অপারেটিং সিস্টেম মূলত একটি সফটওয়্যার। যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং ব্যবহারকারীর মধ্য তথ্য আদান প্রদানের সুযোগ তৈরী করে দেয়। একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। কম্পিউটারসহ প্রতিটি ডিজিটাল যন্ত্রেই অপারেটিং সিস্টেম থাকে, যেখানে বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালানো হয়। আর এই প্রোগ্রামগুলোর সাহায্য বিভিন্ন কাজ করা হয়।

যতো দামি কিংবা উন্নতমানের কম্পিউটারই হোক না কেন অপারেটিং সিস্টেম ছাড়া তা আসলে জড় বস্তু ছাড়া কিছু নয়। তাই, অপারেটিং সিস্টেম (সংক্ষেপে ওএস) কে কম্পিউটার বা যে কোন ডিজিটাল যন্ত্রের প্রাণ বলা যায়।

অপারেটিং সিস্টেম


কম্পিউটার একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র হওয়ায় এটি শুধুমাত্র বিদ্যুতের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি বুঝতে পারে। যেটাকে কাজে লাগিয়ে তৈরী করা হয়েছে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি। কম্পিউটার মানুষের ভাষা বোঝে না। সেটা হোক ইংরেজি, বাংলা বা যে কোন ভাষা। কম্পিউটার বোঝে ০ আর ১ এর ভাষা। যেটা সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা খুবই কষ্টকর। এখানেই এগিয়ে আসে অপারেটিং সিস্টেম নামক সফটওয়্যার।
এটি একই সাথে কম্পিউটারের ০ আর ১ এর জটিল ভাষাকে আমাদের বোঝার উপযোগী করে উপস্থাপন করে। এবং মানুষের ভাষায় দেওয়া বিভিন্ন নির্দেশ কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে ০ আর ১ এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়। ফলাফল হিসেবে কম্পিউটারের জটিল ভাষা না শিখেও আমরা খুব সহজে বিভিন্ন কাজ করে ফেলতে পারি।

অপারেটিং সিস্টেমে কী কাজ করে?


কোন একটি কম্পিউটার মানেই অনেকগুলো ডিভাইস বা হার্ডওয়্যারের সমষ্টি। তাই কম্পিউটারের প্রসেসর অথবা মাদারবোর্ডের পাশাপাশি এসব ডিভাইসও সমান ভাবে প্রয়োজন পড়ে ব্যবহারকারীর। কীবোর্ড, মাউসের মতো ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস থেকে শুরু করে স্টোরেজ ডিভাইস, স্ক্রিন, ওয়াইফাই কানেক্টর। এইসব প্রতিটি ডিভাইস সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম থাকে। যা “ড্রাইভার” নামে পরিচিত। ঐ ডিভাইস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ সমস্ত ড্রাইভার অপারেটিং সিস্টেমে সরবরাহ করে। ফলে একটি অপারেটিং সিস্টেম সুন্দরভাবে পুরো কম্পিউটারটি আমাদের নির্দেশমতো পরিচালনা করতে পারে।

একটি ওএস এর মধ্য ছোট ছোট আরও অনেক সফটওয়্যার থাকে। যেগুলোর সাহায্যে ফাইল ম্যানেজ বা ডিভাইস কন্ট্রোলের মতো কাজগুলো করা হয়ে থাকে। এছাড়া অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস বা এপিআই যুক্ত থাকে এখানে। যার মাধ্যমে প্রোগ্রামাররা আইডিই বা কম্পেইলার ব্যবহার করে নতুন প্রোগ্রাম তৈরী করে থাকেন। মজার বিষয় হচ্ছে, একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরী করা হয় আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে। কারণ, যে কোন সফটওয়্যার থেকে শুরু করে অপারেটিং সিস্টেম, সবই প্রোগ্রামিং এর ফসল। আর উচ্চতরের প্রোগ্রামিং ভাষা লিখতে হলে অবশ্যই কোন না কোন ওএস ব্যবহার করতে হয়।


ওএস এর ভূমিকা বোঝা আরও একটু সুবিধা হবে যদি একটি বাস্তব উদাহরণ দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। ধরুণ, আপনি কম্পিউটার থেকে একটা লেখা প্রিন্ট করতে চাচ্ছেন। মাইক্রোসফট অফিস সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে আপনি লেখাটি লিখলেন। এবং ঐ সফটওয়্যার ব্যবহার করেই আপনি কম্পিউটারকে প্রিন্ট করতে নির্দেশ দিলেন। এখন কম্পিউটারের ওএস প্রিন্টারকে কাজটি করার জন্য ইন্সট্রাকশন পাঠাবে প্রিন্টারের “ড্রাইভার”এর মাধ্যমে। একই সাথে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড থেকে ডাটা নিয়ে প্রিন্টারকে পাঠাতে থাকবে। আপনার ব্যবহারকৃত সফটওয়্যার কিংবা লেখা প্রিন্টারের বোঝার ক্ষমতার বাইরে। প্রিন্টার বুঝবে শুধু ড্রাইভারের মাধ্যমে দেওয়া ইন্সট্রাকশন। একইভাবে আপনার ব্যবহারকৃত সফটওয়্যারও সরাসরি প্রিন্টারের সাথে যোগাযোগে অক্ষম। অপারেটিং সিস্টেম এই সীমাবদ্ধতার অবসান ঘটায়। তাই সফটওয়্যার হয়েও এর অবস্থান সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারে মাঝখানে।

Operating System Position

অপারেটিং সিস্টেম শুধু কম্পিউটারের জন্যই নয়


আমরা বলি, অপারেটিং সিস্টেম “কম্পিউটার” কে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। এখানে “কম্পিউটার” বলতে শুধুমাত্র ডেস্কটপ বা ল্যাপটপকে বোঝানো হয় না। বরং কম্পিউটার শব্দটি এখানে সকল ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতিনিধিত্ব করে। আপনার হাতে থাকা স্মার্টোফোন কিংবা ফিচারফোন, বাসার স্মার্টটিভি কিংবা গেমিং কনসোল, ওয়াইফাই রাউটার এবং গুগল হোম কিংবা অ্যামাজন ইকোর মতো সব ডিভাইসই এখানে কম্পিউটার। আর এই সব ডিভাইসই চালিত হয় কোন না কোন অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে।

ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপের জন্য যেমন আমাদের পরিচিত ওএস, উইন্ডোজ, লিনাক্স, ম্যাকওস, ক্রোম ওএস কিংবা স্মার্টফোনের অ্যান্ড্রয়েড, সিম্বিয়ান, ব্ল্যাকবেরি, আইওএস এর মতো ওএস রয়েছে। তেমনি ওএস রয়েছে ওয়াইফাই রাউটার বা টিভি রিমোটের মতো ডিভাইসেও। তবে এসব ওএস এর পরিধি খুবই সীমিত। কিছু নির্দিষ্ট কাজের জন্য শুধু মাত্র এখানে ওএস তৈরী করা হয়। কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায় না এতে। এসব ওএসকে ফার্মওয়্যারও বলা হয়ে থাকে অনেকসময়।

একনজরে অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ

  • এটি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্য সংযোগ হিসেবে কাজ করে।
  • প্রতিটি ডিজিটাল যন্ত্রেই ফার্মওয়্যার অথবা অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন হয়। ওএস ছাড়া ডিজিটাল যন্ত্র জড়বস্তু বিশেষ।
  • অপারেটিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে সফটওয়্যার তৈরী করা হয়। তাই একেক ওএস এর জন্য একই সফটওয়্যারের একেক ভার্সন থাকে।
  • ওএস মূলত একটি সফটওয়্যার।

একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আসলে গভীরভাবে বোঝার প্রয়োজন নেই। কোন অপারেটিং সিস্টেমের সাথে কোন হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারগুলো সামাঞ্জস্যপূর্ণ, এতটুকু জানা থাকলেই তা যে কোন কাজের জন্য যথেষ্ঠ হয়। এসব কথা ভেবেই চেষ্টা করেছি ওএস নিয়ে এই লেখাটি সহজ করে লিখতে। এই কাজ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়েছে। তবে এতে করে ওএস কি সে সম্পর্কে ধারণা পেতে কোন অসুবিধা হবে না। ওএস নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে বা লেখাটির কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে কিংবা কোন ত্রুটি চোখে পড়লে অবশ্যই কমেন্টবক্সে আপনার মতামত জানিয়ে দিন।


4 Comments

!nnocent · September 21, 2020 at 10:32 pm

Good !dea.

    কেন্দ্রবাংলা ডেস্ক · September 22, 2020 at 12:27 am

    অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

কতোখানি স্টোরেজ প্রয়োজন আপনার ফোনের জন্য? - কেন্দ্রবাংলা · April 9, 2022 at 7:11 pm

[…] উপর আপনার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ফোনের অপারেটিং সিস্টেম সহ নানা অতি প্রয়োজন ফাইল থাকে এখানে। […]

হাইবারনেট মোড কি কম্পিউটারের জন্য ক্ষতিকর? - কেন্দ্রবাংলা · May 2, 2022 at 6:51 pm

[…] আপারেটিং সিস্টেমের স্লিপ, রিস্টার্ট বা শাটডাউনের মতোই […]

  • Leave a Reply

    Avatar placeholder

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    2023 © KendroBangla | All Rights Reserved