রাতের আকাশে মাথার উপরে আলোর কণা। কী সেসব জিনিস, কী আছে সেখানে, কেনই বা আছে এসব নিয়ে মানুষের কৌতুহল আজন্ম। মানুষ প্রাচীনযুগ থেকে মহাকাশের এসব রহস্য জানার চেষ্টা করছে। ডার্কম্যাটার বা ব্ল্যাকহোলের মতো অনেক বিষয়ই রয়ে গেছে এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

তবে, অনেক কিছু জানতেও পেরেছে মানুষ গতো কয়েক শতাব্দীতে। চমকপ্রদ সে সব তথ্য সব মানুষকেই অবাক করে। বিজ্ঞান সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেয়।

অনেক সময় বিজ্ঞান বিষয়ক কোন লেখা পড়তে গিয়ে অনেকে বুঝতে পারেন না। এর কারণ বিজ্ঞানের সব ধারণা বা কথা আমরা অনেক সময় পরিষ্কারভাবে বুঝি না। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা যেহেতু খুব বেশি পরিসরে হয় না, তাই এসব পরিষ্কার করে নেবার সুযোগও অনেক সময় থাকে না।

আর এ কারণেই আমরা মাঝে মাঝেই বিজ্ঞানের বেসিক বিষয়গুলো সহজভাষায় আলোচনা করার চেষ্টা করবো। এগুলোর মধ্য অবশ্যই পুরো বিষয়গুলো সবসময় পরিষ্কার করা সম্ভব হবে না। আমাদের উদ্দেশ্যও সেটা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার একটা ধারণা দেওয়া এবং বিজ্ঞান চর্চায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলা।

আজকের লেখায় আমরা মহাকাশে তিনটি বিষয় নিয়ে কথা বলবো। নিউট্রন স্টার, ডার্কম্যাটার এবং ব্ল্যাকহোল কি সে ব্যাপারে কিছুটা বেসিক ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করবো। বিষয়গুলো আপনার কাছে যদি একটুখানিও বোধগম্য হয় তাহলে আমাদের এই প্রচেষ্টা সফল হবে।

নিউট্রন স্টার ডার্কম্যাটার আর ব্ল্যাকহোল

নিউট্রন স্টার

সূর্যের চেয়ে ১.১ থেকে ২.১৬ গুণ বেশি ভরের নক্ষত্রগুলো অন্তিম অবস্থায় নিউট্রন স্টারের পরিণত হয়। ব্লাকহোল, প্রস্তাবিত হোয়াইটহোল, কোয়ার্ক নক্ষত্রগুলো বাদে নিউট্রন স্টারই মহাকাশের সবচেয়ে বেশি ঘনত্বের বস্তু। মাত্র ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটি নিউট্রন নক্ষত্র প্রায় সূর্যের চেয়ে ১.৮ গুণ বেশি ভরের হয়ে থাকে।

নিউট্রন স্টার আসলে একটা অতিকায় নক্ষত্রের সুপারনোভা বিস্ফোরণ এবং প্রচন্ড মহাকর্ষ শক্তির ফল। যেটা পদার্থের শুধুমাত্র নিউট্রনগুলোকে একত্রিত করে ফেলে। তবে, নিউট্রন স্টার সম্পূর্ণভাবে তড়িৎ নিরপেক্ষ। কারণ এতে নিউট্রন ছাড়া অন্য কোন কণা থাকে না।

নিউট্রন স্টারের কোরের ঘনত্ব এতোটাই বেশি যে, এক চা চামচ নিউট্রন স্টারের ওজন হবে ৫৫০০ কেজি! নিউট্রন স্টার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এখান থেকে।

ডার্কম্যাটার

মহাবিশ্বের সমস্ত ভরের প্রায় ৮০%ই বিজ্ঞানীদের নিকট অজানা। এই ভরের আধারকেই বলা হয় ডার্ক ম্যাটার। আমরা ডার্ক ম্যাটার দেখতে পাই না। কারণ বিজ্ঞানীদের ধারণা, ডার্কম্যাটার আমাদের চেনাজানা কোন আলো তরঙ্গ বা শক্তি নিঃসরণ করে না।

এখানে একটা প্রশ্ন আসে, যা দেখতে পাই না, তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কে এতোটা নিশ্চিত হলাম কী করে? আসলে, আমরা একটি গ্যালাক্সি যতটুকু দেখতে পারি তা থেকে আমরা সেই গ্যালাক্সির ভর বের করে ফেলতে পারি। এখন বিজ্ঞানীরা, একটি গ্যালাক্সির ভর বের করে, সেটার সাথে অন্য গ্যালাক্সিরগুলো সরে যাওয়ার হার পর্যবেক্ষণ করেন।

আরও পড়তে পারেনঃ পেরিস্কোপ : একটি সাধারণ কিন্তু বিস্ময়কর আবিষ্কার

এবং বুঝতে পারেন যে, আমরা যে গ্যালাক্সির ভর পরিমাপ করেছি তাতে এতো দ্রুত সরে যাওয়া সম্ভব নয়। এতো দ্রুত সরে যেতে হলে যে ভর প্রয়োজন সেটা আমাদের পরিমাপ করা ভরের চেয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি। যেহেতু এই ভরটা গ্যালাক্সিতেই আছে এবং আমরা সেটাকে পরিমাপ করতে পারি না বা দেখতে পারি না তাই এই ভরের আধারকেই বলা হয় ডার্কম্যাটার বা গুপ্তবস্তু।

ডার্কম্যাটার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এখান থেকে।

ব্ল্যাকহোল

ব্ল্যাকহোল মহাকাশের কোন বস্তু নয়। এটা মহাকাশের অস্তিত্ব এবং প্রকৃতি সম্পর্কিত একটি ধারণা। ব্ল্যাকহোলকে মহাকাশের স্থান হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। খুব ক্ষুদ্র পরিসরে যদি অচিন্তনীয় পরিমাণ ভর জমা হয়, তবে সেটা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়।।

সূর্যের তুলনায় একটি নক্ষত্রের ভর ৩.২ গুন বেশি হলে সাধারণত সেই নক্ষত্রটি জীবন শেষে ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়। তবে, ব্ল্যাকহোল হওয়ার জন্য ভরই একমাত্র শর্ত নয়। এর সাথে ব্যাসার্ধেরও সম্পর্ক আছে।

কোন বস্তুকে যদি খুবই ক্ষুদ্র ব্যাসার্ধের একটা জায়গায় সংকুচিত করে ফেলা যায়, তাহলে সেখান অকল্পনীয় পরিমাণ ভর জমা হবে। এই জায়গাটিকে বলা হয় সিঙ্গুলারিটি। এখানে মহাকর্ষ বলের প্রভাব এতোটাই বেশি হয় যে, পদার্থের অন্য সমস্ত ধর্ম হারিয়ে যায়।

শুধু তাই নয়, এর চারপাশের একটি নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে কোনকিছুই স্বাধীনভাবে অবস্থান করতে পারে না। এই এলাকার মধ্য কোন কিছু চলে সেটাও আর ফেরত আসতে পারে না। এমন কি তড়িৎচৌম্বক বিকিরণও ব্ল্যাকহোলের আকর্ষণ উপেক্ষা করে চলে আসতে পারে না। ফলে, পুরো এলাকাটাই অন্ধকার দেখায়। নামটাও একারণে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর।

ডার্কম্যাটারের মতো ব্ল্যাকহোলও আমরা সরাসরি দেখতে পারি না। তবে, ব্ল্যাকহোলের চারপাশের অ্যাক্রিয়েশন ডিস্ক, বিকিরণ এসব দেখে আমরা বুঝতে পারি, ঠিক কোথায় ব্ল্যাকহোলটা রয়েছে। ডার্ক ম্যাটারের ক্ষেত্রে যেটা এখনও আমরা বুঝতে পারি না। ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন এখান থেকে।

মানুষের তোলা ব্ল্যাকহোলের প্রথম ছবি

নিউট্রন স্টার, ডার্কম্যাটার আর ব্ল্যাকহোল নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়ার প্রচেষ্টা। কেমন লাগলো, কোন প্রশ্ন থাকলে সেটা সহ আমাদের জানাবেন মন্তব্যের ঘরে। ভবিষ্যতে এ ধরণের কোন কোন টপিক নিয়ে জানতে চান সেটা কিন্তু আমাদের জানিয়ে দিতে পারেন ফেসবুকে অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved