লিনাক্স যে কয়েকটি কারণে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম থেকে এগিয়ে, তার একটি হল এর গ্রহণযোগ্যতা। সুপার কম্পিউটার হোক কিংবা হাই-এন্ড কম্পিউটার হোক কিংবা লো-এন্ড কম্পিউটার হোক সবকিছুর জন্যই আপনি উপযুক্ত বা সেরা লিনাক্স ডিস্ট্রো খুঁজে নিয়ে ইন্সটল করতে পারবেন।

প্রতিনিয়ত ডিজিটাল প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক হারে। নিত্যনতুন আর শক্তিশালী সব সফটওয়্যার তৈরী হচ্ছে। কাজকর্মের গতি বেড়ে যাচ্ছে বিস্ময়করভাবে। এরই সাথে সামঞ্জস্য বজায় বাজারে আসছে উন্নতমানের আরও শক্তিশালী এবং বেশি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সব ডিভাইস। তবে, স্বাভাবিকভাবে এসব আপডেটেড এবং শক্তিশালী ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ সবার হয় না।

২০২০ সালে এসেও এমন অনেকেই হয়ত আছেন, যারা আমার মতো ২ জিবি র‍্যাম আর পঞ্চম জেনারেশনের প্রসেসরযুক্ত কম্পিউটার ব্যবহার করছেন। যেসব কম্পিউটারে আপডেটেড কিংবা ভারী অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা বেশ কষ্টসাধ্য। বর্তমানে এধরণের লো-এন্ড কম্পিউটার সত্যিকার অর্থে কাজের এবং ঝামেলা বিহীনভাবে ব্যবহার করতে চাইলে উপযুক্ত বা হালকা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের বিকল্প নেই।

লো-এন্ড কম্পিউটারের জন্য ৫টি সেরা লিনাক্স ডিস্ট্রো

লো-এন্ড কম্পিউটারের জন্য ৫টি সেরা লিনাক্স ডিস্ট্রো

আপনি যদি আপনার পুরানো কম্পিউটারের জন্য উপযুক্ত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম খুঁজে থাকেন। তাহলে আশাকরি এই আর্টিকেলটি আপনাকে বেশ সহায়তা করবে। আমরা এখানে লো-এন্ড কম্পিউটারের কথা চিন্তা করে তৈরি করা খুবই লাইটওয়েট এবং অপটিমাইজড ১০টি সেরা লিনাক্স ডিস্ট্রো নিয়ে কথা বলবো; চলুন দেরি না করে মূল লেখায় প্রবেশ করি।

টাইনিকোর লিনাক্স (TinyCore Linux)

টাইনিকোর লিনাক্স

লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম অর্থাৎ লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলোর মধ্য সবচাইতে হালকা এবং কম সাইযের অপারেটিং সিস্টেমটি হচ্ছে টাইনিকোর। নামের সার্থক প্রতিফলন ঘটেছে মাত্র ১৬ মেগাবাইট সাইয়ের এই লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনটিতে। হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছেন; কম্পিউটারের এই অপারেটিং সিস্টেমটির সাইজ মাত্র ১৬ মেগাবাইট। অবিশ্বাস্য সাইযের এই অপারেটিং সিস্টেমটি ইনস্টল করতে পারবেন যে কোন কম্পিউটারে। মাত্র ১২৮ মেগাবাইট র‍্যাম থাকলেই ব্যবহার করা যাবে টাইনিকোর অপারেটিং সিস্টেম।

তবে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই অপারেটিনফ সিস্টেমকে আমার ইউজার ফ্রেন্ডলি বিশেষ করে নতুনদের জন্য একেবারেই উপযুক্ত মনে হয় নি। হওয়ার আশা করাটাও উচিত না। মাত্র ১৬ মেগাবাইটের অপারেটিং সিস্টেমের কাছে আপনি খুব বেশি কিছু আশা করতে পারেন না। কাজকর্ম করার জন্য নয়, আপনার কম্পিউটার কর্মক্ষম আছে কিংবা কিংবা অপারেটিং সিস্টেমটি শুধুমাত্র পরীক্ষা করে দেখার জন্য এটি কম্পিউটারে ইন্সটল করতে পারেন।

ভেকটর লিনাক্স

ভেকটর লিনাক্স

সাধ্যের মতো একটু স্টাইলিশ ডিজাইনযুক্ত লাইটওয়েট একটি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে চাইলে ভেকটর লিনাক্স ব্যবহার করে দেখতে পারেন। সবধরণের ইউজারের কথা মাথায় রেখে এই অপারেটিং সিস্টেমটি তৈরি করা হয়েছে লো-এন্ড কম্পিউটারের জন্য।

এতে বিল্টইন ভাবে রয়েছে প্রয়োজনীয় কাজের সব সফটওয়্যার। খুব অল্প রিসোর্স ব্যবহার করা এই অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহার করা যেমন দ্রুতিগতি সম্পন্ন, তেমনি সহজ। একারণে নতুন ইউজারদের জন্য ভেকটর লিনাক্স একটি ভালো পছন্দ হতে পারে। পাশাপাশি অ্যাডভান্স ইউজাররাও এটি ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।

বোধি লিনাক্স (Bodhi Linux)

বোধি লিনাক্স

হালকা পাতলা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্য অন্যতম জনপ্রিয় একটি অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে বোধি লিনাক্স। উবুন্টু এলটিএস ভিত্তিক এই অপারেটিং সিস্টেমটি ডিজাইন করাই হয়েছে মূলত অল্প রিসোর্সের কম্পিউটারের কথা চিন্তা করে।

ইউজার ইন্টারফেস খুব বেশি স্টাইলিশ না হলেও এতে উবুন্টুর সব সফটওয়্যার ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। যার ফলে একে সাধারণ এবং নতুন ইউজারদের জন্য একটা উপযুক্ত অপারেটিং সিস্টেম বিবেচনা করা যায়। বর্তমান বোধি লিনাক্স ৫.১ এর চারটি সংস্করণ রয়েছে। এর সবগুলোই লো-এন্ড কম্পিউটারে ব্যবহার করা যাবে।

আপনি যদি আপনার কম্পিউটার অদূর ভবিষ্যতে আপগ্রেড করতে চান এবং কার্নেল আপডেট পেতে চান, তাহলে বোধি লিনাক্স এর HWE এডিশন, এছাড়া যে কোন পুরাতন অথবা লো-এন্ড কম্পিউটারের জন্য ৩২ বিটের বোধি লিনাক্স লিগ্যেসি এডিশন ব্যবহার করতে পারেন।

যোরিন ওএস লাইট

যোরিন ওএস লাইট

ব্যাক্তিগতভাবে আমার খুবই পছন্দের একটি অপারেটিং সিস্টেম যোরিন ওএস লাইট। স্মার্ট আর মিনিমাল ডিজাইনের এই অপারেটিং সিস্টেমটি তৈরি করা হয়ে অনেকটা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের আদলে। উইন্ডওজ ব্যবহারকারীরা খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন যোরিওএস লাইট ব্যবহারের সময়।

যোরিন ওএস লাইট অপারেটিং সিস্টেমের সাথে বিল্টইনভাবে যুক্ত হয়েছে লিবরা অফিস, গিম্প, ফায়ারফক্স ব্রাউজার, মাল্টিমিডিয়া প্লেয়ার সহ প্রয়োজনীয় সব সফটওয়্যার। এতে করে অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করেই কাজ শুরু করতে পারবেন।

চাইলে ইন্সটল না করেও লিনাক্সের অন্যসব অপারেটিং সিস্টেমের মতো পেনড্রাইভ থেকে লাইভ ব্যবহার করতে পারবেন এই অপারেটিং সিস্টেম এবং বিল্টইন সফটওয়্যারগুলো। অনেকেই আছেন যারা কম্পিউটারকে একটু মিনিমাল বা স্মার্ট ইউজার ইন্টারফেস দেখতে পছন্দ করেন। ঝামেলাবিহীন, সুন্দর এবং ফাস্ট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে চান। লো-এন্ড কম্পিউটারে যা এখন প্রায় অসম্ভব। তবে, যোরিনওএস এক্ষেত্রে একটি চমৎকার সমাধান হতে পারে।

যুবুন্টু

যুবুন্টু

যাদের কম্পিউটারের র‍্যাম ১ জিবি কিংবা তার উপরে তাদের জন্য ভালো একটি পছন্দ হতে পারে যুবুন্টু। যুবুন্টু মূলত দ্রুতগতিসম্পন্ন, সাধামাটা ইউজার ইন্টারফেসযুক্ত একটি অপারেটিং সিস্টেম। যেটি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উবুন্টুর একটি লাইটওয়েট এডিশন। ফলে এতে আপনি উবুন্টুর সকল সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবেন। যুক্ত হতে পারবেন লিনাক্সের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সফটওয়্যার সেন্টারের সাথে।

এছাড়া যুবুন্টু অপারেটিং সিস্টেমের সাথেও বিল্টইনভাবে রয়েছে প্রয়োজনীয় সফটওয়ারের সব প্যাকেজ। ফলে যুবুন্টু ইনস্টল করার পর আপনাকে নতুন করে সব সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিতে হবে না।

ইউজার ইন্টারফেস সাধামাটা হলেও কাস্টমাইজেশনের সুযোগ রয়েছে। আপনি চাইলেই একে আপনার পছন্দমতো সাজিয়ে নিতে পারবেন। তবে লো-এন্ড কম্পিউটারে খুব বেশি কাস্টমাইজেশন করতে গেলে কম্পিউটার স্লো হয়ে যেতে পারে। যারা ঝামেলাহীন, কাজের করার মতো সাদামাটা একটি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে চান। তারা যুবুন্টু ইন্সটল করে নিতে পারেন কম্পিউটারে।

লো-এন্ড কম্পিউটারের জন্য সেরা লিনাক্স ডিস্ট্রো নিয়ে আলোচনা এতো অল্প পরিসরে ভালোভাবে করা যায় না। বিষয়বস্তু সহজ করার জন্য মূলত টেকনিক্যাল আলোচনা বাদ দিয়ে একজন ব্যবহারকারী হিসেবে আলোচনা করা চেষ্টা করি। কোথাও বুঝতে কোন অসুবিধা হলে বা লিনাক্স ডিস্ট্রো নিয়ে কোন প্রশ্ন, পরামর্শ এবং মতামত থাকলে অনুগ্রহপূর্বক জানিয়ে দিন আমাদের কমেন্ট বক্সে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved