তথ্য প্রযুক্তির এই সময়টা ওয়েব ব্রাউজার ছাড়া কল্পনা করা কঠিন। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন তথ্য হাতে পাওয়ার জন্য এই টুলসটি কমবেশি আমরা সবাই ব্যবহার করি। ইন্টারনেটকে যদি একটি লাইব্রেরীর সাথে তুলনা করি, ওয়েব ব্রাউজার হলো সেই লাইব্রেরীর প্রবেশদ্বার।
ওয়েব ব্রাউজার আসলে কী জিনিস, কীভাবে কাজ করে সেসব নিয়ে সংক্ষেপে আজকে জানার চেষ্টা করবো আমরা। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় প্রবেশ করি।
ওয়েব ব্রাউজার কী?
ওয়েব ব্রাউজার হলো এক ধরণের সফটওয়্যার, যার সাহায্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোন ওয়েবসাইট দেখা যায়, বিভিন্ন ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা যায় এবং ডিজিটাল ফাইল ট্রান্সফার করা যায়।
একটি ওয়েব ব্রাউজার আসলে আপনার হয়ে কোন ওয়েবসার্ভারের সাথে যোগাযোগ করে এবং প্রয়োজন অনুসারে সেখান থেকে তথ্য নিয়ে আপনার সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে।
মেরিয়াম-ওয়েবস্টের ডিকশনারির সংজ্ঞা অনুযায়ী, ওয়েব ব্রাউজার হচ্ছে এমন ধরণের কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মতো নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বা তথ্যের অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ব্রাউজার কীভাবে কাজ করে?
ইন্টারনেটের বিভিন্ন তথ্য যে জায়গাগুলোতে সংরক্ষণ করা থাকে সেগুলোকে বলা হয় ওয়েব সার্ভার। ওয়েবসার্ভারে ওয়েবসাইট বা পেজগুলো সাধারণত এইচটিএমএল বা অন্য কোন কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজে লেখা থাকে। যেগুলো সাধারণ মানুষের নিকট অনেকটাই দুর্বোধ্য। ব্রাউজার এসব ল্যাঙ্গুয়েজকে মানুষে ভাষায় রূপান্তরিত করে উপস্থাপন করে।
আপনি যখন একটি ওয়েব ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে কোন একটি ইউআরএল অর্থাৎ ওয়েবঅ্যাড্রেস লেখেন, তখন ব্রাউজার ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওয়েবসার্ভারকে ঐ ওয়েবপেজটি দেখানোর জন্য অনুরোধ পাঠায়। তাৎক্ষনিকভাবে ওয়েবসার্ভার সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে ঐ ওয়েবপেজের কোডগুলো ব্রাউজারে পাঠিয়ে দেয়। ব্রাউজার এবার সেই কোডগুলো মানুষের ভাষায় রূপান্তরিত করে আপনার সামনে ওয়েবপেজ আকারে উপস্থাপন করে।

ব্রাউজার ওয়েবসার্ভার থেকে পাওয়া কোডগুলোকে কীভাবে রূপান্তিত করবে সে নির্দেশনাও থাকে ঐ কোডের মধ্যই। ওয়েব ডেভেলপাররা কোডগুলো লিখে লিখে থাকেন। অনেকটা অনুবাদকের ভূমিকা পালন করে ব্রাউজার। ব্রাউজার নিজে থেকে যেমন কোন কোডে অ্যাক্সেস করতে পারে না, তেমনি নিজের মতো করে কোডকে অনুবাদও করতে পারে না।
একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা বোধগম্য হবে। ধরুন, আপনি ব্রাউজারের অ্যাড্রেসবারে কেন্দ্রবাংলার ইউআরএল বা ওয়েব অ্যাড্রেস www.kendrobangla.com লিখলেন। যেটা মূলত একটি ডোমেইন। ডোমেইন কী এবং কীভাবে কাজ করে সেটা আজকের আলোচ্য বিষয় নয়।
যাইহোক, এখন ব্রাউজার ওয়েবঅ্যাড্রেস থেকে কেন্দ্রবাংলা ওয়েবপেজটি যে সার্ভারে আছে সেখান এর কোডগুলো পাওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাবে এবং সার্ভার থেকে সেই কোডগুলো ব্রাউজারে পাঠিয়ে দেবে।
এবার ব্রাউজার কোডগুলো আপনার ভাষায় অনুবাদ করে ওয়েবপেজটি দেখাবে। আপনি চাইলে ওয়েবপেজের পাশাপাশি এর কোডগুলোও দেখতে পারবেন। এজন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে। সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ওয়েবপেজটি আসার পর কীবোর্ডের F12 বাটনে চাপ দেওয়া। তাছাড়া, মাউসের বাম পাশের বাটনে ক্লিক করে View page source বা Inspect লেখাটিতে ক্লিক করেও দেখতে পারবেন।
শুধু অ্যাড্রেসবারে অ্যাড্রেস লেখার মাধ্যমেই ব্রাউজারে ওয়েবপেজ দেখা যায়, সেরকম নয়। আপনি যখন ওয়েবপেজে থাকে কোন লিংক বা বাটনে ক্লিক করেন তখনও একইভাবে ওয়েব ব্রাউজার সার্ভারে ঐ লিংকের ওয়েবসার্ভারে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে নির্দিষ্ট পেজটি আপনার সামনে এনে উপস্থাপন করে।
বর্তমান সময়ের ওয়েব ব্রাউজারগুলো ওয়েবপেজ দেখানো ছাড়াও নানা রকম কাজ করতে পারে। পিডিএফ বা বিভিন্ন মিডিয়া ফাইলও ওপেন করতে পারে। যাইহোক, এই লেখায় সংক্ষিপ্তভাবে আমরা ওয়েব ব্রাউজার সম্পর্কে বেসিক জানার চেষ্টা করলাম। পরবর্তীতে এনিয়ে বিস্তারিত লেখা পড়তে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইট অথবা ফেসবুক পেইজে।