চাঁদ পৃথিবীর সুবচেয়ে কাছে মহাজাগতিক বস্তু। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। চাঁদকে নিয়ে তাই মানুষের কৌতুহল সেই প্রাচীন কাল থেকেই। তীব্র এই কৌতুহল নিবারণের জন্য অর্ধ শতাব্দীরও বেশি আগে মানুষ মানুষ পা রেখেছে চাঁদের বুকে। চাঁদ সম্পর্কিত ১০টি ফ্যাক্ট নিয়ে আমাদের আজকের এই আলোচনা।

আমাদের মতো চাঁদ নিয়ে হয়ত আপনারও রয়েছে তীব্র কৌতুহল। আশাকরি, তার কিছুটা পূরণ হবে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়লে। মাঝে মাঝেই হয়ত অবাক হয়ে যাবেন। আমরা যেমনটি হয়েছি। সর্বোপরি লেখাটা আপনাদের কাছে ভালো লাগলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে।

চাঁদ সম্পর্কিত ১০টি ফ্যাক্ট

চাঁদ সম্পর্কিত ১০টি ফ্যাক্ট, যা আপনাকে অবাক করবে

চাঁদের উজ্জ্বলতা সূর্যের তুলনায় ৪ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ

চাঁদ নিজে কোন আলো তৈরী করে না। এটা অনেকটা পাথুরে বালুময় একটি উপগ্রহ। রাতের আকাশে জোছনার যে আলো আমরা পাই সেটা মূলত সূর্যের আলোর কিছু প্রতিফলন। চাঁদের পৃষ্টে সূর্যের আলো পড়ে সেটা প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে আসে।

যেহেতু চাঁদ প্রায় প্রতি ২৭ দিনে একবার করে পুরো পৃথিবী ঘুরে আসে। তাই, নির্দিষ্ট কোন জায়গা থেকে মাসের একেক সময় চাঁদের একেক রূপ আমরা দেখতে পাই। যখন যতোটুকু দৃশ্যমান হয় আর কি। ঠিক একই কারণে চন্দ্রমাসগুলোও পৃথিবীর একেক যায়গায় একেক দিনে শুরু হয়।

যাইহোক, চাঁদের উজ্জ্বলতা মূলত পৃথিবী, চাঁদ এবং সূর্যের মধ্যকার কোণের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। এছাড়াও পৃথিবী বায়ু মন্ডলের ধুলোর পরিমাণ, বা মেঘের কারণেও এর উজ্জ্বলতা হ্রাস বৃদ্ধি হয়ে থাকে।

আরও পড়তে পারেনঃ ৭টি মহাদেশের ১০টি অবাক করা ভৌগলিক ফ্যাক্ট

স্কাই এবং টেলিস্কোপের একটি তথ্যসূত্র মতে, পরিষ্কার রাতের আকাশে পূর্ণ চাঁদের উজ্জ্বলতা সূর্যের তুলনায় ৪ লক্ষভাগের একভাগ। যার অর্থ রাতের পৃথিবীকে চাঁদের আলোতে দিনের মতো উজ্জ্বল করতে প্রয়োজন হবে ৪ লক্ষ চাঁদ! যদিও সেটা একটা অসম্ভব ব্যাপার।

ভূমিকম্পের মতো রয়েছে চন্দ্রকম্প!

পৃথিবীর প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্য ভূমিকম্প অন্যতম। প্রতিবছরই ভূমিকম্পের কারণে প্রচুর জানমালের ক্ষতি সাধন হয় পৃথিবী জুড়ে। ভূমিকম্প নামের সাথে ভূমি কথাটি যুক্ত থাকার জন্য আপনি যদি মনে করেন শুধুমাত্র পৃথিবীতেই ভূমিকম্প হয়ে থাকে তাহলে সেটা সত্য নয়।

১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত নাসার বিভিন্ন চন্দ্র অভিযানে দেখা গেছে, পৃথিবীর মতো চাঁদের পৃষ্ঠের ভূমিকম্পের মতো কম্পন হয়। একে Moonquakes বলা হয়ে থাকে। বাংলায় এটা আমরা চন্দ্রকম্প বলতে পারি। নাসার এক তথ্য মতে, চন্দ্রপৃষ্ঠে ৫.৫ মাত্রার কম্পন রেকর্ড করা হয় রিখটার স্কেলে।

চাঁদ কিন্তু গোলাকার নয়!

রাতের আকাশে পূর্ণ চাঁদ দেখে আমাদের কাছে গোলাকার বলে মনে হয়। তবে আদতে চাঁদের আকৃতি ঠিক গোলাকার নয়। বরং অনেকটা লেবুর মতো আকৃতি এই উপগ্রহের।

আরও পড়তে পারেনঃ নিউট্রন স্টার, ডার্কম্যাটার আর ব্ল্যাকহোল কি?

চাঁদ পৃথিবী থেকে কতো দূরে?

এই প্রশ্নটি গুগলকে করলে আপনি অনায়েসে এর উত্তর জানতে পারবেন। পৃথিবী থেকে মাত্র ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমাটার দূরে চাঁদের অবস্থান। তবে, কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হওয়ায় বিভিন্ন সময় এই দূরত্ব পরিবর্তন হয়।

যাইহোক, এই দূরত্ব আসলে কতোটুকু তা অনুভব করার জন্য নাসা একটি চমৎকার ধারণা দিয়েছে। সেটা হচ্ছে, চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে তখন চাঁদ এবং পৃথিবী মধ্যকার দূরত্ব মোটামুটি ২৮-২৯টি পৃথিবীর সমান। এমনি ৩২টি পৃথিবীর এক সারিতে রাখলে যতোটুকু দূরত্ব হবে ততখানি দুরত্বে চাঁদের গড় অবস্থান।

চীন একমাত্র দেশ, যারা চাঁদের অন্ধকার পৃষ্ঠে অবতরণ করেছে

আমরা চাঁদের শুধুমাত্র একপাশ দেখতে পাই সবসময়। অন্যপাশ অন্ধকারে ঢাকা থাকে সারা বছর। নাসা পরিচালিত চন্দ্র অভিযানগুলো ছিলো এই দৃশ্যমান অঞ্চল জুড়ে।

২০১৯ সালে চীন চাঁদে তাদের তৈরী নভোযান Chang’e-4 পাঠায় চাঁদের বুকে। যেটা প্রথমবারের মতো চাঁদের অন্ধকার পৃষ্ঠে অবতরণ করে। এর আগে কোন দেশই এই অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে নি।

সৌরজগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ চাঁদ

মহাকাশে থাকা বস্তুদের তুলনায় চাঁদ খুব বেশি বড় নয়। তবে, সৌরজগতের উপগ্রহদের আকার বিবেচনা করলে এটাকে ছোট বলার সুযোগও কম। ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের একটি তথ্য অনুযায়ী, সৌর জগতের সব গ্রহের প্রায় ২০০টি উপগ্রহের মধ্য চাঁদ পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ!

প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য যে সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহটির নাম গ্যানিমিড। যা বৃহস্পতি গ্রহের চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আরও পড়তে পারেনঃ স্মার্টফোন সম্পর্কিত ১১টি অবাক করা তথ্য, আপনি জানেন কী?

চাঁদের তাপমাত্রা

চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই। সেখানে শব্দ শোনা যায় না। ছোটবেলার বিজ্ঞান বইয়ে একথা আমরা সবাই পড়েছি। কিন্তু চাঁদের তাপমাত্রা কেমন সেটা জানেন কী? চাঁদে বায়ু মন্ডল না থাকায়, সূর্যের অতিবেগুণি রশ্মি যেমন ফিল্টার হয় না, তেমনি চন্দ্রপৃষ্ঠ ধরে রাখতে পারে না।

দ্য প্ল্যানেট-এর একটি তথ্যমতে, সূর্যের আলোতে চাঁদের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ২৬০ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা প্রায় ১২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অন্যদিকে অন্ধকার অবস্থায় চাঁদের পৃষ্ঠের সর্বোনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো -৩৮৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট। বা -২৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস! যা পরমশূন্য তাপমাত্রার চেয়ে মাত্র ৪০ ডিগ্রী বেশি!

দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ!

খালি চোখে বোঝা অসম্ভব হলেও এটা সত্য যে চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। প্রতিবছর এই দূরে সরে যাওয়ার পরিমাণ প্রায় ৩.৮ সেন্টিমিটার। মহাকর্ষ বল এবং কৌণিক ভরবেগের প্রভাবেই এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সায়েন্স ফোকাসে প্রকাশিত এক আর্টিকেলে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।

চাঁদের আপনার ওজন কমে যাবে ৮১ ভাগ!

চাঁদে ভর পৃথিবীর ভরের মাত্র ১.২ শতাংশ। বুঝতেই পারছেন এখানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মানও বেশ কম। মাত্র ১.৬২ মিটার/সেকেন্ড২। যার ফলে চাঁদে যে কোন বস্তুর ওজনই বেশ কম কম মনে হয়।

একই ভরের কোন বস্তুর ওজন পৃথিবীর তুলনায় চাঁদে কমে যায় ৮১ ভাগ। মজার ব্যাপার তাই না?

চাঁদের বেস ক্যাম্প তৈরীর পরিকল্পনা রয়েছে নাসার

২০২৪ সালের মধ্য চাঁদের পৃষ্ঠে বেসক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে নাসা। যেখানে নভোচারীরা দীর্ঘদিন অবস্থান করতে পারবেন। পৃথিবীতে যেসব গবেষণা করা কঠিন পরিবেশগত কারণে, সেসব গবেষণা হবে মূলত এখানে। নাসা তাদের এই বেসক্যাম স্থাপনের মিশনের নাম দিয়েছে আর্টেমিস তিন

আরও পড়তে পারেনঃ মোবাইল ফোন নিয়ে ২০টি চমকপ্রদ তথ্য, আপনার জানা আছে কি?

এই ছিলো চাঁদ সম্পর্কিত ১০টি ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা। কেমন লাগলো আপনার? কমেন্টে আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে আমাদের উৎসাহিত করবেন। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই ফেসবুকে শেয়ার করে নিতে ভুলবেন না।


1 Comment

  • Leave a Reply

    Avatar placeholder

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    2023 © KendroBangla | All Rights Reserved