উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ চালানোর জন্য অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এমুলেটর মূলত একধরণের সফটওয়্যার। অনেকটা ভার্চুয়াল বক্সের মতো কাজ করে। অর্থাৎ, আপনার অপারেটিং সিস্টেমের ভিতরেই অন্য আরেকটি অপারেটিং সিস্টেমের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার সুযোগ তৈরী করে দেয়।

তাই, এমুলেটর ব্যবহার করে আপনি আপনার উইন্ডোজ কম্পিউটারেই অ্যান্ড্রয়েডের যাবতীয় অ্যাপ এবং গেমস খেলতে পারবেন।

কয়েকবছর আগেও হাতে গোণা দুইএকটা এমুলেটর থাকলেও বর্তমানে প্রচুর অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর রয়েছে। এর ফলে আমরা যেমন ভালোমানের এবং ভিন্ন ফিচার সমৃদ্ধ এমুলেটর পাচ্ছি। সেরকম কোন এমুলেটরটি একজন ব্যবহারকারীর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে সেটা বের করা কিছুটা মুশকিল হয়ে পড়েছে।

লো এন্ড কম্পিউটারের জন্য সেরা ৫টি অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর

আজকে তাই আমরা চেষ্টা করবো, এতোসব এমুলেটোরের ভীড়ে ৫টি সেরা এমুলেটর নিয়ে কথা বলতে। এর মধ্য থেকে আশাকরি আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে সঠিক এমুলেটরটি বেছে নিতে পারবেন।

সেরা ৫টি অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর

অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটরের জন্য সিস্টেম রিকোয়েরমেন্ট

মূলকথায় যাওয়ার আগে অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর চালানোর জন্য পিসির কনফিগারেশন কেমন হওয়া উচিত সেটা বলে নেওয়া দরকার। সর্বনিম্ন যে কনফিগারেশন থাকলে একটি পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর রান করতে পারবে সেটা হলোঃ

  • অপারেটিং সিস্টেমঃ উইন্ডোজ ৭/ উইন্ডোজ ৮/ উইন্ডোজ ৮.১/উইন্ডোজ ১০
  • প্রসেসরঃ যে কোন ইন্টেল অথবা এএমডি ডুয়েলকোর প্রসেসর
  • মেমরিঃ ২গিগাবাইট র‍্যাম
  • স্টোরেজঃ ৮ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক স্পেস
  • ভিডিওঃ OpenGl 2.0

তবে, ল্যাগ ফ্রী স্মুথলি এমুলেটরটি ব্যবহার করতে চাইলে কিংবা একটু ভারী সাইযের গেম খেলতে চাইলে যেমন কনফিগারেশনের পিসি প্রয়োজনঃ

অপারেটিং সিস্টেমঃ উউইন্ডোজ ১০
প্রসেসরঃ যে কোন ইন্টেল অথবা এএমডি মাল্টি-কোর প্রসেসর যেটা ইন্টেল ভিটি-এক্স অথবা এএমডি-ভি ভার্চুয়ালাইজেশন সাপোর্ট করে।
মেমরিঃ ৮ গিগাবাইট র‍্যাম
স্টোরেজঃ ১৬ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক স্পেস
ভিডিওঃ OpenGl 4.5 বা তার বেশি।

১. MEmu

অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর মেমু

এমইমু বা মেমু (MEmu) আমাদের আজকের তালিকার অন্যতম শক্তিশালী একটি অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর। যারা কম্পিউটারের অ্যান্ড্রয়েড গেম খেলতে চান তাদের জন্য এটা একটা ভালো পছন্দ হতে পারে।

এমুলেটরটি পৃথিবীজুড়ে ২০০টিরও বেশি দেশে মোট ১০০ মিলিয়নবার ডাউনলোড হয়েছে। বুঝতেই পারছেন দারুণ জনপ্রিয় একটি এমুলেটর এটি।

গিকবেঞ্চ ৪ বেঞ্চমার্কে মেমু এমুলেটরটি অন্যান্য সব এমুলেটরের চেয়ে বেশি স্ক্রোর করেছে। যার অর্থ হাই-গ্রাফিক্সের গেমগুলোতে এটা আপনাকে সবচেয়ে সেরা পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম।

প্লে স্টোর ছাড়াও থার্ডপার্টি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা অ্যাপস এবং গেমস চালাতে পারবেন এতে। শুধুমাত্র ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ করে এমুলেটরে APK ফাইলটি ছেড়ে দিলেই হবে।

মেমুতে কী ম্যাপিং ফিচারটিও রয়েছে। যার ফলে যে কোন টাচস্ক্রিনের গেম বা অ্যাপ অনায়াসেই কীবোর্ডের সাহায্য ব্যবহার করতে পারবেন।

২. NoxPlayer

nox player

অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর গুলোর মধ্য আরেকটি জনপ্রিয় এমুলেটর হচ্ছে নক্সপ্লেয়ার (NoxPlayer)। ১৫০ টিরও বেশি দেশে নক্সপ্লেয়ার ডাউনলোড হয়েছে মোট ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটিরও বেশিবার।

উইন্ডোজের পাশাপাশি ম্যাকওএস-এ ইন্সটল করার সুযোগ রয়েছে এটি। যার ফলে ম্যাকওএস ব্যবহাকারীরাও এই এমুলেটরটির মাধ্যমে তাদের কম্পিউটারে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস এবং গেমস চালাতে পারবেন।

স্মুথ এবং স্ট্যাবলভাবে গেম খেলার জন্য বিশেষভাবে অপটিমাইজ করা হয়েছে নক্সপ্লেয়ার। এছাড়া এতেও থাকছে কী-ম্যাপিং ফিচার।

নক্সপ্লেয়ার এমুলেটরটি অ্যান্ড্রয়েড ৭ বা নোগাট ভার্সনের উপর ভিত্তি করে বানানো। তবে, আশা করা এতে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না আপনাকে। বর্তমানে প্লে স্টোরে থাকা সব অ্যাপ্লিকেশনই অ্যান্ড্রয়েড ৭ সমর্থন করে।

৩. BlueStacks

bluestack

একসময় অ্যান্ড্রয়েন্ড এমুলেটর বলতে সবাই একনামে চিনতো ব্লুস্ট্যাক-কে। সবচেয়ে পুরাতন এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় এই এমুলেটরটি ১০ বছর ধরে সার্ভিস দিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপি ডাউনলোড হয়েছে ৪০০ মিলিয়নেরও বেশিবার।

উইন্ডোজ এবং ম্যাকওএস দুইটা অপারেটিং সিস্টেমেই ব্যবহার করা যাবে ব্লু-স্ট্যাক। কী-ম্যাপিং ফিচার সমৃদ্ধ এই এমুলেটরে আমি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার সময় বা গেম খেলার সময় চাইলে স্ক্রিনশটও নিতে পারবেন।

ব্লু-স্ট্যাকের আরেকটা চমৎকার ফিচার হচ্ছে, এতে যে কোন অ্যাপ বা গেমকে আপনার নিজস্ব ভাষায় অনুবাদ করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।

৪. LDPlayer

অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর এলডিপ্লেয়ার

এমুলেটর পরিবারে এলডিপ্লেয়ার(LDPlayer) কিছুটা নতুন সদেস্য। ২০১৬ সালে প্রথম বাজারে আসে এটি। তবে, বয়স অল্প হলেও জনপ্রিয় এমুলেটরের তালিকায় নিজেকে শক্ত আসনে বসিয়েছে এলডিপ্লেয়ার। ২০০ টিরও বেশি দেশে এখন পর্যন্ত এলডি-প্লেয়ার ডাউনলোড হয়েছে ১০ কোটিরও বেশিবার।

পূর্বে উল্লেখিত এমুলেটরগুলোর মতোই এলডি প্লেয়ার সাপোর্ট করে কী-ম্যাপিং। অনেক জনপ্রিয় হাই-গ্রাফিক্স গেমের জন্য বিশেষভাবে অপটিমাইজ করা এই এমুলেটরটিতে হাই-এফপিএসে গেম খেলার সুবিধা রয়েছে।

তবে, এলডিপ্লেয়ার তাদের ফ্রী ভার্সনে বিজ্ঞাপন দেখিইয়ে থাকে। বিজ্ঞাপন বিরক্তিকর লাগলে তাদের প্রিমিয়াম ভার্সনটি কিনে নিতে পারেন।

৫. GameLoop

অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটর গেমলুপ

নাম শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন গেমের জন্য বিশেষভাবে তৈরী এই এমুলেটরটি। হ্যাঁ, জনপ্রিয় সফটওয়্যার এবং গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট (Tencent) এই গেমিং এমুলেটরটি তৈরী করেছে।

এখন পর্যন্ত ৫০০ মিলিয়নেরও বেশিবার ডাউনলোড হওয়া এই এমুলেটরটিকে কোম্পানীটি সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া এমুলেটর বলে দাবী করছে। টেনসেন্ট কিংবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের হাই-গ্রাফিক্সের গেম চালানোর জন্য আদর্শ হতে পারে এই এমুলেটরটি।

২০০ টিরও বেশি গেমসের জন্য অপটিমাইজ করা গেমলুপ এমুলেটরে অনায়াসেই হাই এফপিএসে চালানো যাবে জনপ্রিইয় সব গেম।

তবে, গেমলুপে গুগল প্লে স্টোর আগে থেকে ইন্সটল করা থাকে না। কোন গেম কিংবা অ্যাপস এতে ব্যবহার করতে হলে থার্ড-পার্টি কোন ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে আপনাকে। অথবা শুধু গুগল প্লে স্টোর ইনস্টল করে নিয়েও সেখান থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

লো-এন্ড পিসির জন্য সেরা ৫টি অ্যান্ড্রয়েড এমুলেটোর নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের লেখা। এমুলেটর শুধু যে অ্যাপ বা গেমস চালানোর জন্যই ব্যবহার করা হয় এমন নয়। অ্যাপ বা গেম টেস্টিংএর জন্যও এমুলেটর ব্যবহার করা যায়। সেটা নিয়ে নাহয় অন্য একটা লেখায় আলোচনা করা যাবে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved