পৃথিবীর বুকে বসবাস করা সবার কাছে মনে হয় এটা যেন এক সমতলভূমি। কারণ হেঁটে হেঁটে বা যানবাহনে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মানুষ অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণে ইতোমধ্যেই আমরা জেনে গেছি, পৃথিবী আসলে সমতল নয়। পৃথিবী প্রায় গোলাকার (ওপর-নিচে কিছুটা চ্যাপ্টা) এক গ্রহ। পুরো পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন আসলে কীরকম সেটাই তুলে ধরা হয়েছে কেন্দ্রবাংলার আজকের এই লেখায়।
পৃথিবীকে আমরা এখন যে অবস্থায় দেখছি, সৃষ্টির শুরু থেকে কিন্তু পৃথিবী এরকম ছিল না। সৃষ্টির শুরুতে পৃথিবী ছিল এক উত্তপ্ত গ্যাসপিন্ড। ধীরে ধীরে এটি শীতল ও ঘনীভূত হয়ে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। এই শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় অপেক্ষাকৃত ভারী উপাদানগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রে জমা হয়েছে। আর হালকা উপাদানগুলো জমা হয়েছে পৃথিবীর উপরের দিকে বিভিন্ন স্তরে। আমরা বাসকরি মূলত পৃথিবীর উপরিভাগে। অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠে। পাহাড়, নদী, মরুভূমি, বনাঞ্চল, সমুদ্র সবই ভূ-পৃষ্ঠে। বৈচিত্রময় ভূ-পৃষ্ঠের চেয়েও বিচিত্র পৃথিবীর ভেতরের গঠন। চলুন, বিচিত্র সেই জগতেই ঝাঁপ দেওয়া যাক।
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন
পৃথিবীর উপরিভাগ বা ভূ-পৃষ্ঠ হতে এর কেন্দ্র ভাগের ভরকেন্দ্র (Earth Core) পর্যন্ত অংশটিকে তিনটি স্তরে বা মন্ডলে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হল—
১) অশ্বমণ্ডল,
২) গুরুমণ্ডল ও
৩) কেন্দ্রমণ্ডল
নাম তো জানা হলো। চলুন এবার এই তিন স্তর সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানা যাক।

অশ্বমণ্ডল বা ভূত্বক (Earth’s crust)
অশ্বমণ্ডল হল, পৃথিবীর সবচেয়ে উপরের স্তর। এই স্তরের উপরের অংশে শিলা দিয়ে গঠিত যে কঠিন আবরণ দেখি আমরা তাকে বলা হয়, ভূ-ত্বক। ভূ-ত্বকের উপরে অংশটিকে ভূ-পৃষ্ঠ বলা হয়। সেদিক থেকে আমার বসবাস এই ভূ-ত্বক বা অশ্বমণ্ডলে। আগে যেমনটা বলেছিলাম, পাহাড়-পর্বত,মালভূমি, সমভূমি ইত্যাদি সবকিছুই ভূ-ত্বকের অংশ।
ভূ-ত্বকের গড় পুরুত্ব প্রায় ২০ কি. মি.। মহাদেশীয় তলদেশে ভূ-ত্বকের পুরুত্ব গড়ে ৩৫ কি. মি.। আর সমুদ্র তলদেশে ভূ-ত্বকের গড় পুরুত্ব ৫ কি. মি.।
মহাদেশীয় ভূ-ত্বক গঠিত হয়েছে মূলত সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম নিয়ে। এই দুই মৌলের নাম অনুযায়ী এই স্তরকে সিয়াল (Sial) বলা হয়। আর সমুদ্র তলদেশের ভূ-ত্বক গঠিত হয়েছে মূলত সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম নিয়ে। তাই এই স্তরকে বলা হয় সিমা (Sima)।
আরও পড়তে পারেনঃ পৃথিবীর ভূত্বক যেভাবে কেন্দ্রের চেয়ে আড়াই বছরের পুরোনো
ভূ-ত্বকের নিচের দিকে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ে। ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলকে পৃথককারী পাতলা একটি স্তর রয়েছে। একে বলা হয় মহাবিচ্ছেদ স্তর। এই স্তরের আবিষ্কারক – মোহারোভিসিক।
গুরুমণ্ডল (Barysphere)
ভূ-ত্বকের নিচ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮৮৫ কি. মি. পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরটি হলো গুরুমণ্ডল। এটি মূলত ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত হয়েছে। এই স্তরের গঠন উপাদান সমূহের মধ্যে সিলিকা, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, কার্বন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ অন্যতম। গুরুমণ্ডলকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডলঃ এই স্তর প্রায় ৭০০ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত।
খ) নিম্ন গুরুমণ্ডলঃ এই স্তরটি ৭০০ কি. মি. হতে ২ হাজার ৮৮৫ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত।
কেন্দ্রমণ্ডল (Centrosphere)
গুরুমণ্ডলের নিচে থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরটি হল কেন্দ্রমন্ডল। এ স্তরটি প্রায় ৩ হাজার ৪৮৬ কি. মি. পুরু। কেন্দ্রমণ্ডলের প্রধান উপাদান হল লোহা ও নিকেল। তাই এই স্তরকে নিফে (Nife) বলা হয়। পৃথিবীর মোট আয়তনের ১৬ ভাগই দখল করে আছে, কেন্দ্রমণ্ডল।
এই অংশটি পৃথিবীর যেকোনো অংশের তুলনায় উত্তপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে নিচের দিকে গর্ত করে যেতে থাকলে ভূপৃষ্ঠের তুলনায় অভ্যন্তর ভাগে তাপ ও চাপ উভয়ই বাড়তে থাকবে। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত থাকলে তাও জানাতে পারেন কমেন্টের মাধ্যমে। কী ধরনের লেখা কেন্দ্রবাংলায় দেখতে চান, তাও জানাতে পারেন আমাদের।
Pingback: বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি - কেন্দ্রবাংলা