আপনি যদি গুগলে গিয়ে What is Linux বা লিনাক্স কী লিখে সার্চ করেন; তাহলে যে তথ্যটি পাবেন তা হল, লিনাক্স একটি অপারেটিং সিস্টেম। এমনকি উইকিপিডিয়া এবং লিনাক্সের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও লিনাক্সকে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তাহলে, লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম নাকি কার্নেল এই প্রশ্ন কেন আসবে? আসলে এই প্রশ্ন আসবে না যদি আপনি একজন প্রযুক্তিপ্রিয় মানুষ না হন, কিংবা লিনাক্সের একজন ব্যবহারকারী না হন। কম্পিউটারের সাধারণ একজন ব্যাবহারকারীর কাছে লিনাক্সকে একবাক্য সংজ্ঞায়িত করার জন্য এর চেয়ে ভালো কোন উত্তর হয় না। তাই লিনাক্সকে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।

আদতে লিনাক্স নামে কোন অপারেটিং সিস্টেম নেই। সত্যিকার অর্থে লিনাক্স হচ্ছে একটি কার্নেল। যেটি সম্পূর্ণ ফ্রি এবং উন্মুক্ত একটি প্রোগ্রাম। এই কার্নেল ব্যবহার করে যেকেউ চাইলে কম্পিউটার বা যেকোন ডিজিটাল ডিভাইসের জন্য একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে ফেলতে পারবে। এর জন্য একটা পয়সাও খরচ করতে হবে না। যেখানে উইন্ডোজ বা ম্যাকওএস এর মতো অপারেটিং সিস্টেমগুলো ব্যবহার করার জন্যই আপনাকে বিশাল পরিমাণ একটা অর্থ ব্যয় করতে হয়।

লিনাক্স কী? কার্নেল নাকি অপারেটিং সিস্টেম?

প্রযুক্তির দুনিয়ায় লিনাক্স আসলে একটি বিপ্লবের নাম। বর্তমানে পৃথিবীর ৫০০ টিরও বেশি সুপার কম্পিউটার লিনাক্স দ্বারা পরিচালিত হোয়। সবচেয়ে বেশি সার্ভার কম্পিউটার, স্মার্টকার, স্মার্ট টিভি, স্মার্টওয়াচ, বিভিন্ন আইওটি ডিভাইস, স্মার্টফোনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম আন্ড্রয়েড সবকিছুই প্রায় লিনাক্সের দখলে। এমনকি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেও শতভাগ লিনাক্সের ব্যবহার শুরু হচ্ছে।

তাই, আপনার মনে প্রশ্ন এসে থাকে কী এই লিনাক্স? তাহলে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। যদি শুধু মাত্র লিনাক্সের নাম শুনে থাকেন কিংবা লিনাক্সের একজন ব্যবহারকারী হিসেবে এসম্পর্কে কিছু জানতে চান, তাহলে আশাকরি আপনার জানার তৃষ্ণা সামান্য হলেও মিটবে এই লেখাটি শেসে। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে, মূল আলোচনায় প্রবেশ করি।

লিনাক্স কী?

উপরেই বলেছি লিনাক্স মূলত একটি কার্নেল; অপারেটিং সিস্টেম নয়। লিনাক্স যেহেতু একটি মুক্ত এবং ফ্রি একটি কার্নেল, তাই যে কেউই এটা ব্যবহার করে প্রয়োজনমত একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে ফেলতে পারে। তাই লিনাক্স ভিত্তিক অসংখ্য অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। যেহেতু এ সব অপারেটিং সিস্টেমের কার্নেল লিনাক্স, তাই সবগুলোকে সাধারণভাবে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বলা হয়। এবং এককভাবে কোন লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমকে ডিস্ট্রিবিউশন বা ডিস্ট্রো নামে ডাকা হয়ে থাকে।

১৯৯১ সালে লিনুস তোরভাল্দ্‌স এটি তৈরি ও প্রকাশ করেন। এবং প্রকাশের পরপরই তিনি এটি মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। লিনাক্সের ইতিহাস এবং জন্মকাহিনী নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন

কার্নেল কী?

আপনি যদি কার্নেল কী তা জেনে থাকেন, তাহলে এতক্ষণ এতবার কার্নেল শব্দটি দেখে নিশ্চয়ই এর পরিচয় জানতে ইচ্ছে করছে। কার্নেল ভালো করে বোঝার জন্য অপারেটিং সিস্টেম কী? অপারেটিং সিস্টেমের কাজ জানা থাকলে উপকার হবে। অপারেটিং সিস্টেমকে যেমন একটি ডিজিটাল ডিভাইসের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তেমনি কার্নেলকে অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণভোমরা বলা যেতে পারে। কোন অপারেটিং অপারেটিং সিস্টেমের মূল কাঠামো এটি।

কার্নেল কী?

অপারেটিং সিস্টেম যেমন ব্যবহারকারী এবং হার্ডওয়্যারের মধ্য সংযোগ সড়ক হিসেবে কাজ করে, তেমনি সফটওয়্যারের এর সাথে হার্ডওয়্যারের সংযোগ করিয়ে দেয় কার্নেল। কার্নেল হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেমের মূল চাবিকাঠি। প্রসেসর কীভাবে সিগন্যাল পাবে, র‍্যাম কীভাবে কাজ করবে, ফাইল সিস্টেম কেমন হবে, এসব কিছুই বলা থাকে কার্নেলে। কার্নেলর উপরে বিভিন্ন সফটওয়্যার, ড্রাইভার, এবং ইউজার ইন্টারফেস বসিয়ে তৈরি হয় একটি অপারেটিং সিস্টেম।

সাধারণ একজন ব্যবহারকারীর কাছে কার্নেলের কোন অর্থ নেই। সাধারণ ব্যবহারকারী শুধুমাত্র অপারেটিং সিস্টেম নিয়েই কাজ করে। কিন্তু একজন অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপারের কাছে কার্নেলের গুরুত্ব অপরিসীম। কার্নেল ছাড়া অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপ করা সম্ভব নয়।

উইন্ডোজ, ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম এবং লিনাক্সঃ

যেহেতু সাধারণ একজন ব্যবহারকারীর কাছে কার্নেলের কোন অর্থ নেই। অপারেটিং সিস্টেমকেই আমরা চিনে থাকি শুধু। আর তাই একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী হিসেবে অপারেটিং সিস্টেমের কথা উঠলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে উইন্ডোজ কিংবা ম্যাকওএস এর নাম।

উইন্ডোজ বা ম্যাকওএস হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম। যেহেতু এগুলো এক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন। তাই আমাদের যতোটুকু জানা প্রয়োজন ততটুকু অর্থাৎ শুধু অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কেই আমরা জানি।

কিন্তু এসব যেহেতু অপারেটিং সিস্টেম, তাই এদেরও রয়েছে কার্নেল। মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ এর জন্য ব্যবহার করে এনটি কার্নেল, এবং অ্যাপল তাদের ম্যাকওএস ব্যবহার করে থাকে ডারউইন কার্নেল। নামটুকু ছাড়া এসব কার্নেল কীভাবে কাজ করে সেটা জানার সুযোগ নেই ব্যবহারকারীর। এমন কি বিলিয়ন ডলার খরচ করলেও মাইক্রোসফট বা অ্যাপল তাদের কার্নেলের কোড কারো হাতে তুলে দেবে না।

অন্যদিকে লিনাক্স মূলত একটি কার্নেল। যেহেতু এটা উন্মুক্ত এবং ফ্রি একটি কার্নেল, তাই যে কেউ এটা সম্পর্কে জানতে পারে, বুঝতে পারে, দেখতে পারে এবং প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে পারে। লিনাক্স কার্নেল ব্যবহার করে আপনিও চাইলে একটি অপারেটিং সিস্টেম নিজের পছন্দমতো তৈরি করে ফেলতে পারবেন। একারণে লিনাক্স ভিত্তিক শত শত অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। এই শত শত অপারেটিং সিস্টেমকে সাধারণভাবে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম এবং একক ভাবে ডিস্ট্রো হিসেবে ডাকা হয়ে থাকে। এছাড়া লিনাক্স ভিত্তিক এসব অপারেটিং সিস্টেমগুলো নিজস্ব নামেও সমাদৃত হয়। যেমন, উবুন্টু, ফেডোরা, লিনাক্স মিন্ট, এলেমেন্টর, অ্যান্ড্রয়েড ইত্যাদি।

আশাকরি লিনাক্স কী তা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন। লিনাক্স কার্নেল না অপারেটিং সিস্টেম তা এখন আপনি জানেন। এই লেখায় বোঝার সুবিধার্থে কার্নেল কী সেটা নিয়েও একটু বলার চেষ্টা করেছি। কোথায় বুঝতে অসুবিধা হলে কিংবা কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে নির্দ্বিয়ায় কমেনতে আমাদের তা জানাবেন। খুব তাড়াতাড়িই লিনাক্স নিয়ে আরও বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমাদের ওয়েবসাইটে। তাই লিনাক্সের দুনিয়ার জানা অজানা চমৎকার সব লেখা পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved