শুরু করে জটিল ডিজাইন তৈরী করতে পারবেন এতে।

অ্যাডোবি ইলেস্ট্ররের বিকল্প সফটওয়্যার হিসেবে এটি SVG, PNG, DXF, PDF, ESP সহ আরও বেশ কয়েকটি ফাইল ফরম্যাট সাপোর্ট করে এবং এক্সপোর্ট করতে পারে। আছে মুভিং, স্কেলিং, রোটাটিং স্কিউয়িং মতো চমৎকার সব ফিচার।

ইঙ্কস্কেপ

অ্যাডবি ইলেস্ট্রেটরের বিকল্প – কার্বন (Karbon)

ক্যালিগ্রা অফিস সুইটের একটি সফটওয়্যার হচ্ছে কার্বন। যার সাহায্য খুব সহজেই ইলেস্ট্রেশনের কাজগুলো করা যায়। ইউজার ইন্টারফেস অনেকটাই অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটরের মতো।

শেপ যুক্ত করা, স্কেলিং, কমপ্লেক্স লেয়ারিং সিস্টেম সহ অন্যান্য বেশ কিছু দরকারী ড্রয়িং ফিচার রয়েছে এতে। যেগুলো ব্যবহার করে চমৎকার সব ডিজাইন তৈরী করা সম্ভব নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য কার্বন ইলেস্ট্রেটর সফটওয়্যারটি উপযুক্ত।

আরও পড়তে পারেনঃ সবচেয়ে জনপ্রিয় ৬টি লিনাক্স ডিস্ট্রো – ২০২০

এর ইউজার ইন্টারফেস চাইলে পছন্দমতো সাজিয়ে নিতে পারবেন। ODG, SVG, WPG,WMF, EPS/PS এর মতো ফাইলগুলো এডিট কিংবা তৈরি করতে পারবেন এতে। এছাড়া কার্বনের একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হচ্ছে, এর নানা ধরণের প্লাগইন রয়েছে। বাড়তি ফিচার পেতে চাইলে এসব প্লাগইন ইন্সটল করে নিতে পারেন।

কার্বন (স্ক্রিনশট)

ক্রিটা (Krita)

ব্যাক্তিগত আমার অনেক পছন্দের একটি ইলেস্ট্রেশন সফটওয়্যার এটি। খুবই চমৎকার দৃষ্টি নন্দন ইউজার ইন্টারফেস দেখতে যেমন ভালো লাগে তেমনি কাজের গতিও বাড়িয়ে দেয়। আপনি চাইলে ক্রিটার ইউজার ইন্টারফেস পছন্দমতো পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।

“ক্রিয়েটিভিটির কোন সীমা নেই” এটি হচ্ছে সফটওয়্যারটির মূলমন্ত্র। ইলেস্ট্রেটরের প্রায় সব ধরণের কাজই এতে করা যায়। আছে ডার্ক এবং লাইট থিম। দৃষ্টি নন্দন ব্রাশ, ব্রাশ স্টাবিলাইজার, টেক্সট স্টাইলিং, লেয়ার ম্যানেজমেন্ট, কালার ম্যানেজমেন্ট, এইচডিআর পেইন্টিং সহ একগাদা প্রয়োজনীয় ফিচার রয়েছে এতে।

শুধু ভেক্টর ফাইল ফরম্যাটগুলো নয়, ফটোশপের জনপ্রিয় ফাইল ফরম্যাট PSD ও এডিট করতে পারবেন এতে। এছাড়া আরও একটি দারুণ বিষয় হচ্ছে, এনিমেশনের কাজও করা যায় ক্রিটাতে!

আর অন্যান্য বেশিরভাগ লিনাক্স সফটওয়্যারের মতো এটিও সম্পূর্ণ ফ্রী একটি সফটওয়্যার। যার অর্থ এটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে একটা পয়সাও গুনতে হবে না। তাহলে আর দেরী কেন? এখনই ক্রিটা ইন্সটল করে ফেলুন আপনার লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে!

ক্রিটা

ভেক্টর পেইন্ট (Vector Paint)

এটি মূলত একটি ক্লাউড ভিত্তিক সফটওয়্যার। অর্থাৎ ভেক্টর পেইন্ট ব্যবহার করতে হলে আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে ব্যবহার করতে হবে। অফলাইনে সফটওয়্যারটি ইন্সটলের কোন সুযোগ নেই।

আরও পড়তে পারেনঃ লিনাক্স কী? কার্নেল নাকি অপারেটিং সিস্টেম?

ভেক্টর পেইন্ট তাদের ইউজার ইন্টারফেসটি সাদামাটা কিন্তু শক্তিশালী বলে দাবী করে থাকে। ব্যাক্তিগতভাবে এর ইন্টারফেস আমার কাছে মাইক্রোসফটের পেইন্ট থ্রিডির মতো লেগেছে। তবে একথা শুনে আবার বিভ্রান্ত হবেন না। ছোটখাটো প্রায় সবধরণের ইলেস্ট্রেশনের কাজ এর মাধ্যমে করা সম্ভব।

যে কোন ব্রাউজার দিয়ে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারবেন। টেক্সট স্টাইলিং, লেয়ার, SVG ফাইল সেভ করা সহ দারুণ কিছু ফিচার আছে এতে। খুব বেশি জটিল ডিজাইন না করলে অনায়াসে এটাকে অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটরের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

ভেক্টর পেইন্ট (স্ক্রিনশট)

আপনি যদি লিনাক্স ব্যবহারে ইচ্ছুক হন অথবা ইতিমধ্য একজন লিনাক্স ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে অ্যাডোবি ইলেস্ট্রেটরের বিকল্প এই সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করে দেখতে পারেন। শুরুতে একটু অসুবিধা হলেও যখন আপনি এগুলোর ব্যবহার পুরোপুরো বুঝে যাবেন তখন এগুলো দিয়ে সাধারণ ডিজাইনের কাজের পাশাপাশি প্রফেশনাল কাজও করতে পারবেন আশাকরি।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved