ইন্টারনেট জগতে টরেন্ট বেশ পরিচিত একটি শব্দ। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় প্রায় সবাই কোন না কোন সময় টরেন্ট ব্যবহার করেছেন বা এর নাম শুনেছেন। যেহেতু বেশিরভাগ সময়ই টরেন্ট ব্যবহার করে মুভি বা কোন মূল্যবান সফটওয়্যার ফ্রীতে ডাউনলোড করা হয়; তাই অনেকের ধারণা হয়ে থাকে টরেন্ট মানেই বুঝি অবৈধ কিছু। আপনারও মনে যদি এমন ধারণা এসে থাকে; তাহলে এখন সময় এসেছে তা পরিষ্কার করে নেবার। এই লেখায় আমরা জানার চেষ্টা করবো মূলত টরেন্ট কী, কিভাবে কাজ করে, টরেন্ট বৈধ না অবৈধ; এমন সব বিষয় নিয়ে নিয়ে বিস্তারিত।

চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করি টরেন্ট কি তা নিয়ে আজকের এই লেখা।

টরেন্ট কী?

এককথায় বললে, টরেন্ট হচ্ছে অনলাইনে একটি ফাইল শেয়ারিং ব্যবস্থা। বিটটরেন্ট প্রোটকল ব্যবহার করে এটি কাজ করে থাকে। বিটটরেন্ট প্রোটকল হচ্ছে, ইন্টারনেটে পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফাইল শেয়ারিং এর একটি কৌশল। ইন্টারনেটে আপনি যাই করেন না কেন তা কোন না কোন ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম কল্যাণেই করতে পারেন। কোন ওয়েবসাইট দেখা, কোনকিছু আপলোড/ডাউনলোড করা, ইমেইল সবকিছুর ফাইল শেয়ারিং সিস্টেমের অবদান। হতে পারে সেটা ক্লায়েন্ট-সার্ভার ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম; হতে পারে ক্লাউড সিস্টেম, হতে পারে টরেন্ট। ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম কি, কীভাবে কাজ করে; সেটা নিয়ে না হয় বিস্তারিত আরকদিন আলোচনা করবো।

what is torrent

আপাতত এতটুকুই জানা যথেষ্ট যে, অন্যান্য ফাইল শেয়ারিং সিস্টেমের মতোই টরেন্টও একটি ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম। যার সাহায্যে কোন ফাইল শেয়ার করতে কোন সার্ভারের প্রয়োজন হয় না। ব্যবহারকারীর কম্পিউটার থেকেই সরাসরি ফাইলটি আপলোড এবং ডাউনলোড হয়। টরেন্টের মাধ্যমে ফাইল শেয়ার করাকে বলা হয় টরেন্টিং।

টরেন্ট কীভাবে কাজ করে?

ইন্টারনেটে সাধারণত কোন ওয়েবসাইট তৈরী করতে চাইলে বা কোন ফাইল শেয়ার করতে চাইলে; সেটাকে কোনটি ওয়েব সার্ভারে রাখতে হয়। ওয়েব সার্ভার মূলত একটি শক্তিশালী, বিপুল পরিমাণ স্টোরেজযুক্ত, ব্যায়নবহুল কম্পিউটার। যার কাজ হচ্ছে, বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ফাইলকে সংরক্ষণ করা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা ইউজারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। পৃথিবীর সব ওয়েবসাইট এবং ইন্টারনেটে বেশিরভাগ ফাইলই তাই কোন না কোন ওয়েব সার্ভারে সংরক্ষিত রয়েছে। ওয়েব সার্ভারের মাধ্যমে ফাইল শেয়ারিং এর এই পদ্ধতিকে বলা হয় ক্লায়েন্ট সার্ভার সিস্টেম।

ক্লায়েন্ট সার্ভারের মতোই টরেন্ট একটি ফাইল শেয়ারিং ব্যবস্থা। পার্থক্য হচ্ছে, ক্লায়েন্ট-সার্ভার সিস্টেমে যেখানে কোন একটি শক্তিশালী কম্পিউটার থেকে ইন্টারনেট ইউজারদের সাথে ফাইল শেয়ার করা হয়। সেখানে টরেন্ট সিস্টেমে যে কোন পার্সোনাল কম্পিউটার থেকেই ইন্টারনেট ইউজারদের সাথে ফাইল শেয়ার করা যায়। এতে প্রয়োজন নেই ব্যায়বহুল শকিশালী কোন ওয়েব সার্ভারের। যে কেউই চাইলে টরেন্ট ফাইল তৈরী করে সরাসরি নিজের কম্পিউটার থেকে অন্যদের ডাউনলোড করার সুযোগ তৈরী করে দিতে পারে। এজন্য অবশ্যই কম্পিউটারটিকে ইন্টারনেটে কানেক্টেড থাকতে হবে। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, টরেন্ট ফাইল কেউ তার কম্পিউটারে ডাউনলোড করলে; স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেখান থেকে আপলোড হওয়া শুরু করবে অন্য ইউজারদের কাছে। যদি না ইউজার ডাউনলোড করার পর তা আপলোড করা বন্ধ করে দেয় অথবা অফলাইন হয়ে যায়।

how does torrent work

উদাহরণ দিলে পুরো ব্যাপারটি আরও ভালো ভাবে বোঝা যাবে। ধরুন, আপনি একটি ফাইল বা ফোল্ডার অন্যদের সাথে শেয়ার করার জন্য টরেন্ট ফাইল তৈরী করলেন। আপনার সেই টরেন্ট ফাইল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ফাইল বা ফোল্ডারটি যখন কেউ ডাউনলোড করবে তখন তা কোন ওয়েব সার্ভার থেকে ডাউনলোড না হয়ে সরাসরি আপনার কম্পিউটার থেকে ডাউনলোড হবে। এজন্য আপনার কম্পিউটারকে অনলাইনে থাকতে হবে অবশ্যই। একবার ফাইলটি একজন ইউজার ডাউনলোড করবে সে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফাইলটি আপলোড করবে বিটটরেন্ট প্রটোকল ব্যবহার করে। ফলে পরবর্তী আরেকজন ফাইলটী ডাউনলোড করলে সেটি ডাউনলোড হবে এবার আপনাদের দুজনের কম্পিউটার থেকেই। যদি কেউ অফলাইনে চলে যায় তাহলে অন্যজনের কম্পিউটার থেকে ডাউনলোড হবে। এভাবে তারপরের আরেকজন ডাউনলোড করতে চাইলে তখন ডাউনলোড হবে তিনটি কম্পিউটার থেকে। এভাবে যতো মানুষ টরেন্টটি ডাউনলোড করবে, তত বেশি কম্পিউটার থেকে ফাইলটি ডাউনলোড হবে। বেড়ে যাবে ডাউনলোডের গতিও।

টরেন্ট বৈধ না অবৈধ?

টরেন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন মুভি কিংবা পাইরেটেড সফটওয়্যার ডাউনলোড করার কারণে, অনেকের মনেই ধারণা আসে টরেন্ট মানেই বুঝি নিষিদ্ধ বা অবৈধ কিছু। যেটা একেবারেই সত্য নয়। টরেন্ট একটি ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম ছাড়া কিছু নয়। তাই, অবৈধ হও্যার কোন সুযোগ নেই এখানে।

বড় বড় ফাইল; যেগুলো মেইলে পাঠানো সম্ভব নয় বা ওয়েব সার্ভারে পাঠানো ব্যায়বহুল, সেগুলো অনায়াসেই পাঠানো যায় টরেন্ট ব্যাবহার করে। অনেক সফটওয়্যার কোম্পানি, এমন কি লিনাক্সের বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন তাদের অপারেটিং সিস্টেমের ISO ফাইল ইউজারদের সাথে শেয়ার করে টরেন্ট ব্যবহার করে।
তাই, টরেন্ট অবৈধ নয়। তবে আপনি যদি কোন মুভি কিংবা পাইরেটেড সফটওয়্যারের মতো কন্টেন্ট শেয়ার করেন তাহলে সেটা অবশ্যই অবৈধ। কারণ এক্ষেত্রে কপিরাইট লঙ্ঘিত হয়। আপনি টরেন্ট, ক্লায়েন্ট-সার্ভার বা ক্লাউড স্টোরেজ যে ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম ব্যবহার করেই এগুলো শেয়ার করেন না কেন, তা অবৈধ এবং বেআইনী। টরেন্ট বৈধ, কিন্তু টরেন্ট ব্যবহার করে কি ফাইল শেয়ার করছেন সেটা বৈধ না অবৈধ প্রশ্নটা এখানে

টরেন্ট কী, কীভাবে কাজ করে, বৈধ না অবৈধ তা নিয়ে আজকের লেখা এই পর্যন্তই। খুব তাড়াতাড়িই টরেন্টের সুবিধা-অসুবিধা, নিরাপদ কিনা, কীভাবে টরেন্ট ব্যবহার করতে হয় তা নিয়ে বিস্তারিত লেখা আসছে ইনশাআল্লাহ্‌। টরেন্ট নিয়ে আপনার কোন প্রশ্ন, মতামত কিংবা লেখা কোন অসংগতি চোখে পড়লে অনুগ্রহ পূর্বক কমেন্টে জানাবেন। কোন বিষয়তে লেখা পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, তা জানাতে পারেন এখানে। টরেন্ট নিয়ে এই লেখাটি ভালো লাগলে ছড়িয়ে দিন আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতজনদের কাছে। প্রযুক্তিকে ভালো কাজে ব্যবহার করি, নিরাপদ ও সুন্দর থাকি।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved