বিসিএস সহ যেকোন চাকরির পরীক্ষাতেই প্রতি বছর বাংলা সাহিত্য বিষয়বস্তু থেকে একাধিক প্রশ্ন এসে থাকে। এছাড়া মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় এর ভর্তি পরীক্ষাতেও বাংলা সাহিত্য বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা যায়।

তাই মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী ও চাকরির পরিক্ষার্থীদের অনুশীলনের জন্য বাংলা সাহিত্য বিষয়ক ২০ টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন নিম্নে দেওয়া হল। প্রতিটি প্রশ্নের সাথেই সঠিক উত্তর ও উত্তরের ব্যাখ্যা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, এখানে রেফারেন্স বই হিসেবে বাংলা সাহিত্য বিষয়ক প্রসিদ্ধ বই “লাল নীল দীপাবলী বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী” – এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

বাংলা সাহিত্য (পর্ব ০১)

ভর্তি ও চাকরির পরীক্ষা প্রস্তুতি - বাংলা সাহিত্য (পর্ব-০১)

১। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের ব্যাপ্তিকাল হল-
ক) ৯৫০ থেকে ১২০০ পর্যন্ত
খ) ১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত
গ) ১৩৫০ থেকে ১৮০০ পর্যন্ত
ঘ) ১৮০০ থেকে আজ পর্যন্ত

সঠিক উত্তরঃ গ) ১৩৫০ থেকে ১৮০০ পর্যন্ত
[ব্যাখ্যাঃ বাংলা সাহিত্যকে তিনটি যুগে ভাগ করা হয়। যুগ তিনটি হচ্ছেঃ
(ক) প্রাচীন যুগঃ ৯৫০ থেকে ১২০০ পর্যন্ত
(খ) মধ্যযুগঃ ১৩৫০ থেকে ১৮০০ পর্যন্ত
(গ) আধুনিক যুগঃ ১৮০০ থেকে আজ পর্যন্ত
উল্লেখ্য, ১২০০ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের ‘অন্ধকার যুগ’]

২। বাংলা ভাষার প্রথম বই কোনটি?
ক) চর্যাপদ
খ) আলালের ঘরে দুলাল
গ) ভদ্রার্জুন
ঘ) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন

সঠিক উত্তরঃ ক) চর্যাপদ
[ব্যাখ্যাঃ (ক) চর্যাপদঃ বাংলা ভাষার প্রথম বইটির নাম ‘চর্যাপদ’। কেউ বলেন এর নাম ‘ চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’, আবার কেউ বলেন এর নাম ‘চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়’। তবে আজকাল যে নামটি ধরে ডাকা হয় তা হল ‘চর্যাপদ’।
(খ) আলালের ঘরে দুলালঃ প্যারীচাঁদ মিত্র রচিত ‘আলালের ঘরে দুলাল’ (১৮৫৮) কে বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস বলা হয়।
(গ) ভদ্রার্জুনঃ তারাচরণ শিকদার রচিত ‘ভদ্রার্জুন’ (১৮৫২) বাংলা ভাষার প্রথম মৌলিক নাটক।
(ঘ) শ্রীকৃষ্ণকীর্তনঃ বড়ু চন্ডীদাস রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য’ টি বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের উল্লেখযোগ্য একটি নিদর্শন।]

৩। চর্যাপদ কতসালে আবিষ্কৃত হয়?
ক) ১৯০৩ সালে
খ) ১৯০৭ সালে
গ) ১৯০৯ সালে
ঘ) ১৯১৬ সালে

সঠিক উত্তরঃ খ) ১৯০৭ সালে
[ব্যাখ্যাঃ ১৯০৭ সালে পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।]

৪। চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন?
ক) ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
খ) ডক্টর সুকুমার সেন
গ) পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
ঘ) ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

সঠিক উত্তরঃ গ) পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
[ব্যাখ্যাঃ ০৩ নং প্রশ্নের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ]

আরও পড়তে পারেনঃ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির প্রাণিবিজ্ঞান বহুনির্বাচনী প্রশ্ন : ১ম অধ্যায় (৩য় পর্ব)

৫। চর্যাপদে মোট কতটি কবিতা রয়েছে?
ক) ৪৫ টি
খ) ৫১ টি
গ) ৩৬ টি
ঘ) সাড়ে ৪৬ টি

সঠিক উত্তরঃ ঘ) সাড়ে ৪৬ টি
[ব্যাখ্যাঃ চর্যাপদে মোট ৪৬ টি পূর্ণ কবিতা এবং একটি ছেঁড়া খন্ডিত কবিতা রয়েছে। অর্থাৎ এতে মোট কবিতা রয়েছে সাড়ে ৪৬ টি।]

৬। চর্যাপদের কবিতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কবিতা লিখেছেন কে?
ক) লুইপাদ
খ) কাহ্নপাদ
গ) ভুসুকুপাদ
ঘ) কুক্কুরিপাদ

সঠিক উত্তরঃ খ) কাহ্নপাদ
[ব্যাখ্যাঃ চর্যাপদের কবিতাগুলো লিখেছেন ২৪ জন বৌদ্ধ বাউল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কবিতা লিখেছেন কাহ্নপাদ। তার লেখা মোট ১২ টি কবিতা পাওয়া গেছে। ভুসুকুপাদ লিখেছেন ৬ টি কবিতা, কুক্কুরিপাদ লিখেছেন ৩ টি কবিতা, লুইপাদ লিখেছেন ২ টি কবিতা।]

৭। চর্যাপদের ভাষাকে কী ভাষা বলা হয়?
ক) প্রাকৃত ভাষা
খ) মৈথিলি ভাষা
গ) সন্ধ্যাভাষা
ঘ) হিন্দি ভাষা

সঠিক উত্তরঃ গ) সন্ধ্যাভাষা
[ব্যাখ্যাঃ চর্যাপদে শব্দ ব্যবহারের রীতি বর্তমানের রীতি থেকে ভিন্ন। এর কবিতাগুলো পড়ে অর্থ বুঝতেও কষ্ট হয়। যেন আলো অন্ধকারের এক রহস্য এই ভাষার সাথে জড়িয়ে আছে। তাই এর ভাষাকে বলা হয় ‘সন্ধ্যাভাষা’।]

৮। ১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের কী যুগ বলা হয়?
ক) প্রাচীন যুগ
খ) মধ্যযুগ
গ) আধুনিক যুগ
ঘ) অন্ধকার যুগ

সঠিক উত্তরঃ ঘ) অন্ধকার যুগ
[ ব্যাখ্যাঃ ০১ নং প্রশ্নের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য ]

৯। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি কে আবিষ্কার করেন?
ক) পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী
খ) শ্রীবসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ
গ) ডক্টর সুকুমার সেন
ঘ) ডক্টর শশিভূষণ দাশগুপ্ত

সঠিক উত্তরঃ খ) শ্রীবসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ
[ব্যাখ্যাঃ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি ১৯০৯ সালে বাঁকুড়ার এক গৃহস্থের গোয়ালঘর থেকে উদ্ধার করেন শ্রীবসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ।]

১০। নিচের কোন কবি চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের রচয়িতা নয়?
ক) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
খ) মাণিক দত্ত
গ) ভারতচন্দ্র রায়
ঘ) বিপ্রদাস

সঠিক উত্তরঃ ঘ) বিপ্রদাস
[ব্যাখ্যাঃ চণ্ডীমঙ্গলকাব্য রচনা করেছেন মাণিক দত্ত, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, ভারতচন্দ্র রায়, দ্বিজ মাধব, দ্বিজ রামদেব প্রমুখ। আর মনসামঙ্গলকাব্য রচনা করেছেন বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস, হরি দত্ত, নারায়ণ দেব ও আরো অনেকে।]

১১। ‘কবিকঙ্কন’ কোন কবির উপাধি?
ক) বিদ্যাপতি
খ) ভারতচন্দ্র রায়
গ) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
ঘ) বড়ু চন্ডীদাস

সঠিক উত্তরঃ গ) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
[ব্যাখ্যাঃ কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর উপাধি ছিল ‘কবিকঙ্কন’। কবি ভারতচন্দ্র রায় এর উপাধি ছিল ‘রায়গুণাকর’। বিদ্যাপতির উপাধি ছিল ‘কবিকণ্ঠহার’।]

১২। মনসামঙ্গল কাব্যের একজন সেরা কবি হলেন-
ক) দ্বিজ মাধব
খ) বিদ্যাপতি
গ) বিজয়গুপ্ত
ঘ) গোবিন্দদাস

সঠিক উত্তরঃ গ) বিজয়গুপ্ত
[ব্যাখ্যাঃ ১০ নং প্রশ্নের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য]

১৩। ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়’ – কথাটি কোন কবি বলেছেন?
ক) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর
খ) কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
গ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
ঘ) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সঠিক উত্তরঃ ক) ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর
[ব্যাখ্যাঃ ‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন’, ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়’ – কথাগুলো বলেছেন ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর। যা বর্তমানে প্রবাদে পরিণত হয়েছে।]

১৪। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি কত সালে আবিষ্কৃত হয়?
ক) ১৯০৭
খ) ১৯০৯
গ) ১৯১৬
ঘ) ১৯২১

সঠিক উত্তরঃ খ) ১৯০৯
[ব্যাখ্যাঃ ০৯ নং প্রশ্নের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য]

১৫। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর কোন কাব্যের রচয়িতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন?
ক) মনসামঙ্গল কাব্য
খ) অন্নদামঙ্গল কাব্য
গ) ধর্মমঙ্গল কাব্য
ঘ) বৈষ্ণব পদাবলি

সঠিক উত্তরঃ খ) অন্নদামঙ্গল কাব্য
[ব্যাখ্যাঃ মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর ‘অন্নদামঙ্গল কাব্য’ লিখে খ্যাতি অর্জন করেন।]

১৬। নিচের কে বৈষ্ণব কবিতার কবি নন?
ক) বিদ্যাপতি
খ) চন্ডীদাস
গ) জ্ঞানদাস
ঘ) মুকুন্দরাম

সঠিক উত্তরঃ ঘ) মুকুন্দরাম
[ব্যাখ্যাঃ বৈষ্ণব কবিতার চার মহাকবি হলেন – বিদ্যাপতি, চন্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস। কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচনা করেছেন চণ্ডীমঙ্গল কাব্য।]

১৭। কবি বিদ্যাপতি কোন ভাষায় কবিতা রচনা করতেন?
ক) আর্য ভাষা
খ) পালি ভাষা
গ) ব্রজবুলি ভাষা
ঘ) সন্ধ্যাভাষা

সঠিক উত্তরঃ গ) ব্রজবুলি ভাষা
[ব্যাখ্যাঃ ব্রজবুলি হল খুব মিষ্টি, সুরময় ও গীতিময় ভাষা। বৈষ্ণব কবিতার চার মহাকবির মধ্যে কবি বিদ্যাপতি ও গোবিন্দদাস ব্রজবুলি ভাষায় কবিতা লিখেছেন। এ ভাষার জাদুতে মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্যকালে এ ভাষা শিখে অনেক কবিতা লিখেছিলেন।]

আরও পড়তে পারেনঃ দুর্বোধ্য ‘ভয়েনিচের পান্ডুলিপি’ : শত বছরের এক অমিমাংসিত রহস্য!

১৮। ‘গুণরাজ খান’ কোন লেখকের উপাধি ছিল?
ক) মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
খ) মালাধর বসু
গ) দ্বিজ মাধব
ঘ) মাণিক দত্ত

সঠিক উত্তরঃ খ) মালাধর বসু
[ব্যাখ্যাঃ মালাধর বসু একজন মুসলমান রাজার অনুপ্রেরণায় ‘ভাগবত’ অনুবাদ করেছিলেন। সেই রাজা তাকে ‘গুণরাজ খান’ উপাধিতে ভূষিত করেন। মালাধর বসুর ভাগবতের অন্যনাম ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’।]

১৯। মালাধর বসু কোনটির অনুবাদক?
ক) রামায়ণ
খ) মহাভারত
গ) ভাগবত
ঘ) বৈষ্ণব পদাবলি

সঠিক উত্তরঃ গ) ভাগবত
[ব্যাখ্যাঃ ১৮ নং প্রশ্নের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য]

২০। রামায়ণের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে?
ক) কাশীরাম দাস
খ) কৃত্তিবাস
গ) শ্রীকর নন্দী
ঘ) কবীন্দ্র পরমেশ্বর

সঠিক উত্তরঃ খ) কৃত্তিবাস
[ব্যাখ্যাঃ রামায়ণের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক হলেন কৃত্তিবাস। মহাভারতের অনুবাদকদের মধ্যে কামীরাম দাস, শ্রীকর নন্দী, কবীন্দ্র পরমেশ্বর প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।]

বিসিএস সহ যে কোন চাকরি বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ও ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিকে আরো সহজসাধ্য করতে কেন্দ্রবাংলার এই নিয়মিত আয়োজনের সাথেই থাকুন। আপনাদের যে কোন মূল্যবান পরামর্শ ও মতামত আমাদেরকে জানাতে পারেন কমেন্টের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ্‌।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved