এখনকার সময়ের সব ব্রাউজারই স্বয়ংক্রীয়ভাবে ওয়েব ফন্ট ডাউনলোড করে সেটা ব্যবহার করতে পারে। যার ফলে আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে কোন ফন্ট ইনস্টল করা না থাকলেও আপনি সেই ফন্টের লেখা ওয়েবসাইটে দেখতে পান। এতে করে সার্বিকভাবে ওয়েবসাইটটি আপনার কাছে আরও আকর্ষণীয় মনে হয়।

কী এই ওয়েব ফন্ট? ব্রাউজার কীভাবেই বা এটা ডাউনলোড করে ব্যবহার করে? বা আপনাকে দেখায়? সেসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পারবেন এই লেখার শেষ পর্যন্ত পড়লে। আমরা চেষ্টা করবো, সহজ ভাষায় বিষয়টি আপনার কাছে তুলে ধরতে। চলুন শুরু করি।

ওয়েব ফন্ট ও ডেস্কটপ ফন্ট

কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে কোন লেখা দেখার জন্য ফন্ট একটি আবশ্যক বিষয়। ফন্টের কারণেই ডিজিটাল সিগন্যালকে আমরা পাঠযোগ্য হিসেবে দেখতে পাই। আপনার কম্পিউটার বা ফোনে বিভিন্ন স্টাইলের টেক্সট দেখার জন্য আগে থেকে ফোন বা কম্পিউটারে সেই ফন্টগুলো ইন্সটল করা থাকে। অথবা আপনাকে ইনস্টল করে নিতে হয়। এই ফন্টগুলোকে ডেস্কটপ ফন্ট ফন্ট বলা হয়।

ওয়েব ফন্ট কী?

অন্যদিকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এখন আমরা বিভিন্ন ধরণের ফন্ট দেখতে পাই। যেগুলো দেখার জন্য আমাদের কম্পিউটার বা ফোনে ফন্টগুলো ইন্সটল থাকার প্রয়োজন পড়ে না। এই ফন্টগুলো ক্লাউড থেকে সরাসরি আপনার ব্রাউজারে ক্যাশ ডাটা হিসেবে জমা হয়। ওয়েবসাইটের ব্যবহার করা এই ফন্টগুলোকে বলা হয় ওয়েব ফন্ট।

ওয়েব ফন্টের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

ইন্টারনেটের শুরুর দিকে কম্পিউটারে যে ফন্টগুলো ইনস্টল করা আছে সেই ফন্টগুলোতেই শুধুমাত্র দেখা যেত ওয়েবসাইটের সমস্ত টেক্সট। যদি ওয়েবসাইট তৈরীর সময় ডেভেলপার যদি কোন বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরী করতো।

তাহলে সেটা দেখার জন্য কম্পিউটারেও সেই ফন্টটি ইনস্টল থাকা বাধ্যতা মূলক ছিলো। অন্যথায়, ডিফল্ট কোন ফন্টে সেটা দেখা যেত। ডেভোলপাররা বিশেষ ফন্ট বলতে এসময় মাইক্রোসফটের কোর ফন্টগুলো ব্যবহার করতেন। এছাড়া শেরিফ, স্যান্স শেরিফ বা মনোস্পেসের মতো সাধারণ ফন্ট স্টাইলগুলোও ব্যবহার করতেন।

যারা বেশ অনেকদিন হলো ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তারা অনেকেই জানেন বিষয়টা। বিশেষ করে, বাংলা ওয়েবসাইটগুলোতে ফন্টের নিয়ে বেশ সমস্যা হতো। আনসি কোডে বাংলা লেখা যেহেতু ফন্ট নির্ভর ছিলো, তাই নির্দিষ্ট ফন্ট ইনস্টল করা না থাকলে ওয়েবসাইটে লেখা পড়া যেত না।

আরও পড়তে পারেনঃ অ্যান্ড্রয়েড সার্টিফাইড ডিভাইস কী? আন-সার্টিফাইড হলে কী সমস্যা?

অনেক ওয়েবসাইটই তাই হোমপেজে বাংলা ফন্ট ইনস্টল করার জন্য পরামর্শ এবং ডাউনলোড লিংক দিয়ে রাখতো। ইউকোড ব্যবহার শুরু করার পরে অবশ্য বাংলা লেখার এই সমস্যাটি দূর হয়।

যাইহোক, ২০১০ সালে গুগল তাদের ওয়েব ফন্ট সেবা চালু করে। এর মাধ্যমেই ওয়েবসাইটের বিশেষ ফন্ট দেখতে ডিভাইসে ঐ ফন্ট ইনস্টল থাকা বাধ্যমূলক, এই ব্যাপারটি দূর হয়ে যায়। গুগল তাদের ক্লাউডে বিভিন্ন ফন্ট রেখে বিনামূল্যে সেগুলো ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এর মাধ্যমেই মূলত ওয়েবফন্টের যাত্রা শুরু হয়।

বর্তমানে অসংখ্য সাইট ওয়েবফন্ট ব্যবহার করে তাদের ওয়েবসাইটকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করছে। এর মধ্য গুগল নিজেও রয়েছে! তবে, গুগল ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন ওয়েব ফন্টের সেবা দিইয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ওয়েবসাইটে বিভিন্ন প্লাগ-ইন ব্যবহার করেও এখন নিজস্ব ওয়েবফন্ট তৈরী করা যায়।

কীভাবে কাজ করে ওয়েব ফন্ট?

মূলত সিএসএস এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটে ওয়েবফন্ট যুক্ত করা হয়ে থাকে। ব্রাউজার সার্ভার থেকে ওয়েবসাইট লোড করার ফন্টটিও ক্যাশ মেমরি হিসেবে ডাউনলোড করে নেয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি গুগল ফন্ট ব্যবহার করেন তাহলে গুগলের সার্ভার থেকে সে ফন্টটা ডাউনলোড করে।

আর যদি আপনি নিজের সার্ভারে ফন্টটি রেখে দেন অথবা অন্য কোন ওয়েবফন্ট সার্ভিস থেকে ফন্ট ব্যবহার করেন, তাহলে সেখান থেকে ডাউনলোড করে। এরপর ওয়েবসাইটে টেক্সটে ঐ ফন্টে রূপান্তরিত করে আপনার সামনে উপস্থাপন করে। এভাবেই ডিভাইসে ফন্ট ইন্সটল না করা থাকলেও ওয়েবফন্টের সাহায্য আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটের বিভিন্নরকম ফন্ট দেখতে পান।

আরও পড়তে পারেনঃ ইউটিউব সম্পর্কিত ১০টি অবাক করা তথ্য, আপনি জানেন কি?

ওয়েব ফন্ট নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের লেখা। আশাকরি, কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন। লেখাটি আপনার কাছে কেমন লাগলো? আপনার যে কোন প্রশ্ন মতামত বা পরামর্শ আমাদের কাছে মূল্যবান। তাই নিচের কমেন্ট বক্সে আপনি আপনার মন্তব্য লিখে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই ফেসবুকে শেয়ার করে নিতে ভুলবেন না।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved