পৃথিবীতে আপেল পছন্দ করেন না, এমন মানুষ পাওয়া সম্ভবত কঠিন। দেখতে আকর্ষণীয়, কচকচে রসালো মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি ছোটবড় সকলেরই পছন্দের তালিকায় থাকে।
ধারণা করা হয়, ৩২৮ খ্রিষ্ট্রপূর্বাব্দে কাজাখাস্তানে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট প্রথম আপেল আবিষ্কার করেন। সেই হিসেবে প্রায় দুইহাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর মানুষ আপেলে স্বাদ নিয়ে আসছে।
পৃথিবীজুড়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজারেরও বেশি প্রজাতি আপেল রয়েছে। দারুন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই সুস্বাদু ফলটি। তবে আলোর অন্যপাশে যেমন আঁধার থাকে, তেমনি আপেলেরও ফল অংশটুকু পুষ্টিকর হলেও এর বীজ কিন্তু তেমনটি নয়।
আপেলের বীজ যেভাবে বিষাক্ত
আপেলের বীজ এর বিষক্রিয়া বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এতে থাকে অ্যামিগডালিন নামের একধরণের যৌগ থাকে। যেটা মানব শরীরে বিষক্রিয়া ঘটানোর জন্য দায়ী।

অ্যামিগডালিন মূলত বীজের একধরণের প্রতিরক্ষা মূলক রাসায়নিক। বীজ যখন অক্ষত থাকে তখন এই যৌগ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। কিন্তু যখন বীজ চাবানো কিংবা গুড়ো করা হয় তখন এটা উপযুক্ত পরিবেশে হাইড্রোজেন সায়ানাইডে রূপান্তরিত হতে পারে। যেটা মারাত্মক বিষাক্র একটি যৌগ। উচ্চমাত্রায় গ্রহণ করলে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠে।
আরও পড়তে পারেনঃ বিভিন্ন ফল বা সবজির সাথে কেন কলা রাখা উচিত না?
সাধারণত রোসাসি পরিবারের সব ফলের বীজে উচ্চ পরিমাণে অ্যামিগডালিন থাকে। আপেল সহ এপ্রিকট, পীচ, চেরি, ইত্যাদি ফল এই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। যার অর্থ এই ফলগুলোর বীজ বিষক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম।
অন্যদিকে হাইড্রোজেন সায়ানায়েড বিষ হিসেবে ব্যবহার বহুদিন আগে থেকে প্রচলন আছে। এটা মূলত কোষের অক্সিজেন সাপ্লাইকে বাধাগ্রস্থ করে। উচ্চমাত্রায় এই বিষ মানুষের রক্তে প্রবেশ করলে মিনিটের মাঝে মৃত্যু ঘটায়।
কতোটুকু আপেলের বীজ মৃত্যু ঘটাতে পারে?
এখন মূল প্রশ্নের উত্তরে আসি। আপেল এর বীজ আসলে কতোটুকু বিষাক্ত? কতোটুকু খেলে জীবন সংশয় হয়ে পড়ে?
আসলে দুই একটা আপেলের বীজ যদি আপনি ভুল করে খেয়ে ফেলেন, তাতে খুব বেশি সমস্যা নেই। কিন্তু মাত্রাটা যদি বেশি হয় এবং বীজ ভাঙা অবস্থায় থাকে তাহলে সেটা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
২০১৫ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী ১ গ্রাম আপেলের বীজে প্রজাতি ভেদে ১-৪ মিলিগ্রাম অ্যামিগডালিন থাকে। এ থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেন সায়ানায়েডের পরিমাণ আরও কিছুটা কম। মানুষের জন্য হাইড্রোজেন সায়ানায়েডের বিপদজনক মাত্রা ৫০-৩০০ মিলিগ্রাম।
প্রতি ১ গ্রাম আপেলের বীজ প্রায় ০.৬ মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন সায়ানায়েড উৎপন্ন করতে পারে। সেই হিসেবে ৮৩-৫০০টি আপেলের বীজ খেয়ে ফেললে তখন তা মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠবে।
শেষকথাঃ
তাহলে কী ৮০টার নিচে আপেলের বীজ নিশ্চিন্তে খাবেন? মোটেও না। ৮৩ এর উপরে আপেলের বীজ আপনার মৃত্যুর কারণ, এর নিচে বেশি খেলে সেটা মৃত্যু যদি নাও ঘটায় তাহলে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।
তাই আপেল খাওয়ার সময় শুধু আপেলই ফল অংশটুকুই খান। বীজগুলো ফেলে দিন। কারণ, এই সতর্কতার জন্য আপনার কোন ক্ষতিই হবে না, কিন্তু একটুখানি অসতর্কতা আপনাকে অসুস্থ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
Pingback: আপেলের নাম যখন ব্ল্যাক ডায়মন্ড! - কেন্দ্রবাংলা