কম্পিউটার ছাড়া পৃথিবীর এখন কোন ক্ষেত্র কল্পনা করা যায় কি? গেলেও তা বেশ কষ্টকর। ডিজিটাল তথা কম্পিউটার প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। দৈন্দদিন জীবনের প্রতিটা কাজের পিছনে এখন কোন না কোনভাবে কম্পিউটারের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
কম্পিউটার নিয়ে তাই আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। কম্পিউটার বিষয়ক কয়েকটি সত্য অথচ অবাক করা তথ্য আজকে আমরা জানার চেষ্টা করবো। যেগুলোর মধ্য অনেকগুলো ইতিহাস নির্ভর; তথ্যগুলোর সাথে চেষ্টা করেছি রেফারেন্স যুক্ত করার। লেখার নীল অংশগুলোতে ক্লিক করে চাইলে সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।
চলুন তাহলে এর কথা না বাড়িয়ে ঝটোপট কম্পিউটার সম্পর্কিত ১৫ টি চমকপ্রদ ও সত্য তথ্যগুলো জেনে নিই।
কম্পিউটার বিষয়ক ১৫টি চমকপ্রদ তথ্য

এমআইটির কম্পিউটার শনাক্ত করতে পারে ভুয়া হাসি
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমআইটি এমন একটি কম্পিউটার তৈরী করেছে, যা মানুষের সত্যিকারের হাসি এবং ভুয়া বা মনখারাপের হাসি শনাক্ত করতে পারে। বলে দিতে পারে কোনটি আনন্দের সত্যিকার হাসি, কোনটি দুঃখ জড়ানো নকল হাসি।
খুব শিঘ্রী কম্পিউটার হয়তবা কুকুরের মনপড়তে সক্ষম হবে
স্ক্যান্ডিনাভিয়ান একটি কোম্পানি এধরণের ডিজিটাল ডিভাইস তৈরীর চেষ্টা করছে। ইতিমধ্য এই কম্পিউটারের প্রটোটাইপ সফলভাবে তৈরি করতে পেরেছে দাবি করেছে কোম্পানিটি। কে জানে হয়তবা কিছুদিনের মধ্য কম্পিউটারের সাহায্য পড়া যাবে মানুষ মনও!
পানি চালিত কম্পিউটার!
ঠিকই পড়েছেন! পানি ব্যবহার করে কাজ করত এমন কম্পিউটার তৈরী করেছিলো রাশিয়ার একদল ইঞ্জিনিয়ার। তবে সেটা আজকের আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটার নয়। ১৯৩৬ সালে তৈরিকৃত এই অ্যানালগ কম্পিউটারটি পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়ালের সমীকরণ সমাধান করতে পারত।
প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটারের ওজন ছিলো ২৭ টনেরও বেশি
পারফরমেন্সে এখনকার স্মার্টফোনের চেয়েও পিছিয়ে থাকে আকার, আয়তন কিংবা ওজনে পিছিয়ে ছিলো না পৃথিবীর সর্বপ্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার ENIAC. কম্পিউটারটি স্থাপনের জন্য প্রয়োজন হয়েছিলো ১৮০০ স্কয়ারফুট জায়গা! ১৯৪৫ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে কম্পিউটারটি কম্পিউটারটি কাজ করা শুরু করে।
পৃথিবীর বড় কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের শুরুটা হয় গ্যারেজে
বর্তমান পৃথিবীতে মাইক্রোসফট, এইচপি কিংবা অ্যাপলের মতো কোম্পানির নাম আমরা সবাই জানি। বিশাল আকারের টেকজায়ান্ট এই কোম্পানি তিনটি যাত্রা শুরু করে বাড়ির গ্যারেজ থেকে।
আরও পড়তে পারেনঃ অপারেটিং সিস্টেম কী? অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ
পৃথিবীর প্রায় ৯০% অর্থের অস্তিত্ব কিন্তু শুধুমাত্র কম্পিউটারেই!
এই অর্থ বলতে টাকার কথা বলছি। সারা পৃথিবীতে আপনার সমস্ত টাকার মাত্র ১০% ক্যাশ অর্থাৎ কাগজ বা ধাতব মুদ্রা আকারে রয়েছে। বাকি ৯০ ভাগ অর্থের বাস্তব দুনিয়ার কোন অস্তিত নেই। আছে কম্পিউটারে সংখ্যা হিসেবে! তবে চিন্তার কিছু নেই। অর্থনীতির বিষয়টাই এমন। শুধু আগে যা কাগজে লেখা থাকত এখন তা লেখা থাকে কম্পিউটারের মেমরিতে!
কাঠ দিয়ে বানানো হয়েছিলো প্রথম কম্পিউটারের মাউস
একটু বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে সর্বপ্রথম তৈরী ডিজিটাল কম্পিউটারের মাউসটি ছিলো কাঠের। যুক্তরাস্ট্রের স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অগমেনটেশন রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ডগলাস এঙেলবার্ট ১৯৬৪ সালে এটি তৈরী করেন।
প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার ছিলেন নারী
তথ্য প্রযুক্তি ভালো করে বললে কম্পিউটার প্রযুক্তি ছাড়া বর্তমান পৃথিবী কল্পনা করা কষ্টকর। এই তথ্য প্রযুক্তির পিছনের সবচেয়ে বড় অবদান যাদের তারা হচ্ছেন প্রোগ্রামার। কিন্তু আমাদের অনেকেই জানি না, ইতিহাসের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার ছিলেন একজন নারী। যার নাম অ্যাডা লাভলেস।
ইংল্যান্ডে বসবাস কারী এই নারী পৃথিবীর সর্বপ্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম লেখার জন্য চিরস্মরণীয়। প্রোগ্রামটি অ্যানাইটিকাল ইঞ্জিনের উপর। পেশাগত জীবনে লাভলেস ছিলেন একজন গণিতবিদ এবং লেখক।
৮০% ইমেইলে যখন স্প্যাম ইমেইল
আমেরিকায় প্রতিদিন যতো ইমেইল আদান প্রদান করা হয় তার ৮০% স্প্যামিং ইমেইল। যেগুলো কোন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা বা অন্যান্য ক্ষতিকর উদ্দেশ্য পাঠানো হয়ে থাকে।
আরও পড়তে পারেনঃ মোবাইল ফোন নিয়ে ২০টি চমকপ্রদ তথ্য, আপনার জানা আছে কি?
প্রথম এক গিগাবাইট হার্ডডিস্কের দাম ছিল ৪০ হাজার আমেরিকা ডলার
১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম ১ গিগাবাইট ধারণ ক্ষমতার হার্ডডিস্ক বাজারে আসে। যেটি ছিলো উচ্চ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার মেমরির একটি মাইলফলক। প্রায় ২৫০ কেজি ওজনের এই হার্ডডিস্কটির ঐসময়ে দাম ধরা হয়েছিলো ৪০ হাজার আমেরিকান ডলার বা প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা!

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর কম্পিউটার ভাইরাস MyDoom
২৬ জানুয়ারি, ২০০৪ এ প্রথম শনাক্ত করা হয় ভাইরাসটি। যেটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমকে অ্যাটাক করত। ২০২০ সাল পর্যন্ত এটিই কম্পিউটারের ইতিহাসে সবচেয়ে বিপদজক এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস। যেটি পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৩৮.৫ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ক্ষতিসাধন করেছে।
পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্রের পাসওয়ার্ড যখন ০০০০০০০০
পাসওয়ার্ড নিয়ে বর্তমান সময়ে দুশ্চিন্তা অন্ত নেই। তা ফেসবুকেরই হোক কিংবা স্মার্টফোনের পাসওয়ার্ডই হোক। অনলাইন অফলাইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত উন্নয়নের কাজ চললেও বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৬.৮৫ মিলিয়ন হ্যাকিং এর ঘটনা ঘটে।
কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয়, একটা সময় আমেরিকার পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্রের পাসওয়ার্ড ছিলো ০০০০০০০০, আপনি বিশ্বাস করবেন? বিশ্বাস না করলেও এটি তাদের ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো প্রায় বিশ বছর!
কম্পিউটার বিষয়ক কি চমৎকার তথ্যগুলো আপনার কেমন লাগলো? আপনার জানা কম্পিউটারের এমন কোন তথ্য আছে কি, যা মানুষ সচারাচর জানে না? থাকলে লিখে ফেলুন আমাদের কমেন্ট বক্সে; একই সাথে আজকের লেখা নিয়ে আপনার অনুভূতি, প্রশ্ন এবং মতামতও জানিয়ে দিন। এর কম্পিউটার নিয়ে এই লেখাটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে তা শেয়ার করে নিতে ভুলবেন না।