দিন যতো যাচ্ছে স্মার্টফোনের স্টোরেজ, মেমরি বা র‍্যাম এর পরিমাণ ততই বাড়ছে। কিন্তু অনলাইন স্ট্রিমিং এর এই যুগে আপনার ফোনের জন্য ঠিক কতোখানি স্টোরেজ প্রয়োজন?

একটি স্মার্টফোন কেনার সময় ফিচারটি পছন্দ করে নেওয়ার কিছুটা সুযোগ থাকে, সেটা হচ্ছে স্টোরেজ। বাজারে প্রায় সব ফোনই রঙ বাদে স্টোরেজের উপর ভিত্তি করে একটি ফোনের কয়েকটি সংস্করণ এনে থাকে। আপনি চাইলেই নির্দিষ্ট মডেলের কোন ফোন ভিন্ন প্রসসরে পাবেন না।

কিন্তু কম বেশি স্টোরেজে খুব সহজেই নিতে পারবেন। ৩২ জিবি থেকে শুরু করে ২৫৬ জিবি স্টোরেজের ফোন এখন বাজেট রেঞ্জেই পাওয়া যায়। কিন্তু কী কতোখানি স্টোরেজের ফোন নেওয়া উচিত সেটা আমরা অনেকসময় বুঝতে পারি না। ফোন কোম্পানির লোভনীয় বিজ্ঞাপনের খপ্পড়ে পড়ে দেখা যায় প্রয়োজন না থাকলেও ২০০০ টাকা বেশি দিয়ে বেশি স্টোরেজের ফোন কিনি।

বেশি স্টোরেজের ফোন কেনা দোষের কিছু না, কিন্তু এই দূর্মূল্যের বাজারে অহেতুক ২০০০ টাকা খরচ করাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ না। আজকের লেখায় তাই আমরা জানার চেষ্টা করবো আপনার বা আমার স্মার্টফোনের জন্য কতোখানি স্টোরেজ প্রয়োজন। চলুন তাহলে দেরী না করে শুরু করি।

কতোখানি স্টোরেজ প্রয়োজন

স্মার্টফোনে কতোখানি স্টোরেজ প্রয়োজন

স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে আপনি কীভাবে ফোনটা ব্যবহার করবেন সেটা সামনে চলে আসে। অনেকের জন্য যেমন ১২৮ জিবির ফোনই অনেক বেশি হয়ে যায়। তেমনি অনেকের বেলায় ১ টেরাবাইট স্টোরেজের স্যামসাঙ এস২২ আল্ট্রা ফোনেও লো স্টোরেজ ওয়ার্নিং চলে আসতে পারে।

অনেকটাই অভ্যাস কিংবা বদঅভ্যাসের ব্যাপার। তবে আমরা এই লেখায় এই দিকটা নজর দিবো না। বরং দেখার চেষ্টা করবো, সাধারণভাবে একটা ফোনে স্মুথলি দৈনন্দিন সবধরণের কাজ করার জন্য কতোখানি স্টোরেজ প্রয়োজন।

স্টোরেজ কী কাজে খরচ হচ্ছে?

কেনার সময় আমরা যতো বেশি বা কম স্টোরেজের ফোনই নিই না কেন; ফোন অন করার পর দেখা যায় তার থেকে কম জায়গা ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ আছে। অর্থাৎ ফোনের স্পেসেফিকেশনে যতোখানি মেমরির কথা লেখা থাকে ব্যবহারের জন্য ততখানি পাওয়া যায় না।

এর কারণ, ফোনের সিস্টেম ফাইল আগেই অনেকগুলো জায়গা দখল করে বসে থাকে। আপনি ১২৮ গিগাবাইট স্টোরেজের একটা ফোন নেন তাহলে দেখবেন ১১-১২ জিবি জায়গা দখল করে আছে সিস্টেম ফাইল।

পুরো স্টোরেজের হিসেবে এটা প্রায় ১০%। অনেকখানি জায়গা। এই সিস্টেম ফাইলগুলোর উপর আপনার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ফোনের অপারেটিং সিস্টেম সহ নানা অতি প্রয়োজন ফাইল থাকে এখানে। সিস্টেম ফাইল সম্পর্কে আরও একটু বিস্তারিত জানতে পারবেন এখান থেকে

অনেক ফোনে সিস্টেম ফাইলের সাথে এক্সট্রা ১৫-১৬ জিবি Other ফাইল জায়গা দখল করে বসে থাকে। এগুলোও দেখা বা ডিলিট করার কোন সুযোগ নেই। তাই, প্রায় ২৫-৩০ জিবি জায়গা আপনার নিয়ন্ত্রণে বাইরে ফোনের প্রয়োজনে ভরে থাকে।

এরপরে যে জিনিসটাতে ফোনের মেমরি বেশি ভরে যায়, সেটা হচ্ছে, ছবি আর ভিডিও ফাইল। এখনকার ফোনের স্টোরেজ বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে ক্যামেরা রেজুলেশন।

তাই ছবি তুললে অথবা ভিডিও করলে সেটার সাইজ অনেক বড় হয়। তাই এই সময়ের স্মার্টফোনের স্টোরেজ খরচ হওয়ার বড় জায়গা এই ছবি এবং ভিডিও ফাইল।

যাইহোক, খুব বেশি ভিডিও বা একই রকম একাধিক ছবি ফোনে স্টোর করার অভ্যাস না থাকলে ২০-২৫ জিবিই এক বছরের জন্য যথেষ্ট এক্ষেত্রে।

আরও পড়তে পারেনঃ স্মার্টফোন সম্পর্কিত ১১টি অবাক করা তথ্য, আপনি জানেন কী?

অ্যাপ ও গেমস স্টোরেজ ভরে যাওয়ার আরেকটা কারণ। ফোন ব্যবহার করলে অ্যাপস লাগবেই। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমরা অনেক অ্যাপ ইনস্টল করি। স্বাভাবিক ব্যবহারে এক্ষেত্রে ১৫-২০ জিবি জায়গা হলেই হয়ে যায়। তবে আপনি যদি স্মার্টফোনে অনেক গেম খেলার কথা চিন্তা করেন তাহলে জায়গা কয়েকগুন বেশিও লাগতে পারে।

এখন জায়গা ভরে যাওয়ার শেষ যে খাতটা নিয়ে আলোচনা করবো সেটা হচ্ছে, ডাউনলোড আর ডকুমেন্ট। বিভিন্ন কাজে প্রচুর ডকুমেন্ট বা পিডিএফ ফোনে রাখার প্রয়োজন পড়ে। এটাতে বেশকিছু জায়গা চলে যায়। গড়পড়তা বছরে ২জিবি এজন্য যথেষ্ট।

তবে, আপনি যদি ভিডিও, অডিও সহ বিভিন্ন ফাইল ডাউনলোড করে রাখতে চান, তাহলে প্রচুর স্টোরেজ খরচ হতে পারে।

কীভাবে দেখবেন কতোটা স্টোরেজ কোথায় ব্যবহার করছেন?

আগেই বলেছি, ফোনে কী পরিমাণ স্টোরেজ প্রয়োজন সেটা আপনার ব্যবহারের উপরে নির্ভর করে। আপনি বর্তমানে যে ফোনটা ব্যবহার করছেন, ফোনে তাই স্টোরেজ চেক করে দেখতে পারেন।

তাহলে ধারণা করতে পারবেন। আপনি কোন ক্ষেত্রে এমন স্টোরেজ ব্যবহার করেন। এবং আপনার জন্য ফোনে কতোটুকু স্টোরেজ দরকার।আপনার বর্তমান ফোনে কোন ক্ষেত্রে কতো স্টোরেজ ব্যবহার করছেন সেটা খুব সহজেই দেখতে পারবেন। এজন্য-

  • প্রথমে ফোনের Settings এ যান।
  • এর পরে Storage লিখে সার্চ করুন।
  • সার্চ রেজাল্ট দেখে Storage অপশনে ঢুকলেই আপনার ব্যবহৃত স্টোরেজ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখতে পাবেন।

কতোখানি স্টোরেজ প্রয়োজন?

আমরা এতোক্ষণ যে আলোচনা করলাম, সেখান থেকে ফোনে কী পরিমাণ স্টোরেজ দরকার সেটা কিছুটা হলে বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই। যাইহোক, আমাদের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সাধারণ স্মুথলিভাবে দৈনন্দিন কাজ সারার জন্য মোটামুটি ৬০-৭০ জিবি স্টোরেজ একটি ফোনের জন্য যথেষ্ঠ।

সাধারণ দৈনন্দিন কাজ বলতে এখানে আমরা নেট ব্রাউজিং, কিছু প্রোডাক্টিভ কাজ, সোশ্যাল মিডিয়া, ছবি বা ভিডিও ক্যাপচার করার মতো কাজের কথা বুঝিয়েছি।

আপনি যদি ফোনে অনেক বেশি ভারী গেম ইনস্টল না করেন আর প্রচুর অডিও ভিডিও ফাইল ডাউনলোড করার অভ্যাস না থাকে, তাহলে একটি ১২৮ জিবি স্টোরেজর ফোনই যথেষ্ঠ আপনার জন্য।

তারপরও বলছি, ফোনের কতোখানি স্টোরেজ দরকার সেটা একান্তই আপনার ব্যবহারের উপর নির্ভর করবে। আমরা শুধু সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সাধারণ ব্যবহারের জন্য কেমন ফোনে কতোখানি স্টোরেজ প্রয়োজন সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি? কমেন্টে আমাদেরকে জানিয়ে দিন।


Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved