ব্লুটুথ নামটি এলো যেভাবে

ব্লুটুথ কথাটা শুনলে আপনার মনে সবার আগে কী ভেসে ওঠে? নীল রঙের কোন দাঁতের ছবি? নিশ্চয়ই না। মোবাইলের ফাংশন ভালো করে বললে ফাইল বা ডাটা ট্রান্সফারের একটা মাধ্যম হিসেবে ব্লুটুথ এতোটা বহুল ব্যবহৃত আর পরিচিত যে, শব্দটার সাথে দাঁতের চিন্তা মাথায় আসার কোন কারণ নেই।

বর্তমানে মোবাইল ফোন বা ডিভাইসগুলো অনেক ফিচার সমৃদ্ধ, দ্রুতগতির আর স্মার্ট হয়েছে। যোগাযোগের জন্য মাত্র এক দশকেই মোবাইল নেটওয়ার্কে এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। সাদামাটা ২জি থেকে এখন পৃথিবীর মানুষ হাটছে ৬জি এর দিকে। এছাড়া কানেক্টিভিটির জন্য রয়েছে ওয়াইফাই। এই সবকিছুর পরেও ব্লুটুথের আবেদন কিন্তু কমেনি একটুও। বরং বেড়েছেই বলা যায়।

এর কারণও আছে। গতিতে পিছিয়ে থাকলেও ব্লুটুথ একদিকে যেমন কম শক্তি খরচ করে, তেমনি স্বল্প পরিসরে নিরবিচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি তৈরীতে এর জুড়ি নেই। তাই, একসময় শুধু ফাইল ট্রান্সফারের এই ফিচারটি ব্যবহৃত হলেও এখন বিভিন্ন ডিভাইস এবং হার্ডওয়্যার কানেক্ট করার জন্য এটা ব্যবহৃত হচ্ছে।

যাইহোক, আজকের লেখা অবশ্য ব্লুটুথ কীভাবে কাজ করে বা এর কাজের ক্ষেত্র নিয়ে নয়। এর নাম কেন ব্লুটুথ হলো সেটাই বরং আজকে জানার চেষ্টা করবো। দাঁতের সাথে কি আদৌ কোন সম্পর্ক আছে? নাকি আবিষ্কারকের আদ্ভুত খেয়ালে এই নাম? চলুন মূল লেখায় প্রবেশ করি।

ব্লুটুথ নামের ইতিহাস ও প্রযুক্তির নামকরণ

ব্লুটুথ নাম কীভাবে এলো সেটা জানার জন্য আগে আমাদেরকে প্রায় হাজার বছর পূর্বের ইউরোপে যেতে হবে। সে সময় রাজা হ্যারাল্ড গোর্মসন ডেনমার্কের শাসনকর্তা ছিলেন। রাজা গোর্মসন ইতিহাসে দুইটা কারণে সুপরিচিত হয়ে আছে।

প্রথমত, তিনি যুদ্ধ বা বলপ্রয়োগ ছাড়াই ডেনমার্কের উপজাতিদের একত্রিত করেছিলো। কোথাও বলা হয় তিনি ডেনমার্কের সাথে নরওয়েকেও একত্রিত করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, তার একটি মৃতদাঁত ছিলো। যেটার ধূসর/গাঢ় নীল রঙের ছিলো। ফলে তাঁকে রাজা হ্যারাল্ড “ব্লুটুথ” গোর্মসন নামেও ডাকা হতো।

আরও পড়তে পারেনঃ চাঁদ সম্পর্কিত ১০টি ফ্যাক্ট, যা আপনাকে অবাক করবে!

যাইহোক, ১৯৯৬ সালে নোকিয়া ইন্টেল এবং এরিকসন কোম্পানি স্বল্প দূরত্বে ডাটা ট্রান্সফারের জন্য তারবিহীন একটি সার্বজনীন প্রযুক্তি তৈরীতে সম্মত হয়। তাদের সেই মিটিং এ ইন্টেল কর্মরত জিম কারদাচ, প্রযুক্তিটির নাম “ব্লুটুথ”-রাখার প্রস্তাব করেন।

পরবর্তীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কারদাচ বলেন, রাজা হ্যারাল্ড “ব্লুটুথ” গোর্মসন যেভাবে ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং সুইডেনকে এক সুতোয় বেঁধে স্ক্যন্ডিনাভিয়া প্রতিষ্ঠা করেছিলো; তেমনি ভাবে ব্রুটুথও কম্পিউটার ফোনের মধ্য সংযোগ ঘটিয়ে একত্রিত করবে। এমন চিন্তা থেকেই তিনি তাৎক্ষনিক ভাবে ব্লুটুথ নামটি প্রস্তাব করেন।

বলা বাহুল্য, মিটিং উপস্থিত সবারই সেদিন নামটি পছন্দ হয়ে যায়। এবং সাময়িক ভাবে সেটাই প্রযুক্তিটির নাম রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কর্তাব্যক্তিরা চিন্তা করেছিলেন, এর থেকে আরও ভালো নাম পাওয়া গেলে সেটাই মার্কেটিং এর সময় ব্যবহার করা হবে।

কিন্তু এর পরের ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। উপযুক্ত নাম না পাওয়ায় ব্লুটুথই এখন আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিটির নাম।

শেয়ার করে নিনঃ

Leave a Reply