বিসিএস এর সিলেবাস অনুযায়ী বাংলা সাহিত্য অংশের জন্য বরাদ্দকৃত পূ্র্ণমান হল ২০। এর মধ্যে ০৫ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে প্রাচীন ও মধ্যযুগের জন্য। যেহেতু চর্যাপদই প্রাচীন যুগের একমাত্র নিদর্শন, সেহেতু চর্যাপদ বিষয়ে ধারণা থাকলে সহজেই এই ০৫ নম্বরের মধ্যে ০২/০৩ নম্বর কমন পাওয়া সম্ভব। তাই ভালো প্রস্তুতির জন্য চর্যাপদ বিষয়ক তথ্যগুলো অবশ্যই গুরুত্বের সাথে পড়তে হবে।

আজকের বিষয়বস্তু – চর্যাপদ (পর্ব ০১)

এ বিষয়ক আলোচনাকে সহজবোধ্য করার জন্য সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তরের আকারে নিচে উপস্থাপন করা হল। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মানবন্টন দেখে নিতে পারেন।

চর্যাপদ

১। প্রাচীন যুগে বাংলা ভাষার একমাত্র নিদর্শন/ শ্রেষ্ঠ নিদর্শন কোনটি?
বা, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন/ আদি গ্রন্থ কোনটি?
উত্তরঃ
চর্যাপদ।

২। চর্যাপদ মূলত কীসের সংকলন গ্রন্থ?
উত্তরঃ
গানের সংকলন/ কবিতার সংকলন। (বি. দ্রঃ চর্যাপদ- এর কবিতার পদগুলো সুর করে গাওয়া হতো। তাই এগুলো মূলত গান বা সাধন সংগীত।)

৩। চর্যাপদে কোন ধর্মের তত্ত্বকথা রচিত হয়েছে?
উত্তরঃ
বৌদ্ধ ধর্মের।

৪। চর্যাপদ কে বা কারা রচনা করেছেন?
উত্তরঃ
বৌদ্ধ ধর্মানুসারী সহজিয়া সম্প্রদায়ের সাধকগণ।

৫। চর্যাপদের অন্যান্য নাম কী কী?
উত্তরঃ
চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়/ চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়/ চর্যাগীতিকোষ/ চর্যাগীতিকোষবৃত্তি।

৬। ‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’ অর্থ কী?
উত্তরঃ
চর্য অর্থ- যা আচরণীয়, অচর্য অর্থ- যা আচরণীয় নয়, বিনিশ্চয় অর্থ- নির্ণয় করা বা নিশ্চিতভাবে জানা। সুতরাং চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয় অর্থ- কোনটি আচরণীয় আর কোনটি আচরণীয় নয় তা জানা বা নির্ণয় করা।

৭। চর্যাপদ রচনার সময়কার কত?
উত্তরঃ
ক) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে, ৬৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ,
খ) ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে, ৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ,
গ) ড. সুকুমার সেনের মতে, ৯০০-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ।

৮। কোন রাজাদের শাসনামলে চর্যাপদ রচিত হয়?
উত্তরঃ
পাল রাজাদের শাসনামলে।

৯। চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন?
উত্তরঃ
মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

১০। চর্যাপদ কত সালে আবিষ্কৃত হয়?
উত্তরঃ
১৯০৭ সাল (১৩১৪ বঙ্গাব্দ)। (তৃতীয় বারের চেষ্টায়)

১১। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কোথায় থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন?
উত্তরঃ
নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে।

১২। চর্যাপদ কবে ও কোথায় থেকে প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়, সরহপাদের দোহা, কৃষ্ণপাদের দোহা ও ডাকার্ণব- এই চারটি গ্রন্থকে একত্রিত করে সম্পাদনা করেন যা ১৯১৬ সালে (১৩২৩ বঙ্গাব্দ) ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে প্রকাশিত হয়। এরমধ্যে চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয় বাংলা ভাষায় রচিত, বাকি তিনটি গ্রন্থ অপভ্রংশ ভাষায় রচিত।

১৩। চর্যাপদের ভাষাকে কী ভাষা বলা হয়?
উত্তরঃ
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এর মতে, চর্যাপদের ভাষা সন্ধ্যা ভাষা বা সান্ধ্য ভাষা বা আলো আঁধারি ভাষা।

১৪। চর্যাপদের ভাষাকে কেন সান্ধ্যভাষা বা আলো আঁধারি ভাষা বলা হয়?
উত্তরঃ
চর্যাপদের ভাষা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় না, কিছু বোঝা যায়, কিছু বোঝা যায় না। এই অস্পষ্টতার জন্য এর ভাষাকে সান্ধ্যভাষা বা আলো আঁধারি ভাষা বলা হয়।

১৫। চর্যাপদের ভাষা নিয়ে কে আলোচনা করেছেন?
উত্তরঃ
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘Origin and Development of the Bengali Literature’ (১৯২৬) গ্রন্থে চর্যাপদের ভাষা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

১৬। কে প্রমাণ করেন যে, চর্যাপদের ভাষা বাংলা?
উত্তরঃ
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।

১৭। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে, চর্যাপদের ভাষা কী?
উত্তরঃ
বঙ্গকামরূপী।

১৮। চর্যাপদের ধর্মমত নিয়ে কে আলোচনা করেছেন?
উত্তরঃ
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর ‘Buddhist Mystic Songs’ (১৯২৭) গ্রন্থে চর্যাপদের ধর্মমত নিয়ে আলোচনা করেছেন।

১৯। বাংলা ছাড়াও আর কোন কোন ভাষার পন্ডিতেরা চর্যাপদকে তাদের ভাষার আদিরূপ বলে দাবি করেন?
উত্তরঃ
অসমীয়া, মৈথিলি, হিন্দি ও উড়িয়া।

২০। কে সর্বপ্রথম নেপালের বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন?
উত্তরঃ
রাজেন্দ্রলাল মিত্র তার রচিত ‘Sanskrit Buddhist Literature in Nepal’ গ্রন্থে এই বিষয়টি সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন।

বিসিএস সহ যে কোনো চাকরি বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিকে আরো সহজ করতে কেন্দ্রবাংলার এই আয়োজন। নিয়মিত নানা বিষয়ে লেখা ও আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। আপনার যে কোনো মূল্যবান পরামর্শ ও মতামত আমাদের জানাতে পারেন কমেন্টের মাধ্যমে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved