একটা সময় ডিজিটাল মাধ্যম অর্থাৎ কম্পিউটার, মোবাইলফোন অথবা ইন্টারনেটে বাংলা অক্ষরে কোন কিছু লেখা বা পড়া প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার ছিলো। এখন সেটা সত্যি নয় একদমই। গতো দুই দশকে এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষ করে ইউনিকোড আসার পর বাংলা অক্ষর ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় সবখানে। কম্পিউটার বা মোবাইলফোনে বাংলা লেখার যতো উপায় আছে, সেগুলো সম্পর্কেই আজকে জানার চেষ্টা করবো এই লেখায়।

বয়সের হিসেবে বাংলা খুব প্রাচীন কোন ভাষা নয়। মাত্র ১৩০০ বছরপূর্বে বাংলা ভাষা বিকাশিত হয় বলে জানা যায়। তবে, বয়সে নতুন হলেও বাংলা ভাষা পৃথিবীর সবথেকে শ্রুতিমধুর ভাষা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলা ভাষার মতো গৌরবউজ্জ্বল ইতিহাসও অন্যকোন ভাষার বেলায় খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যায় না।

অনেকেই হয়তবা জানেন না, পৃথিবীর অনেক ভাষারই নিজস্ব কোন বর্ণমালা নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ল্যাটিন কিংবা রোমান বর্ণমালা ব্যবহার করে এসব ভাষা লেখা হয়। অনেকটা ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখার মতো করে। আমরা বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা এদিক দিয়েও অনেক সৌভাগ্যবান। আমাদের ভাষা যে সবচেয়ে শ্রুতিমধুর শুধু তাই না, আমাদের রয়েছে নিজস্ব বর্ণমালা।

নিজস্ব বর্ণমালায় নিজের ভাষা লেখার যে আনন্দ, তার কোন তুলনা হয় না। বর্তমান এই প্রযুক্তির যুগে বাংলা লেখার বিষয়টি আরও অনেক সহজ হয়ে গেছে। শুধুমাত্র বোতাম চেপেই যেকেউ বাংলায় যে কোন কথা লিখে প্রকাশ করার সুযোগ তৈরী হয়েছে। যে কোন ডিভাইসেই এখন আপনি চাইলে বাংলা অক্ষরে যে কোন কিছু লিখতে পারবেন।

বাংলা লেখা আসলেই কতোটা সহজ সেটা যারা জানেন না, তাঁদের জন্য এই লেখাটি খুবই কাজে লাগতে পারে। আমরা এই লেখায় কম্পিউটার, মোবাইলফোন এবং ইন্টারনেটে বাংলা লেখার যতো উপায় আছে সব নিয়ে জানার চেষ্টা করবো। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় প্রবেশ করি।

বাংলা লেখার যতো উপায়

বাংলা লেখার যতো উপায়

কম্পিউটারে বাংলা লেখার যতো উপায়

বিংশ শতাব্দির কম্পিউটারগুলো ইউনিকোড সাপোর্ট করতো না। তাই সেসময়ে কম্পিউটারে বাংলা লেখা বা পড়ার জন্য স্পেশাল ফন্ট এবং সফটওয়্যারের প্রয়োজন হতো। যার সাহায্য ইংরেজি আসকি টেক্সটকে কনভার্ট করে বাংলা টেক্সটে রূপ দেওয়া হতো। খুবই জটিল একটা ব্যাপার ছিলো সেটা।

তবে, এখনকার সময়ের কম্পিউটারের সব অপারেটিং সিস্টেমই ইউনিকোড সাপোর্ট করে। যার ফলে বাংলা সহ পৃথিবীর যেকোন ভাষায় এসব অপারেটিং সিস্টেমে খুব স্বাছন্দ্যে লেখা এবং পড়া যায়। আমরা এই লেখায় তাই শুধু ইউনিকোডে বাংলা লেখার উপায়গুলোর দিকেই আলোকপাত করবো। যাতে আপনি খুব সহজেই কম্পিউটারে বাংলা লিখতে পারেন।

উইন্ডোজ বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে বাংলা লিখুন

উইন্ডোজ বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে বাংলা লেখার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজ সফটওয়্যারটির নাম হচ্ছে, অভ্র কী বোর্ড। ২০০০ সালে পরে রিলিজ পাওয়া সব উইন্ডোজ এবং ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমই ইউনিকোড সাপোর্ট করে। অর্থাৎ উইন্ডোজ ৭, ৮ কিংবা ১০ এবং ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে বাংলা লেখার জন্য আপনাকে শুধু অভ্র কীবোর্ডটি ইন্সটল করে নিতে হবে।

অভ্র কীবোর্ডের সাহায্য আপনি কম্পিউটারের যে কোন জায়গাতেই খুব সহজে বাংলা লিখতে পারবেন। F12 বাটনটি চেপে ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা সুইচ করতে পারবেন। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, অভ্র কীবোর্ডের সাহায্য বাংলা লেখার জন্য আপনাকে বাংলা কোন লে-আউট মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই।

যেভাবে ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লিখেন সেভাবেই বাংলা অক্ষরে বাংলা লিখতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি ইংরেজি অক্ষরে বাংলা উচ্চারণে যাই লিখবেন সেটা বাংলা অক্ষরে আপনার হয়ে লিখে দিবে এই কীবোর্ডটি। তবে, যারা এভাবে লিখে অভ্যাস্ত নয়, তাঁদের জন্য রয়েছে প্রচলিত জাতীয়, প্রভাত, বর্ণনা সহও আরও করেকটি লে-আউট।

এছাড়া পছন্দমতো লে-আউট তৈরী করে নিয়েও বাংলা লেখা যাবে অভ্র কীবোর্ডের সাহায্য। মাউসের সাহায্য বাংলা লেখার অপশনও আছে এতে। অভ্র কীবোর্ড ব্যবহারের যাবতীয় সুবিধা এবং টিউটোরিয়াল জানতে পারবেন তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে। ৭ মেগাবাইটেরও কম সাইযের এই সফটওয়্যারটির পোর্টেবল ভার্সনও রয়েছে।

অভ্র বাদে উইন্ডোজ কম্পিউটারে বাংলা লেখার আরও একটি চমৎকার সফটওয়্যার হচ্ছে লিপিঘর কীবোর্ড। বেশ পুরানো কম্পিউটারগুলোতে অভ্র কীবোর্ড চালাতে গেলে অনেকসময় সেটা হ্যাঙ করে। তাই, এ সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের জন্য লিপিঘর কীবোর্ডটি একটা ভালো অপশন হতে পারে।

এটা উইন্ডোজের ল্যাংগুয়েজ সিস্টেম কীবোর্ডের সাথে কাজ করে। ইনস্টল করে নেওয়ার পর শুধুমাত্র Windows+Space বাটন চেপেই বাংলা ইংরেজি কীবোর্ড সুইচ করতে পারবেন। লিপিঘর কীবোর্ডের ইনস্ক্রিপ্ট, জাতীয় এবং বাংলাওয়ার্ড লে-আউটের তিনটি আলাদা আলদা সংস্করণ রয়েছে।

আপনি যে লে-আউটে অভ্যাস্ত সেটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করতে হবে। অভ্র কীবোর্ডের মতো এতে লে-আউট সুইচ করা সুযোগ নেই। তবে চাইলে তিনটা লে-আউটই ইন্সটল করে রাখতে পারবেন। আমার মতে, যারা এই তিনটি লে-আউটের কোন একটিতে পারদর্শী তাঁদের উইন্ডোজ কম্পিউটারের জন্য বাংলা লেখা সেরা কীবোর্ড হচ্ছে লিপিঘর কী-বোর্ড।

লিনাক্সে বাংলা লিখুন

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমগুলোতেও অভ্র কীবোর্ডের সাহায্য বাংলা লেখা যায়। তবে সেটা ইনস্টল করা যথেষ্ঠ ঝামেলার কাজ। তাছাড়া অভ্র কীবোর্ডের লিনাক্সে হ্যাঙ করার প্রবণতাও কিছুটা বেশি। এক্ষেত্রে, আপনি লিনাক্সে বাংলা লেখার জন্য সরাসরি এর বিল্টইন বাংলা কীবোর্ডের সাহায্য নিতে পারেন। অথবা ব্যবহার ওপেনবাংলা কীবোর্ড ব্যবহার করতে পারেন।

ওপেনবাংলা কীবোর্ড লিনাক্সের জন্য এক কথায় আদর্শ বাংলা কীবোর্ড বলা যায়। অভ্র কীবোর্ডের খালাত মামাত ভাই এটা। অভ্র কীবোর্ডের সব ফিচার তো পাবেনই সাথে, বোনাস হিসেবে আরও কিছু চমৎকার হ্যান্ডি ফিচার পাবেন ওপেনবাংলা কীবোর্ড কীবোর্ডে। ব্যাক্তিগতভাবে, আমি জীবনে কম্পিউটারে যতোভাবে বাংলা লিখেছি তার মধ্য সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছি ওপেনবাংলা কীবোর্ড দিয়ে বাংলা লিখে।

স্মার্টফোনে বাংলা লেখার যতো উপায়

কম্পিউটারে যেমন কীবোর্ড সফটওয়্যার ব্যবহার করে স্বাছন্দ্যে বাংলা লেখা যায় স্মার্টফোনেও তাই। বরং কম্পিউটারের চেয়ে স্মার্টফোনে বাংলা লেখাটাই বরং বেশি সহজ। এখানে বাংলা লেখার জন্য রয়েছে চমৎকার একাধিক কীবোর্ড। তাছাড়া স্মার্টফোনে মুখে বলে বাংলার লেখার পদ্ধতিও এখানে দারুণ সহজ।

অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস এ বাংলা লিখুন

অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোন যেটাই ব্যবহার করুন না কেন, বাংলা লেখার জন্য আপনি রিদমিক কীবোর্ডটি পেয়ে যাবে। চমৎকার সব থিমের সাথে ফোনেটিক, জাতীয় কিংবা প্রভাত লে-আউটে বাংলা লেখা যাবে রিদমিক কীবোর্ড ব্যবহার করে। অভ্র কীবোর্ডের প্রায় সবদিকই পছন্দ করার মতো।

তবে, মুখে বলে বাংলা লেখার বিষয়টি রিদমিক কীবোর্ডে মাঝে মাঝে কাজ করে না। এজন্য গুগল কীবোর্ড বা বাংলা ভয়েস কীবোর্ড ব্যবহার করতে পারেন।

ফিচার ফোনে বাংলা লিখুন

স্মার্টফোনের মতো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা সুবিধা না থাকলেও ফিচার ফোনে বাংলা লেখা যায়। বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায় এমন প্রায় সব ফিচার ফোনেই বাংলা লেখার সুবিধাটি রয়েছে। স্টার কিংবা হ্যাশ বাটন চেপে এসব ফিচার ফোনে বাংলা ইংরেজি ভাষা সুইচ করা যায়।

বাংলা লেখা যায় এমন সব ফিচারফোনেরই বাটনে বাংলা বর্ণমালা দেওয়া থাকে। তাই লিখতে খুব বেশি সমস্যায় পড়বেন না।

ইন্টারনেট এবং অন্যান্য মাধ্যমে বাংলা লেখার যতো উপায়

উপরে আলোচিত কোন পদ্ধতিতেই যদি বাংলা লিখতে না পারেন, তাহলেও কোন সমস্যা নেই। ইন্টারনেট এবং একটি ব্রাউজার থাকলে আপনি অনায়েসেই বাংলা লিখতে পারবেন। ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে। যারা ক্লাউড ভিত্তিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে বাংলা লেখার সুবিধাটি দিয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বাংলাটেক্সট ওয়েবসাইটটির কথা বলা যেতে পারে।

যে কোন ডিভাইস ব্যবহার করেই এই ওয়েবসাইটের সাহায্যে বাংলা লেখা সম্ভব। ফোনেটিক, অভ্র সহ জনপ্রিয় কিছু লে-আউট রয়েছে এখানে বাংলা লেখার জন্য। তাই পছন্দের লে-আউটেও বাংলা লিখতে পারবেন এখানে। বাংলা লেখার পর চাইলে সরাসরি সেটা সার্চ কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিতে পারবেন।

ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলা লেখা যতো উপায় নিয়ে এই ছিলো আমাদের লেখা। ভবিষ্যতে প্রতিটি পদ্ধতি নিয়ে খুঁটিনাটি সহ আরও বিস্তারিত আকারে লেখা আসতে পারে। যাতে করে কোন ডিভাইসেই বাংলা লেখা নিয়ে আপনারা কোন সমস্যায় না পড়েন। লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত, প্রশ্ন বা পরামর্শ জানিয়ে দিন আমাদের কমেন্ট বক্সে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved