আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম সারির চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং লেখকদের মধ্য একটি উজ্জ্বল নাম আহমেদ ছফা। সমাকালীন এবং ছফা পরবর্তী অনেক বুদ্ধিজীবির মতে মুসলিম লেখক হিসেবে মীর মোশাররফ হোসেন এবং কাজী নজরুন ইসলামের পরই তার অবস্থান।

গুণী এই মানুষটি গল্প, উপন্যাস, কবিতা কিংবা প্রবন্ধ সব ক্ষেত্রেই রেখের অসামান্য মেধার সাক্ষর। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা খুব বেশি নয়। কিন্তু প্রতিটি গ্রন্থই বাংলা সাহিত্যের একেকটি অমূল্য সম্পদ। তাঁর লেখা স্মৃতিচারণমূলক একটি বই নিয়েই কথা বলবো আজকে।

যদ্যপি আমার গুরু – আহমেদ ছফা

স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ পড়াটা বরাবরই আমার জন্যে একঘেয়েমির বিষয়। কেননা সাধারণত তাদেরই স্মৃতিচারণামূলক বই থাকে, যারা জীবনে কিংবদন্তী ছিলেন। আর কিংবদন্তীদের জীবন আমাদের মতো সহজ সরল হয় না সাধারণত। নানা উত্থান-পতন, জটিল সমীকরণের মধ্যে দিয়ে তাদের অতিবাহিত জীবনের গুচ্ছ ঘটনা পড়তে যাওয়া, আমার মত স্বল্প পড়ুয়া পাঠকদের জন্যে অনেকটা দুর্বোধ্যই বটে।

তবে এ বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম স্বাদ পেয়েছি, ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইটিতে। বইটি মূলত, বাংলাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবিদ আহমদ ছফার জীবনের পিছনে ফেলে আসা অসংখ্য স্মৃতির একটা গুচ্ছায়ন। যার মূল চরিত্রে ছিলন জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক।

যদ্যপি আমার গুরু - বই পরিচিতি

যিনি তার তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞানের গরিমা, এবং সহজ সরল জীবন যাপনের যে আদর্শে দীক্ষিত ছিলেন, তা শুধুমাত্র আহমেদ ছফাকে আকৃষ্টই করেননি বরং রীতিমত ছফার নিকট তিনি হয়ে উঠেছিলেন পরম শ্রদ্ধাভাজন একজন ব্যাক্তিত্ত্ব। আহমেদ ছফার মতে তার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছেন, এই আবদুর রাজ্জাক। যার কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন জ্ঞান আহরণ করবার সমস্ত নির্দেশনা।

আবদুর রাজ্জাকও লেখককে অনেক পছন্দ করতেন, গুরু-শিষ্যর এই সমন্বয় ছিলো অত্যন্ত অটুট। পরিচয়ের প্রথম দিকের দিনগুলোতে আবদুর রাজ্জাক একটার পর একটা দেশি-বিদেশি বইয়ের পরামর্শ দিয়ে গিয়েছিলেন, আর লেখক তা নির্দ্বিধায় গলঃধকরণ করেছেন।

এভাবেই লেখকের চিন্তার প্রগতিশীলতার ভীত গড়ে উঠেছিলো। এভাবেই অনেকগুলো বছর লেখক এই মহান মানুষটির সাথে কাটিয়েছেন। যেকোনো সমস্যা সমাধানে শিষ্য নিঃসঙ্কোচে দৌড়ে গেছেন তার গুরুর কাছে, গুরুও নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে উপযুক্ত সমাধান দিয়ে বারবার শিষ্যকে অবিরাম মুগ্ধ করে গিয়েছেন।

তাই তো গুরুর মৃত্যুর পরেও শিষ্য তাকে নিয়ে স্মৃতির পাতাগুলো খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সহিত উল্টোতে পেরেছেন, যেনো প্রতিটা স্মৃতিই তার কাছে এখনো জীবিত, একদম তরতাজা।

একজন পাঠক হিসেবে এই ১১০ পৃষ্ঠার বইটি পড়তে আপনাকে মোটেও বেগ পেতে হবে না। বরং মনে হবে বইটি যদি এতো সংক্ষিপ্ত আকারেই শেষ না হতো। বইটি পড়তে পড়তেই আপনার মনে হবে আপনি নিজেই আহমেদ ছফা, আর আপনার সামনে একজন মহান মনীষি আপনাকে নিরন্তর পথ নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। আপনি নিজেকে তার জ্ঞান এবং সারল্যর কাছে সঁপে দিচ্ছেন।


বই জগতে প্রচুর রয়েছে, কিন্তু সব বই সুখাদ্য নয়। কিছু একবার পড়া হলেও বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। যার স্মৃতিকথা পাঠকের হৃদয়ে গভীর চিহ্ন রেখে যায়। ‘যদ্যপি আমার গুরু’ সেরকমই একটা আদর্শিক বই। বইটি কিশোর, তরূণ হতে শুরু করে যেকোনো বয়সের পাঠকই পড়তে পারবেন। জীবনে একতিবার হলেও এই বইয়ের স্বাদ নেওয়া উচিত, এটা আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ।

অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এর উক্তি

এক নজরে বইটি সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ

বইয়ের নামঃ যদ্যপি আমার গুরু
লেখকের নামঃ আহমেদ ছফা
ধরণঃ স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধ
প্রকাশকালঃ ১৯৯৮
মোট পৃষ্ঠাঃ ১১০
দামঃ ১৭৫ টাকা

যদ্যপি আমার গুরু বইটি পাওয়া যাবে দেশের গল্প উপন্যাস বিক্রি করে এমন যে কোন বইয়ের দোকানে। এছাড়াও অনলাইনে রকমারি ডট বা অন্যান্য বুকশপ থেকেও কিনতে পারবেন। খোঁজাখুঁজি করলে অনলাইনে পিডিএফ বা অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপও পেয়ে যাবেন।

যদ্যপি আমার গুরু বইটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো তা জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট বক্সে। এছাড়া, ভবিষ্যতে কেমন বই এর রিভিউ পেতে চান এবং রিভিউ নিয়ে যে কোন মতামত বা পরামর্শও জানাবেন নির্দ্বিধায়। লেখাটি ভালো লাগে শেয়ার করতে ভুলবেন না একদম।


মোঃ মারুফ আহমেদ

বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে বিষয়ে স্নাতক করছি। ভালো মানুষ হবার প্রচন্ড ইচ্ছে বুকে নিয়েই অনাগত পৃথিবীতে নিজের যাত্রা অব্যাহত রেখেছি।

0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved