ক্লাউড কী? কোথায় থাকে ক্লাউড? ইন্টারনেট মানেই কি ক্লাউড? এই প্রশ্নগুলো হয়ত অন্য সবার মতো আপনার মনেও জেগেছে। অথবা কোথাও শুনেছেন। কেননা প্রযুক্তির এই সময়ে ক্লাউড কম্পিউটিং শব্দটি বেশ প্রচলিত।

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভে নয় এমন কোথাও ডাটা স্টোর কিংবা ব্যবহার করাকেই ক্লাউড কম্পিউটিং বলা হয়।

জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট পিসি ম্যাগের সংজ্ঞা অনুযায়ী সংক্ষেপে ক্লাউড কম্পিউটিং হচ্ছে, একধরণের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার সার্ভিস যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রদান ও ব্যহার করা হয়।

ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে আপনার যা জানা দরকার

ক্লাউড কম্পিউটিং কী?

ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের পরিচয়

শুরুতেই যে কথাটা বলা দরকার অর্থাৎ ক্লাউড কম্পিউটিং এর মূল বিষয়টি হচ্ছে, এটা আপনার কম্পিউটার হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করবে না। আপনি যখন আপনার কম্পিউটারে ডাটা স্টোর করেন কিংবা কোন প্রোগ্রাম রান করেন, তখন সেটাকে বলা হয়- লোকাল স্টোরেজ বা লোকাল কম্পিউটিং।

যেখানে কম্পিউটার বা সব যন্ত্রপাতি ফিজিক্যালি আপনার হাতের নাগালের মধ্য থাকে। এটা শুধুমাত্র আপনার কম্পিউটার হতে পারে কিংবা একটা বাড়ি বা অফিসের মধ্যকার লোকাল নেটওয়্যার্ক হতে পারে।

কয়েক দশকেরও বেশি সময় ধরে, পারসোনাল কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভের বাইরের ডাটা; বিশেষ করে লোকাল নেটওয়্যার্কিং বা কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করা হচ্ছে সফলভাবে। অনেকে হয়ত এটাকে ক্লাউড কম্পিউটিং এর চেয়ে বেশি কার্যকর বলতে পারেন। সেটা নিয়ে পরে আলোচনা করছি।

কোন বিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক কে ক্লাউড কম্পিউটিং বলার সুযোগ নেই। তাই, আপনার বাড়ি কিংবা অফিসের নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ বা (NAS) ক্লাউডের অন্তর্ভুক্ত নয়। যদিও কিছু NAS ডিভাইস ইন্টারনেটের মাধ্যমে আক্সেস করার ব্যবস্থা রয়েছে। অন্তত ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের “মাই ক্লাউড” এর কথা এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে। তবে, এগুলো শুধু মাত্র পুরো বিষয়কে জটিল করে তোলে বলেই মনে হয়।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে আপনার ডাটা কিংবা কোন প্রোগ্রাম শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যাবে। অন্তত, ক্লাউড কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাটা সিনক্রোনাইজ করার ব্যবস্থা থাকবে।

লোকাল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে আপনি হয়ত জানতে পারেন, কানেকশনের অপর পাশে কী সিস্টেম বা কম্পিউটার রয়েছে। কিন্তু ক্লাউড কম্পিউটিং এর বেলায় একক সাধারণ ইউজার হিসেবে মূল সিস্টেমে কী ধরণের ডাটা প্রসেসিং চলে তা আপনার ধারণারও বাইরে থাকে। বিশাল পরিসরের সেসব ডাটা সেন্টারে যে পরিমাণ পাওয়ার একদিনে ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে হয়ত আপনার পুরো শহর একবছর চলতে পারবে।

আরও পড়তে পারেনঃ ইন্টারনেট নিয়ে ১০টি অবাক তথ্য, আপনার জানা আছে কি?

সবমিলিয়ে ক্লাউড কম্পিউটিং এর মূল বিষয় হচ্ছে, ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থেকে আপনি যেকোন সময় যে কোন জায়গা থেকে আপনার ডাটা এক্সেস এবং সিনক্রোনাইজ করতে পারবেন।

একক ব্যবহারকারী বনাম বিজনেস

একক সাধারণ ইউজার দিক থেকে আমরা ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যাপারটা উপরে জানলাম। একই কথা ছোট কিংবা মাঝারি ব্যবসাক্ষেত্র বা অফিসের ক্ষেত্রেও প্রযেজ্য।

কিন্তু এ প্রসঙ্গে বড় ব্যাবসাক্ষেত্রের কথা আসলে ক্লাউড এর ধারণা কিছুটা পরিবর্তন হয়ে যায়। নামেও আসে পরিবর্তন। উদাহরণ স্বরূপ সফটওয়্যার-অ্যাস-এ-সার্ভিস বা SaaS এর কথা বলা যেতে পারে। যেখানে কোন প্রতিষ্ঠান সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাহায্যে কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে।

আছে প্লাটফরম-অ্যাস-এ সার্ভিস বা PaaS। এতে করে একটি একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরী করে নিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা ব্যবহার করতে পারে। এবং অবশ্যই বলতে হয়, ইনফ্রাস্টাকচার-অ্যাস-এ-সার্ভিস বা IaaS এর কথা।

যেটা মূলত কোন প্রতিষ্ঠানের কাজের অবকাঠামো ভাড়া দেয় অ্যামজন, গুগল, মাইক্রোসফট এর মতো টেক জায়ান্ট কোম্পানি গুলো। এবং এই অবকাঠামো ব্যবহার করে বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের চাহিদা মত কাজ সম্পন্ন করে থাকে।

জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্লাটফরম নেটফ্লিক্সের কথা এখানে বলা যেতে পারে। যারা তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে অ্যামাজনের ক্লাউড সার্ভিস ব্যবহার করে।

ক্লাউড কম্পিউটিং যে বর্তমান সময়ের একটা বিশাল ব্যবসায়িক খাত। স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অ্যামজন এ খাত থেকে একবছরে আয় করেছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার।

চলমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতে অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মকার্ড পরিচালনা করেছে কর্মীদের বাসা থেকে। এতে করে অন্যান্য দিক অর্থনৈতিক ক্ষতি সম্মুখীন হলেও পৃথিবীজুড়ে ক্লাউড ভিত্তিক ব্যবসার প্রসার ছিলো উর্দ্ধমুখী।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর যতো মডেল

পরিচিত কিছু ক্লাউড সার্ভিস

একক ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে লোকাল কম্পিউটিং এবং ক্লাউড কম্পিউটিং মাঝে মাঝে অস্পষ্ট আকার ধারণ করে। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের কম্পিউটার ব্যবহারের প্রায় সবক্ষেত্রেই ক্লাউডের সম্পৃক্ততা।

যেমন, আপনি সহজেই আপনার কম্পিউটারে মাইক্রোসফট অফিস ইনস্টল করে নিতে পারেন। এবং চাইলেই লোকাল কম্পিউটারে ইনস্টল করা মাইক্রোসফট অফিস দিয়ে মাইক্রোসফট ওয়ানড্রাইভে থাকা আপনার প্রয়োজনীয় ফাইল এডিট করতে পারেন।

কিংবা চাইলে শুধুমাত্র ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করে মাইক্রোসফটের ওয়েব বেইজড অফিস অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এবং ওয়ানড্রাইভের ফাইলগুলো এডিট করতে পারেন কিংবা নতুন ফাইল তৈরী করতে পারেন।

এক্ষেত্রে পুরোটা কাজটাই কিন্তু সম্পন্ন হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে। যেখানে আগের উদাহরণে লোকাল এবং ক্লাউড কম্পিউটিং এর ফিউশন করে কাজ সম্পাদিত হয়েছে। বলাবাহুল্য, ওয়েব-বেইজ কথাটিরই আরেক নাম ক্লাউড।

তাই, দেখা যাচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের ব্যবহারের ক্লাউডের একটী নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আরও কয়েকটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার হবে; চলুন, দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত কয়েকটি কমন ক্লাউড সার্ভিস সম্পর্কে জেনে নিই।

গুগল ড্রাইভঃ

নির্ভেজাল ক্লাউড কম্পিউটিং এর উদাহরণ দিতে গেলে গুগলের কথা বলতেই হবে। বিশেষ করে গুগল ড্রাইভের কথা।

ব্যাক্তিগত পর্যায়ে গুগল সব ব্যবহারকারীকেই বিনামূল্য ১৫ গিগাবাইটের মতো ক্লাউড স্টোরেজ দিয়ে থাকে। এবং এই স্টোরেজ ব্যবহার করে আপনি গুগলের প্রায় সকল ক্লাউড সার্ভিস কাজে লাগাতে পারেন।

গুগল ডকস, গুগল শীট, স্লাইড এমনকি জিমেইলের সার্ভিসগুলো পুরোটাই ক্লাউড নির্ভর। যার ফলে আপনি চাইলেই ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন কোন কম্পিউটার থেকে যে কোন সময় যে কোন জায়গায় এসব সেবা ব্যবহার করতে পারেন।

স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের জন্য এসব সার্ভিসের অ্যাপ থাকার কারণে, শুধু কম্পিউটারই নয় স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট বা আইপ্যাড থেকেও সার্ভিসগুলো ব্যবহার করা যায়।

অ্যাপল আইক্লাউডঃ

গুগল ড্রাইভের মতো অ্যাপলের ক্লাউড সার্ভিসের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে, আইক্লাউড। ব্যাবহারকারীদের জন্য অ্যাপলের সবরকম অনলাইন পরিসেবা পরিচালিত হয় আইক্লাউডকে ঘিরে। ইমেইল, কন্টাক্টস, ক্যালেন্ডা বা ডকুমেন্টে সম্পাদনা সবকিছুই সিনক্রোনাইজ হয় এখানে।

আইওএস বা ম্যাকওএস অথবা উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরাও অ্যাপলের আইক্লাউড সেবা নিতে পারেন পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে যে কোন সময়।

ড্রপবক্সঃ

গুগল ড্রাইভ কিংবা আইক্লাউডের মতো ড্রপবক্সের ব্যাপ্তি এতোটা বিশাল নয়। তবে তার জন্য জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে নেই ড্রপবক্স।

সাদামাটা, নির্ভরযোগ্য ফাইল সিনক্রোনাইজ এবং স্টোরেজ সুবিধা দিয়ে ক্লাউড সার্ভিসের জগতে নিজেকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে ড্রপবক্স বিগত কয়েকবছর ধরে।
ব্যাক্তিগত পর্যায়ে চাহিদা কিছুটা কম থাকলেও ব্যবসা ক্ষেত্রে ড্রপবক্স একটি সফল ক্লাউড সার্ভিস।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর উপাদান

এসব ছাড়াও ক্লাউড কম্পিউটিং সেবার কিছু পরিচিত নাম হচ্ছে, বক্স, আইড্রাইভ, পিক্লাউড ইত্যাদি। এসব গুলো সেবাই অনলাইনে ফাইল তৈরি, আপলোড, স্টোর, এডিট এবং লোকাল স্টোরেজের সাথে সিনক্রোনাইজ করার সুবিধা দিয়ে থাকে। সাথে সাথে ইন্টারনেটে সংযুক্ত এমন সকল কম্পিউটার বা স্মার্টফো/ট্যাবলেট থেকে যে কোন সময় যে কোন জায়গা থেকে অ্যাক্সেস করা যায়।

এতোক্ষণের এতো বকবকানিতে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন, ক্লাউড কম্পিউটিং এর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সিনক্রোনাইজেশন। যেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোন জায়গা থেকে যে কোন সময় করা সুযোগ থাকতে হবে।

ক্লাউড কেন্দ্রিক হার্ডওয়্যার

এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, গুগলের ক্রোমবুক। ক্রোমওএস ঠিকভাবে চলার জন্য যতটুকু স্টোরেজ প্রয়োজন ততটুকু লোকাল স্টোরেজই বরাদ্দ থাকত শুরুর দিকের ক্রোমবুকগুলোতে।

ক্রোমবুকের সাহায্য প্রায় যাবতীয় কাজই করতে হয় অনলাইনে। হোক, সেটা মিডিয়া প্লে, ফাইল স্টোরেজ বা অ্যাপ ইন্সটল। এতে করে ল্যাপটপের দাম লক্ষণীয়ভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ল্যাপটোপগুলো দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

যদিও বর্তমানে বেশ কয়েকবছর ধরেই ক্রোমওএস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট করছে, তাই এর লোকাল স্টোরেজও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তবে, ক্রোমবুক এর জনপ্রিয়তা এটা প্রমাণ করেছে যে, ইন্টারনেট সেবা পর্যাপ্ত থাকলে ক্লাউড কেন্দ্রিক হার্ডওয়্যার জনপ্রিয় হতে বাধ্য; কারণ এটা সাশ্রয়ী এবং যে কোন জায়গা থেকে অ্যাক্সেসেবল।

যাইহোক, ক্লাউড নিয়ে আজকের লেখা এ পর্যন্তই। আশা করি, এই লেখা থেকে ক্লাউড কম্পিউটিং কী সে সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। লেখা সম্পর্কে যে কোন প্রশ্ন বা মতামত জানিয়ে দিন আমাদের কমেন্ট বক্সে। সেইসাথে ক্লাউড নিয়ে এই লেখাটী আপনার ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করে নিতে পারেন বন্ধুদের সাথে।


2 Comments

ছবির মাঝে থাকা টেক্সট কপি করার যতো উপায় - কেন্দ্রবাংলা · September 25, 2021 at 3:26 pm

[…] আরও পড়তে পারেনঃ ক্লাউড কম্পিউটিং কী? এ সম্পর্কে আপনার … […]

ওয়ার্ডপ্রেস এবং শপিফাই কী? কেন ব্যবহার করবেন? - কেন্দ্রবাংলা · November 7, 2021 at 12:29 am

[…] আরও পড়তে পারেনঃ ক্লাউড কম্পিউটিং কী? এ সম্পর্কে আপনার … […]

  • Leave a Reply

    Avatar placeholder

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    2023 © KendroBangla | All Rights Reserved