বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের নাম খানা এসেছে আমাদের সবার পরিচিত ফল অ্যাপল বা আপেল থেকে। প্রতিষ্ঠানটির লোগোর দিকে তাকালে যে কেউই বিষয়টি নিমিষেই আঁচ করতে পারবেন।
যাইহোক, ফলের নামে নাম হয়েছে ব্যাপারটা নাহয় সহজেই বোঝা গেল। এই ফলের নামেই কেন নামটা হলো? আর এটা নির্বাচনই বা করেছিলেন কে? কী ভাবনা কাজ করেছিলো নামটা রাখার সময়?
আপনি যদি এটা নিয়ে গুগলে খোঁজাখুঁজি করেন, তার উপরের সবগুলো প্রশ্নের বিপরীতেই চমকপ্রদ মুখরোচক অনেক গল্প পাবেন। তবে, সেই গল্পগুলোতে আদৌ কি সত্যের কোন ছিটেফোঁটা আছে? চলুন, জানার চেষ্টা করি।
অ্যাপলের নাম অ্যাপল হলো যেভাবে
অ্যাপলের পণ্য বা খোদ কোম্পানিটি নিয়েই মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপলের নামকরণ নিয়ে অনেক তত্ত্ব তৈরী হয়েছে। আমরা সেদিকে না যেয়ে সরাসরি অ্যাপলের দুই সহ প্রতিষ্ঠাতার আত্মজীবনীতে নজর দিবো। তারা কী বলেছেন তাদের কোম্পানির নামকরণের ইতিহাস নিয়ে?

ওয়াল্টার আইজ্যাকসন স্টিভ জবসের আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “জবস নিজে আপেল পছন্দ করতেন।“ আইকজ্যাকসনের মতে, জবস নামটি বেছে নিয়েছিলেন কারণ, “ফল হিসেবে আপেল মজাদার একটি ফল। মানুষ নামটি শুনে উৎসাহী হবে বা সতেজ অনুভব করবে। নিজের খুব কাছের মনে হবে কোম্পানিটিকে। সাথে সাথে ফোনবুকে এটা Atari নামের একটি কোম্পানি থেকেও ওগিয়ে থাকবে।”
আরও পড়তে পারেনঃ উইন্ডোজ ১১ এর ফিচার : কী আছে উইন্ডোজের এই নতুন সংস্করণে?
অন্যদিকে অ্যাপলের আরেক সহ প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াকের মতে, জবস যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেটের একটি খামার থেকে ফিরে এসে, সেটাকে অপেলের বাগান হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। বিষয়টি হয়ত স্টিভ জবসকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছিলো। কারণ সে সময়েই স্টিভ জবস ঘোষণা করেন তার কোম্পানির নাম তিনি রাখবে ‘অ্যাপল কম্পিউটার।’
ওজনিয়াক তার আত্মজীবনি iWoz-এ বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তারা দুজনেই কোম্পানির নামটি প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কোন শব্দে রাখার জন্য চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তেমন যুতসই কোন শব্দ খুঁজে না পাওয়াতে সহজ এবং ইংরেজির প্রথম বর্ণ দিয়ে শুরু অ্যাপল শব্দটাকেই শেষপর্যন্ত সিলেক্ট করে নেন। আর এভাবেই আজকের ট্রিলিয়ন ডলারের অ্যাপল কোম্পানির নাম অ্যাপল রাখা হয়।
অ্যাপলের লোগোতে অর্ধেক খাওয়া আপেল কেন?
আগেই বলেছি অ্যাপলের নাম তো বটেই লোগোটার দিকে তাকালেও বোঝা যায় এর নামেরর সাথে আপেলের কোন সম্পর্ক আছে। এখন অ্যাপলের নাম কীভাবে আসলো সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু অ্যাপলের লোগোতে পুরো আপেল না দিয়ে কেন খাওয়া আপেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে?
এরও নানা তত্ত্ব রয়েছে। এর মধ্য একটি তো বেশ সিরিয়াস। বিখ্যাত কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও টুরিং টেস্ট এর জনক অ্যালান টুরিং এর মৃত্যু হয়েছিলো সায়ানাইডযুক্ত একটি আপেলে কামড় দেওয়ার পর। বলা হয় যে, তারই সম্মানে লোগোটিতে আপেলের এমন ছবি ব্যবহার করা হয়েছিলো।
যাইহোক, লোগোটি যিনি তৈরী করেছিলেন, রব জ্যানফ; তিনি ফোর্বসকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে লোগোটি এমন হওয়ার কারণ ব্যখ্যা করেন। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ আপেলের প্রতিকৃতি লোগোতে ব্যবহার না করে কামড়ে কামড়ের অংশটি রাখা হয়ে ছিলো ফলের আকার বোঝানোর জন্য।
আরও পড়তে পারেনঃ স্যোশাল মিডিয়া অ্যালগরিদম : যা আপনাকে আসক্ত করে তোলে
কামড়ের ছবিটা না থাকলে অনেকেই হয়ত ভুল করে এটাকে আরও ছোট কোন ফল মনে রাখতো। এই ফাঁকে বলে রাখি অ্যাপলের বর্তমান লোগোটি বেশ কয়েকবার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। প্রথম যে লোগোটা তৈরী করা হয়েছিলো, সেটা যথেষ্টই মজার ছিলো।
আপেলের ছবি তো সেখানেই ছিলোই। সাথে ছিলো বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন, আপেলগাছ সহ পুরোদস্তুর একটি দৃশ্যপট! ১৯৭৬ সালে তৈরী এই লোগোটিকে অবশ্য পরের বছরেই বাদ দেওয়া হয়।

১৯৭৭ সালেই রব জ্যানফ অ্যাপলের জন্য অর্ধেক খাওয়া আপেলের দ্বিমাত্রিক লোগো ডিজাইন করেন। এরপর রঙ বাদে হালকা কিছু পরিবর্তন হয়েছে শুধু কয়েকবার।
অ্যাপলের নাম ও লোগোর জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের লেখা। কেমন লাগলো আপনার কাছে? ভবিষ্যতে কী ধরণের লেখা কেন্দ্রবাংলায় দেখতে চান? আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানান। আর লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুবান্ধবদের সাথে ফেসবুকে শেয়ার করে নিতে ভুলবেন না।