লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম প্রায় সবগুলোই ফ্রি এবং ওপেন সোর্স। যেখানে উইন্ডোজ ১০ বা ম্যাকওএস ব্যবহার করতে চাইলে গুনতে হয় অনেকগুলো টাকা, সেখানে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া নিরাপত্তা, স্টাবিলিটি সহ লিনাক্সের এমনকিছু সুবিধা রয়েছে যা প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেমগুলো পাওয়া যায় না।

লিনাক্স ভালো না উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ভালো এই তর্ক আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অর্থহীন। প্রত্যেকটা অপারেটিং সিস্টেমেরই কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা সহ মৌলিক কিছু বিষয় বিবেচনায় লিনাক্সকে এগিয়ে রাখা যেতেই পারে। লিনাক্স কেন অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম থেকে এগিয়ে? তার ৫টি অন্যতম কারণ এখান থেকে জেনে আসতে পারেন।

এ সবকিছু সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষ লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে চায় না। কিংবা লিনাক্স সম্পর্কে বেশি কিছু জানে না। কেন মানুষ লিনাক্স ব্যবহার করে না? লিনাক্স ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা কোথায় সেসব কিছু জানার চেষ্টা করবো আজকের লেখায়।

যে কারণে বেশিরভাগ মানুষ লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন না

ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, যথেষ্ঠ প্রচারণার অভাব; এবং লিনাক্স সম্পর্কে মানুষের কিছু ভুল ধারণা থাকার কারণেই সাধারণ ব্যবহারকারীরা লিনাক্স ব্যবহার করতে আগ্রহী হন না। তবে লিনাক্স ব্যবহার করতে না চাওয়ার পিছনে কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে। লিনাক্স নিয়ে মানুষের প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো নিয়ে অন্য একদিন কথা বলবো নাহয়। আজকে চলুন দেখি লিনাক্সের কোন অসুবিধাগুলো সত্যিকার অর্থে সাধারণ ব্যবহারকারীদের লিনাক্স ব্যবহারে অনাগ্রহী করে রেখেছে।

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম কেন বেশিরভাগ মানুষ ব্যবহার করেন না

প্রচারণা

যেকোন পণ্য বা সেবার জন্যই প্রচারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক একটা বিষয়। আপনি যদি চান আপনার কোন একটা কাজ মানুষ জানুক বা ব্যবহার করুক। তাহলে সবার আগে অবশ্যই সেটার প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলোর সেই অর্থে কোন প্রচারণা করা হয় না।

কারণটা জটিল নয়। লিনাক্স একটি ফ্রি এবং ওপেনসোর্স কার্নেল হওয়ায়; এটি ব্যবহার করে তৈরি করা অপারেটিং সিস্টেমগুলোও সাধারণত ফ্রি এবং ওপেনসোর্স হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব অপারেটিং সিস্টেম তৈরি হয় উদামনা এবং দক্ষ ডেভেলপারদের স্বেচ্ছাশ্রমের বিনিময়য়ে। যেহেতু লিনাক্স ভিত্তিক এসব অপারেটিং সিস্টেম থেকে সাধারণত আয় হয় না, তাই এর প্রচার করতে চাইলে ডেভেলপারদের পকেটের টাকা খরচ করে করতে হয়। স্বাভাবিকভাবে সেটা খুব সহজ ব্যাপার নয়। ফলশ্রুতিতে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের প্রচার শুধুমাত্র অফিশিয়াল ওয়েবসাইট এবং ব্লগারদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

যা আসলে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না। মানুষ যদি কোন অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে না জানে তাহলে ব্যবহার করারও প্রশ্ন আসে না। তাই আমার কাছে মনে হয় ফ্রি এবং নিরাপদ হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের লিনাক্স ব্যবহার না করার পিছনে এটি সবচেয়ে বর একটি কারণ।

সহজপ্রাপ্যতা

হ্যাঁ, ফ্রি হলেও উইন্ডোজ বা ম্যাকওএস এর মতো লিনাক্স সহজপ্রাপ্য নয়। যারা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে কিছুটা জানেন, তার হয়ত এই পয়েন্টটার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন। যেখানে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গেলেই লিনাক্সের অপারেটিং সিস্টেম বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নেওয়া যায়, সেখানে সহজপ্রাপ্যতা কীভাবে এর অসুবিধা হতে পারে?

আসলে অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে ডাউনলোড করার সুযোগ আর মানুষের কাছে পৌঁছানো দুইটা আলাদা বিষয়। আপনি যদি উইন্ডোজ কিংবা ম্যাকওএস এর কথা চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন। বাজারে যেমন তাদের অপারেটিং সিস্টেম যুক্ত তাদের ডিভাইস রয়েছে; তেমনি বেশিরিভাগ ল্যাপটপ বা ডেস্কটপেও পার্টনারশিপের মাধ্যমে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম আগে থেকে ইন্সটল করা থাকে। ফোলে যেকোন মানুষ কম্পিউটার কিনতে গেলে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজ বা ম্যাকওএস এর সাথে পরিচিত হয়।

কিন্তু লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমগুলো বড় কোন কোম্পানির দ্বারা তৈরি না হওয়ায় এদের নিজেদের কোন ডিভাইস নেই। কোন ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে আগে থেকে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা থাকে না। বর্তমান সময়ে লিনাক্স ভিত্তিক গুগলের ক্রোম ওএস এবং পপওএস এর নিজেদের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ বাজারে থাকলেও তার সফলতা খুব বেশি নয়। কারণ উইন্ডোজ বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম যুক্ত ডিভাইসের তুলনায় এসব ডিভাইসের পরিমাণ খুবই সামান্য।

প্রযুক্তিপণ্যের বিশাল বাজারে লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমগুলোর এমন সহজপ্রাপ্যতা থাকলে সাধারণ মানুষ এটি ব্যহারে আরেকটু আগ্রহী হতো একথা বলাবাহুল্য।

সফটওয়্যার

সাধারণ ব্যবহারকারীদের লিনাক্স ব্যবহার করতে না চাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ সফটওয়্যারের স্বল্পতা। যারা লিনাক্স সম্পর্কে একটু আধটু জানেন বা ব্যবহারের জন্য ইন্সটল করেন; তারা বেশিরভাগ সময়ই কয়েকদিন ব্যবহারের পর আগের অপারেটিং সিস্টেমে ফেরত যান। কিংবা একমাত্র অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে লিনাক্স ব্যবহার করতে চান না। কারণ, মাইক্রোসফট অফিস কিংবা অ্যাডোবির সফটওয়্যারগুলোর মতো বহুল ব্যবহৃত এবং কাজের সফটওয়্যারগুলো লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমর জন্য ডেভেলপ করা হয় না।

ফ্রি এবং অপ্রচলিত কোন অপারেটিং সিস্টেমের জন্য এধরণের কমার্শিয়াল সফটওয়্যারগুলো ডেভেলপ করার আসলে কোন যৌক্তিকতাও নেই। যদিও এসব সফটওয়্যারের বিকল্প সফটওয়্যার লিনাক্সে রয়েছে; এবং চাইলে ভার্চুয়াল বক্স কিংবা Wine নামক সফটওয়্যার ব্যবহার যেকোন লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে উইন্ডোজ এর সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এসব সফটওয়্যারের পারফর্মেন্স ব্যবহারকারীদে সন্তুষ্ট করতে বেশিরভাগ সময়ই ব্যার্থ হয়। ফলে, একজন সাধারণ ব্যবহারকারী লিনাক্স ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটলে জটিলতা

নতুন কোন কম্পিউটারে লিনাক্স ইন্সটোল করা যেকোন অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার মতি সহজ। কিন্তু কম্পিউটার যদি পুরাতন হয় তাহলে লিনাক্স ইন্সটল করা বেশ ঝামেলার মনে হতে পারে অনেকের কাছে। বিশেষ করে উইন্ডোজ ইন্সটল করা কোন কম্পিউটারে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার সময় সর্তক না হলে সম্পূর্ণ হার্ডডিস্কই ফরম্যাট হয়ে যায়।

উইন্ডোজ এবং লিনাক্সের ফাইল সিস্টেম আলাদা হওয়ায় এই সমস্যাটি হয়ে থাকে। উইন্ডোজ ইন্সটল করা কোন কম্পিউটারে লিনাক্স ইন্সটল করতে চাইলে হার্ডডিস্ককে নতুন ফরম্যাটে পার্টিশন করে নিতে হয়। অনেক সময় একটি লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার সময় আলাদা আলাদা পার্টিশনেরও প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া ভালো করে না বুঝে ইন্সটল করতে গেলে পুরো হার্ডডিস্ক ফরম্যাট হয়ে যাওয়ার ভয় তো থাকেই।

এসব কারণে লিনাক্স ইন্সটল করা বেশিরভাগ সময়ই জটিল হয়ে দাঁড়ায়। যদিও প্রত্যকটা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের ওয়েবসাইটে কীভাবে ইন্সটোল করতে হবে তা ধাপে ধাপে ছবিসহ বর্ণনা করা হয়ে থাকে। তারপরও একজন ব্যবহারারী পুরো প্রসেস সঠিকভাবে ফলো করছেন সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না সবসময়। তাই একটা ঝুঁকি থকেই যায়। কেউ যদি লিনাক্স ইন্সটল করতে গিয়ে একবার পুরো কম্পিউটার সব ডাটা হারিয়ে ফেলেন, তিনি যে পরবর্তীতে লিনাক্স ব্যবহারে আগ্রহী হবেন না, সেটাই স্বাভাবিক।

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সাপোর্ট

লিনাক্সের মোটামুটি প্রত্যেকটা অপারেটিং সিস্টেমেরই রয়েছে শক্তিশালী অনলাইন সাপোর্ট কমিউনিটি। যেখানে ডেভেলপার থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবহাকারীরা যেকোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তুত থাকেন। একে অন্যকে সাহায্য করেন। তবে আমরা সাধারণ ব্যবহাকারীরা কম্পিউটারের কোন সমস্যা হলে আসলে এধরণের অনলাইন সাপোর্ট কমউনিটি থেকে সাহায্য নিতে অভ্যাস্ত না। আশেপাশের বন্ধুবান্ধব বা পরিচিদের মধ্য যারা কম্পিউটার ভালো বোঝে তাদের শরণাপন্ন হই কোন সমস্যায় পড়লে।

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের কোন সমস্যায় পড়লে আপনি আপনার চারপাশে খুব সহজেই অভিজ্ঞ মানুষ পেয়ে যাবেন যিনি আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু লিনাক্সের ক্ষেত্রে তা হয় না। যেহেতু খুব বেশি মানুষ লিনাক্স ব্যবহার করে না, তাই আশেপাশে লিনাক্সের সমস্যার সমাদানে আপনাকে সাহায্য করতে এমন মানুষ পাওয়াও খুব কঠিন হয়ে যায়। আর অভ্যাস্ততা না থাকার কারণে অনলাইন সাপোর্ট কমিনিউটিও খুব বেশি কাজের হয়ে ওঠে না সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে। ফলে লিনাক্স ব্যবহারেও আগ্রহ হারান তারা।

লিনাক্স এখনও ততটা বিস্তৃতভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে নি। তবে সুবিধা অসুবিধার সার্বিক বিবেচনায় উপরে বর্ণিত লিনাক্সের অসুবিধাগুলো অগ্রাহ্য করা যায়। আপনি যদি প্রযুক্তি প্রিয় একজন মানুষ হন আর লিনাক্স সম্পর্কে ভালো করে জানেন; তাহলে বিনামূল্যের নিরাপদ এই অপারেটিং সিস্টেম কেন ব্যবহার করবেন না?

লিনাক্স নিয়ে আপনার মতামত কী? আম্পনার মতামত এবং লেখার কোন অসংগতি দেখতে পেলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় তা জানিয়ে দিন আমাদের কমেন্ট বক্সে। ভবিষ্যতে কী ধরণের লেখা কেন্দ্রবাংলায় দেখতে চান তা লিখে জানাতে পারেন আমাদের Contact পেজে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved