পডকাস্ট কী? পডকাস্ট হচ্ছে একধরণের অডিও কন্টেন্ট, যা মূলত ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছানো হয়। পডকাস্টের নির্ধারিত কোন বিষয়বস্তু নেই। টেক্সট বা ভিডিও ব্লগের মতোই যে কোন বিষয় নিয়ে একক বা ধারাবাহিক পডকাস্ট তৈরি করা যায়। এবং পডকাস্ট প্রকাশ করে এমন প্লাটফরমে তা শেয়ারের মাধ্যমে অর্থও উপার্জন করা যায়। ভালো একটি ভয়েস রেকর্ডার থাকলেই পডকাস্ট করা যায়। এমনকি স্মার্টফোনের ভয়েস রেকর্ডার ব্যবয়ার করেও পডকাস্ট তৈরি করা যায়। যারা পডোকাস্ট করে থাকেন, তাদেরকে পডোকাস্টার বলা হয়ে থাকে।

একটা সময় মানুষের দুরবর্তী বিনোদন এবং তথ্যপ্রাপ্তির অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিলো বেতারযন্ত্র বা রেডিও। যেখানে শুধু মাত্র ভয়েস বা অডিও প্রচারের ব্যবস্থা ছিলো। সময়ের পরিক্রমায় বেতারযন্ত্র আজকে প্রায় বিলুপ্তির পথে। এখন এর স্থান দখন করে নিচ্ছে স্মার্টফোন, কম্পিউটার; বিশেষত ইন্টারনেট প্রযুক্তি। তাই স্বাভাবিকভাবেই এখন রেডিও যন্ত্র না থাকলেও ইন্টারনেটে অন্যান্য কন্টেন্ট এর পাশাপাশি অডিও কন্টেন্ট বা পডকাস্ট প্রতিনিয়ত জনপ্রিয় হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে।

আমাদের দেশে বর্তমানে পডকাস্ট প্রচলিত বা খুব জনপ্রিয় নয়। এর কারণ ইন্টারনেট আমাদের দেশে এখনও খুব বেশি সহজলভ্য নয়। ধীরে ধীরে ইন্টারনেট যতো সহজলভ্য হচ্ছে তত নিত্যনতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে। ভিডিও স্ট্রিমিং, ভিডিও কল, ক্লাউড সার্ভিস, ই-কমার্স ইতিমধ্যই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে। তাই একথা স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় যে, খুব অল্পদিনের মধ্যই তথ্য এবং বিনোদনের নতুন মাধ্যম হিসেবে পডকাস্ট নতুন জায়গা করে নিতে যাচ্ছে আমাদের জীবনে।

পডকাস্ট কী? পডকাস্ট কী করে তৈরি করা যায়?

বর্তমানে আমাদের অনেকেই আছি যারা পডকাস্টের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। পডকাস্ট কী? পডকাস্ট থেকে উপার্জন করা যায় কিনা, গেলে কতটা উপার্জন করা যায়, তা জানতে চাই। এই লেখার মধ্যমে আমরা এই জানার তৃষ্ণা নিবারণের কিছুটা চেষ্টা করবো। পডকাস্ট এবং এর মাধ্যমে কেমন উপার্জন করা সম্ভব এরকম বেশকিছু দিক নিয়ে আলোকপাত করবো এই লেখায়।

পডকাস্ট কী

উপরে যেমনটা বলেছি, পডকাস্ট আসলে একধরণের অডিও কন্টেন্ট। এটির কোন নির্ধারিত বিষয়বস্তু নেই। আপনি যে কোন বিষয় নিয়ে পডকাস্ট তৈরী করতে পারেন। হতে পারে তা কোন অডিওবুক, হতে পারে কোন দ্বীনি আলোচনা, হতে ব্যাবসা, কৃষি, শিক্ষা, সমাজ নিয়ে আলোচনা। একা পডকাস্ট তৈরী করতে পারেন কিংবা দলবদ্ধভাবে তৈরী করতে পারেন। একক পর্বের পডকাস্ট তৈরী করতে পারে আবার একাধিক পর্বের পডোকাস্টও তৈরী করতে পারেন। মোটকথা, পডকাস্ট তৈরীতে কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই।

তবে হ্যাঁ, পডকাস্ট তৈরীর সময় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে আপনি যাদের জন্য পডকাস্ট তৈরী করছেন; সেই শ্রোতারা এর থেকে উপকৃত হবেন কিনা, শুরু থেকে পর্যন্ত আপনি তাদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারছেন কিনা। যদি এই দুইটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে পডকাস্ট আপনার জন্য অবশ্যই ভালো একটি উপার্জনের মাধ্যম হবে ইনশাআল্লাহ্‌।

পডকাস্ট কী করে তৈরী করবেন?

পডকাস্ট কী এবং এটি তৈরির মৌলিক বিষয় সম্পর্কে তো জানা গেল। এবার আসুন জেনে নিই, পডকাস্ট তৈরির টেকনিক্যাল বিষয়টি কীভাবে সম্পন্ন করা যায়।

আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, পডোকাস্ট তৈরি করবেন। তাহলে প্রথমেই একটি সুন্দর বিষয় নির্বাচন করে নিন। এরপর কাজে সুবিধার জন্য একটি স্ক্রিপ্ট তৈরি করুন। এরপরে মূল কাজ অর্থাৎ রেকর্ডিং। পডকাস্টে যেহেতু মিউজিক এর প্রয়োজন হয় না, তাই রেকর্ডিং এর জন্য শুধুমাত্র একটি অডিও রেকর্ডার এবং এডিট করার জন্য একটি সফটওয়্যার থাকাই যথেষ্ট।

উল্লেখ্য, পডোকাস্টে অনেকেই মিউজিক ব্যবহার করে থাকেন। ব্যাক্তিগতভাবে আমি মিউজিক ব্যবহার করতে নিষেধ করবো। এটি একদিকে যেমন বাড়তি ঝামেলার তৈরি করে, তেমনি আপনি যদি একজন মুসলিম হন, তাহলে এই মিউজিকটি আপনার সুন্দর কাজটাকে হারাম কাজে পরিণত করে দিবে। মিউজিক শ্রোতাকে আকর্ষণ করবে এটা ঠিক, কিন্তু এর পরিবর্তে আপনি যদি কিছু ইফেক্ট ব্যবহার করেন এবং আপনার কন্টেন্টের বিষয়বস্তু আর স্ক্রিপ্টিং যদি উন্নত করেন, তাহলে সেটা আরও বেশি শ্রোতাকে আকর্ষণ করবে, ইনশাআল্লাহ্‌।

ধরে নিচ্ছি আপনি সুন্দর একটি বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছেন এবং সেটাকে চমৎকারভাবে স্ক্রিপ্টিং করেছেন। এবার রেকর্ডিং এর পালা।
প্রথমে ভালো একটি মাইক্রোফোন যদি আপনার কাছে থাকে তাহলে তা কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনের সাথে সংযুক্ত করে নিয়ে রেকর্ডিং শুরু করতে পারেন। রেকর্ডিং এর জন্য ভালো মাইক্রোফোন থাকা আবশ্যক নয়।আপনার ফোনের অডিও রেকর্ডার দিয়েও কাজটি করতে পারবেন। তবে, ভালো একটি মাইক্রোফোন আপনার আশেপাশের অযাচিত শব্দ দূর করে কন্টেন্টের কোয়ালিটি অনেক বাড়িয়ে দিবে।

এখনকার স্মার্টফোনগুলোও অনেকভালো রেকর্ডিং করতে পারে। নিঃশব্দ কোন রুমে আপনি আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করেও সুন্দরভাবে আপনার পডোকাস্টটি রেকর্ড করতে পারবেন। রেকর্ডিং শেষ, এবার এডিটিং এর পালা।

পডকাস্ট তথা অডিও ফাইল এডিট করার জন্য অনেক ধরণের সফটওয়্যার রয়েছে। তবে কম্পিউটারের জন্য আমি রিকমান্ড করবো অডাসিটি নামের ফ্রী সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে। এই সফটওয়্যারটি ব্যবহারের জন্য উইন্ডোজ, লিনাক্স বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত একটি কম্পিউটার থাকতে হবে আপনার। যদি তা না থাকে তাহলেও কোন সমস্যা নেই। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনেও আপনার Mstudio নামের অডীও এডিং সফটওয়্যারটি ইন্সটল করে নিতে পারেন। নিচের ডাউলোড লিংক থেকেই সফটওয়্যার দুইটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

Audacity-Mstudio Application

সফটওয়্যার দুইটির যে কোন একটি ব্যবহার করে আপনার রেকর্ড করা পডোকাস্ট অর্থাৎ অডিও ফাইলটি প্রয়োজনমতো এডিট করে নিতে পারবেন। এডিট করতে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্টে আমাদের জানাবেন। আমরা চেষ্টা করবো অডিও এডিট করার এক বা একাধিক পূর্ণাঙ্গ আর্টিকেল প্রকাশ করার।

এডিটিং শেষে আপনার অডিও ফাইলটি সেভ করে নিন। এবার আপনার পডকাস্টটি পুরোপুরি তৈরী। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, পাবলিশ করা।

পডকাস্ট কোথায় পাবলিশ করবেন?

আপনি যদি আপনার পডোকাস্টটি ইংরেজি ভাষায় করেন তাহলে যে কোন আন্তর্জাতিক পডকাস্ট স্ট্রিমিং নেটওয়ার্কে তা আপলোদ করতে পারেন। কিছু আন্তর্জাতিক পডোকাস্ট স্ট্রিমিং নেটওয়ার্কের তালিকা নিচে দেওয়া হলো।

এদের মধ্য বেশ কয়েকটাতে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষার পডকাস্টও আপলোড করা যায়। তবে আপনি যদি বাংলা ভাষায় পডকাস্ট তৈরি করেন সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হবে দেশীয় কিংবা বাংলা কোন পডোকাস্ট স্ট্রিমিং নেটওয়ার্কে তা আপলোড করা। এরকম একটি পডকাস্ট স্ট্রিমিং নেটওয়ার্ক হচ্ছে, MixedTape.io। এখানে খুব সহজেই আপনি একাউন্ট তৈরী করে আপনার পডকাস্ট আপলোড করতে পারবেন। যা শ্রোতারা MixedTape অ্যাপ ব্যবহার করে শুনতে পারবে।

MixedTape

পডকাস্টের মাধ্যমে কি অর্থ উপার্জন করা সম্ভব?

পডকাস্টের মাধ্যমে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। একটি ভালো পডকাস্ট চ্যালেন থেকে একজন পডকাস্টার গড়ে প্রতিবছর গড়ে ২৪ থেকে ৪৭ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকেন। কতোজন শ্রোতা আপনার পডকাস্ট শুনছেন এটার উপরেই মূলত আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে। তাই সঠিকভাবে আয়ের পরিমাণ কখনোই বলা সম্ভব হয় না। তবে এটুকু বলা যায় যে আপনি যদি একজন ভালো পডকাস্টার হন, তবে পডোকাস্টের মাধ্যমে আপনি অবশ্যই একটী সম্মানজক অর্থ প্রতিমাসে আয় করতে সক্ষম হবেন।

পডকাস্ট থেকে আয় করার জন্য বেশিরভাগ পডকাস্ট নেটওয়ার্কেই ইউটিউবের মতোই আপনাকে মনিটাইজেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনার একাউন্টে অর্থ জমা হবে। তবে বিজ্ঞাপনগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিউজিকাল হয়ে থাকে, বিধায় মুসলিম হিসেবে এই আয় আপনার জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না। এক্ষেত্রে পডোকাস্টের মাধ্যমে আয়ের বিকল্প পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। যেমনঃ

  • সরাসরি শ্রোতাদের থেকে পেট্রিয়ন এর মাধ্যমে আর্থিক সাপোর্ট নেওয়া।
  • সরাসরি কোন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার করার মাধ্যমে আয় করা।
  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা। ইত্যাদি।

পডকাস্টের মাধ্যমে কীভাবে উপার্জন করতে হয় তা এ-টু জেড জানতে চাইলে কমেন্ট করে আমাদের জানান। সেই সাথে জানান পডোকাস্ট নিয়ে এইলেখা সম্পর্কিত আপনার অনুভূতি। আপনাদের উৎসাহ পেলে সামনের দিনগুলোতে পডকাস্ট নিয়ে বিস্তারিত লেখা প্রকাশিত হবে কেন্দরবাংলায় ইনশাআল্লাহ্‌।

পডকাস্ট শুধু আয়ের উৎস হিসেবেই নয়। বরং এটি আপনাকে গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলার কৌশলকে আরও সমৃদ্ধ করবে। যার ফলে বাস্তব জীবনের যে কারো চেয়ে কয়েকধাপ এগিয়ে থাকবেন। তাই যদি পডোকাস্ট করার ইচ্ছা আপনার মনে থেকে থাকে, তাহলে এখনই শুরু করে দিন আপনার হাতের স্মার্টফোনটি নিয়ে। পডকাস্ট বা অন্য প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোন সমস্যায় পড়লে আমাদের জানান। কেন্দ্রবাংলা আন্তরিক আপনার পাশে থাকবে, ইনশাআল্লাহ্‌।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved