টরেন্ট হচ্ছে অনলাইনে ফাইল শেয়ারিং অন্যতম জনপ্রিয় পদ্ধতি। যদি আপনি একটি টরেন্ট ফাইল তৈরি করে অন্যদের সাথে শেয়ার করেন; তাহলে সেই টরেন্ট ফাইল ব্যবহার করে সরাসরি আপনার কম্পিউটার থেকে; তারা নির্দিষ্ট ফাইল অথবা ফোল্ডারটি ডাউনলোড করতে পারবে। টরেন্ট ফাইল তৈরির উপায় আসলে খুবই সহজ। টরেন্ট ফাইল কীভাবে তৈরী করতে হয় আপনার যদি সেটা জানা না থাকে; তাহলে লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ে ফেলুন। আর্টিকেলটি পড়া শেষে আশা করি, আপনি নিজে খুব সহজেই টরেন্ট ফাইল তৈরী করে ফেলতে পারবেন।

সাধারণত ইমেইল, ক্লাউড স্টোরেজ, বা বিভিন্ন অনলাইন স্টোরেজ ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ফাইল শেয়ার করে থাকি আমরা। ঝামেলাবিহীন এবং সহজে ফাইল শেয়ার করার জন্য এসব সার্ভার বেইজড ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম অত্যান্ত কার্যকর। তাহলে প্রশ্ন আসে, কেন টরেন্ট ব্যবহার করে ফাইল শেয়ার করবো? সাধারণ অবস্থায় টরেন্ট ব্যবহার করে ফাইল শেয়ারের আসলে কোন প্রয়োজন নেই। টরেন্ট ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলেই টরেন্ট ব্যবহার করুন। এজন্য টরেন্টের সুবিধা-অসুবিধাগুলো জেনে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

অনেক বড় ফাইল শেয়ার অনলাইনে অনেকসময় চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। আপলোড করা যেমন সময়সাপেক্ষ তেমনি ঝামেলার। এছাড়া ইমেইলে ফাইল সাইয অনেক বড় হলে এটাচ করা যায় না। একই সমস্যা দেখা যায় অনলাইন স্টোরেজ ওয়েবসাইটের বেলাতেও। নির্দিষ্ট সাইযের চেয়ে বড় ফাইল আপলোড করা যায় না। ক্লাউড স্টোরগুলোতে ফাইল আপলোডের কোন সাইয লিমিট না থাকলে স্টোরেজ লিমিট থাকে। অন্যদিকে আপলোডের সময় কানেকশন চলে গেলে বা কোন সমস্যা হলে পুরো ফাইলটাই আবার শুরু থেকে আপলোড হওয়া শুরু করে।

টরেন্ট ফাইল তৈরির উপায়

আপনি যদি অনেক বড় কোন ফাইল অনেক বেশি মানুষের সাথে শেয়ার করতে চান। এবং ফাইলটিতে যদি খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না থেকে থাকে (লিনাক্স ভিত্তিক বিভিন্ন ওএস যেরকম); এবং উপরের ঝামেলাগুলো যদি পোহাতে না চান তাহলে আপনার ফাইল অথবা ফোল্ডারটি টরেন্টের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন। টরেন্ট ব্যবহার করে কোন কিছু শেয়ার করতে চাইলে আপনাকে কোন সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হবে না। যে কোন ধরণের ফাইল, যে কোন সাইযের ফাইল অনায়াসেই শেয়ার করতে পারবেন টরেন্ট ব্যবহার করে।

বিটটরেন্ট প্রোটকল ব্যবহার করে টরেন্টের মাধ্যমে ফাইল শেয়ার করা হয়। তাই ফাইল আপলোডের কোন ব্যাপার এখানে নেই। কানেকশন থাকলে Seeding তথা অন্যরা আপনার কম্পিউটার থেকে ফাইলটি ডাউনলোড করবে না থাকলে করবে না। এতে ফাইল করাপ্টেড হওয়ার কোন ভয় নেই। সম্পূর্ণ ফাইলটি ডাউনলোড হলেই অন্যরা তা ব্যবহার করতে পারবে। একটি টরেন্ট ফাইল যতবেশি মানুষ ডাউনলোড করে এর ডাউনলোড স্পীড ততই বেশি হয়ে থাকে। তাই স্পীড নিয়ে দুশ্চিন্তা কোন কারণ নেই।

টরেন্ট ফাইল তৈরির উপায়

টরেন্ট ফাইল তৈরির উপায় জানার আগে টরেন্ট ফাইল আসলে কি তা বুঝে নেওয়া ভালো। টরেন্ট ফাইল হচ্ছে, এক ধরণের বিশেষ ফাইল যেখানে টরেন্টের মাধ্যমে শেয়ার কোন ফাইল বা ফোল্ডার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য থাকে। এর এক্সটেনশন, .torrent। এটি যে কোন টরেন্ট-ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করে তৈরী করা যায় এবং ওপেন করার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ফাইলটি ডাউনলোড করা যায়। এটাকে টরেন্টের মাধ্যমে শেয়ার করা মূল ফাইলের ঠিকানা এবং চাবিকাঠি বলা যেতে পারে।
কোন ক্লাউড স্টোরেন্ট বা অনলাইন স্টোরেজ ওয়েবসাইটে ফাইল আপলোড করলে তা ডাউনলোডের জন্য একটি লিংক বা ইউআরএল পাওয়া যায়। যেটা ব্যবহার করে ঐ ফাইল ডাউনলোড করা যায়। টরেন্টের ক্ষেত্রে এই লিংকের কাজই করে টরেন্ট ফাইল।

অফলাইনে যে কোন টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করেই টরেন্ট ফাইল তৈরি করা যায়। আমরা আজকে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটা দেখবো। উইন্ডোজ, লিনাক্স কিংবা ম্যাকওস ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে টরেন্ট ফাইল তৈরি করতে পারবেন। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে টরেন্ট ফাইল তৈরীর উপায়গুলো দেখে নিই।

টরেন্ট ফাইল অফলাইনে তৈরির উপায়ঃ

অফলাইনে টরেন্ট ফাইল তৈরী জন্য আমাদের সবার আগে প্রয়োজন একটি টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যারের। টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যারএর সাহায্য টরেন্ট এর মাধ্যমে কোন ফাইল ডাউনলোড করা যায় এবং টরেন্ট ফাইল তৈরী করা যায়। আপনার কম্পিউটারে যদি আগে থেকেই কোন টরেন্ট-ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকে তাহলে ভালো। না থাকলে নিচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে qBittorrent নামের এই ফ্রী সফটওয়্যারটি ইনস্টল করে নিতে পারেন। আমরা এই সফটওয়্যার ব্যবহার করেই অফলাইনে একটি টরেন্ট ফাইল তৈরী করবো।

qBittorrent
  • টরেন্ট ফাইল তৈরী করতে প্রথমেই একটি টরেন্ট-ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার; (এক্ষেত্রে আমরা qBittorrent ব্যবহার করছি) ওপেন করুন। এবং এর Tools এ ক্লিক করে Torrent Creator এ ক্লিক করুন। অথবা সরাসরি Ctrl+N শর্টকাট কী চাপুন।
  • এবার নতুন একটি উইন্ডো ওপেন হবে qBittorrent এর। এখানে সবার উপরের সেকশন হতে Select file অথবা Select folder বাটনে ক্লিক করে; যে ফাইল বা ফোল্ডারটি শেয়ার করতে চান সেটি সিলেক্ট করে দিন।
  • এর পরের Settings সেকশনে কিছু করার প্রয়োজন নেই। তবে চাইলে পছন্দ মতো সেটিংস টিক দিয়ে নিতে পারেন।
  • তারপর Fields সেকশনে Tracker URLs বক্সটিতে কিছু ট্র্যাকার ইউআরএল দিন; যেগুলো টরেন্ট ফাইলটির সকল ইউজারদের সেতুবন্ধনের মতো কাজ করে থাকে। প্রয়োজনে টরেন্ট ট্র্যাকার লিস্টটি ব্যবহার করতে পারেন।
  • এখন এরপরের ফিল্ডগুলোতে কিছু দেওয়ার প্রয়োজন নেই। Create Torrent বাটনে ক্লিক করুন।
  • নতুন একটি উইন্ডো ওপেন হবে। যেখানে আপনাকে টরেন্ট ফাইলটি সেভ করতে বলবে। Save বাটনে ক্লিক করে ফাইলটি সেভ করে ফেলুন।
অফলাইনে টরেন্ট ফাইল তৈরির উপায় - ১

ব্যাস, আপনি সফলভাবে টরেন্ট ফাইলটি তৈরী করতে পেরেছেন। টরেন্ট ক্রিয়েটর উইন্ডোটি ক্লোজ করে দিন। টরেন্টটি এবার প্রস্তুত। টরেন্ট ফাইলটি যে লোকেশনে সেভ করেছেন; সেখান থেকে নিয়ে এখন যে কারো সাথে শেয়ার করতে পারেন সেটি। যে কেউ এই টরেন্ট ফাইলটি তাদের টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমেই ওপেন করলেই আপনার সিলেক্ট করে দেওয়া ফাইল অথবা ফোল্ডারটি ডাউনলোড করতে পারবেন।

অফলাইনে টরেন্ট ফাইল তৈরির উপায় - ২

বলা বাহুল্য, যেহেতু টরেন্ট ফাইলটি ব্যবহার করে সরাসরি আপনার কম্পিউটার থেকে অন্যরা ফাইলটি ডাউনলোড করবেন; তাই আপনার কম্পিউটারে সেই ফাইল বা ফোল্ডারে লোকেশন চেঞ্জ করা যাবে না বা রিনেম করা যাবে না। একবার লোকেশন চেঞ্জ করলে আপনার কম্পিউটার থেকে আর কেউ ফাইল বা ফোল্ডারটি ডাউনলোড করতে পারবে না।
পাশাপাশি যে ফোল্ডার শেয়ারের ক্ষেত্রে, টরেন্ট ফাইল তৈরির পর ফোল্ডারে নতুন কোন ফাইল রাখলে সেটি ডাউনলোড করতে পারবে অন্যরা। তাই, টরেন্ট ফাইল তৈরির পর সেই ফাইল বা ফোল্ডারে কোন রকম পরিবর্তন না আনাই বুদ্ধিমানের কাজ।

টরেন্ট ফাইল তৈরির উপায় নিয়ে এই ছিলো আজকের আলোচনা। আশাকরি, কোন রকম সমস্যা ছাড়াই আপনি টরেন্ট ফাইল তৈরি করে ফেলতে পারবেন। কোন প্রশ্ন বা লেখায় কোন অসংগতি চোখে পড়লে অবশ্যই দ্বিধাহীনচিত্তে কমেন্ট করে আমাদের জানান। যতোটা পারি খুবই দ্রুতই তার উত্তর দিবো বা সংশোধন করবো ইনশাআল্লাহ। টরেন্ট কী? কীভাবে কাজ করে? টরেন্ট বৈধ না অবৈধ? তা নিয়ে বিস্তারিত পড়ে আসার আমন্ত্রণ রইলো।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved