চারপাশের ডিজিটাল ডিভাইসের বড় একটা অংশই এখন পরিচালিত হচ্ছে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি এর মাধ্যমে। হাতের ছোঁয়ায় ডিভাইস পরিচালনা করার এই প্রযুক্তিটি আসলে জাদুর মতো। এখানে নির্দিষ্ট বাটন চেপে কাজ করতে হয় না বলে, এটা ব্যবহার করাও ভীষণ সহজ।

যাইহোক, টাচস্ক্রিন আমরা ব্যবহার করছি এক দশকেরও বেশি সময় আগে থেকে। কিন্তু আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি না এটা আসলে কীভাবে কাজ করে। তবে, আপনার যদি জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্যই।

টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে?

বিস্ময়কর এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে সেটা আরও অনেক বেশি চমকপ্রদ। এই লেখায় আমরা বিভিন্ন ধরণের টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি এবং এগুলো কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে সহজ ভাষায় জানার চেষ্টা করবো।

যেভাবে কাজ করে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি

ইনফ্রারেড টাচস্ক্রিন

টাচস্ক্রিন প্রযুক্তির শুরুর দিককার একটি প্রযুক্তি হচ্ছে, ইনফ্রারেড বা অবলাল টাচস্ক্রিন। যেটা ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারী বিশেষ ধরণের গ্লাভস (দস্তানা) পড়তে হতো। এবং এতে মাল্টিটাস্কিং এর কোন সুযোগ ছিলো না। একই সাথে এটা বেশ ধীরগতির ছিলো।

যেভাবে কাজ করতো ইনফ্রারেড টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি

ইনফ্রারেড বা অবলাল আলোক রশ্মি ব্যবহার কাজ করতো এই টাচ-স্ক্রিন। একটি ইনফ্রারেড টাচ-স্ক্রিনের উপরে বা নিচের একপ্রান্ত এবং ডান বা বামের একপ্রান্ত থেকে ইনফ্রারেড রশ্মি ফেলা হতো স্ক্রিনের বিপরীত পাশে। যেখানে ইনফ্রারেড রশ্মি সনাক্তের সেন্সর বসানো থাকতো।

ব্যবহারকারী যখন স্ক্রিনের মাঝে কোন জায়গায় আঙুল রাখতেন। তখন ঐ জায়গার আলো বাধাপ্রাপ্ত হতো। এবং অপরপাশে থাকা সেন্সরে পৌঁছাতো না।

ফলে উপর-নিচ (y অক্ষ) এবং ডান-বামের (x অক্ষ) ঠিক কোন জায়গাতে আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সেটা খুব সহজেই বের করে ফেলা যেত। এবং এই তথ্যকে ব্যবহার করে স্ক্রিনের ঐ জায়গায় চাপ দেওয়া হয়েছে বলে শনাক্ত করা হতো। যারা গ্রাফ করে করেছেন তারা বিষয় খুব ভালো করে বুঝতে পারবেন।

আরও পড়তে পারেনঃ স্মার্টফোনের ৫টি স্মার্ট ব্যবহার সাহায্য করবে প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে

ইনফ্রারেড আলো যেহেতু আমাদের চোখে দৃশ্যমান নয়, তাই টাচস্ক্রিনের নিচের লেয়ারে থাকা মূল স্ক্রিনের আলো দেখতে কোন সমস্যা তৈরী করতো না। এটাই একমাত্র টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি যেখানে আলোক রশ্মি ব্যবহার করে কাজ করা হতো।

ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন

ইনফ্রারেড টাচ-স্ক্রিন প্রযুক্তির চেয়েও পুরোনো এই প্রযুক্তির সূচনা ঘটে ৬০ এর দশকে। এরিক জনসন নামক এক আমেরিকান প্রযুক্তিবিদ কম্পিউটারে সাথে যোগাযোগের একটি সহজ উপায় খুঁজতে যেয়ে ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন আবিষ্কার করেন।

বর্তমানে আমরা যেসব টাচ-স্ক্রিন ডিভাইস দেখি, বিশেষ করে স্মার্টোফোন, স্মার্টওয়াচ, ল্যাপটপ এগুলোর প্রায় সবই এই প্রযুক্তির টাচ-স্ক্রিন ব্যবহার করে।

কীভাবে কাজ করে এই টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি?

ক্যাপিসিটিভ টাচ-স্ক্রিনের মূল চালিকা শক্তি বৈদ্যুতিক ক্যাপাসিট্যান্স। মূল স্ক্রিনের কয়েকস্তরের আবরণত থাকে বিদ্যুৎ পরিবাহী এবং অপরিবাহী পদার্থের। এর কার্যপদ্ধতি যথেষ্ট জটিল। হাতের স্পর্শের পরিবাহী স্তরে ইলেক্ট্রনের আদান প্রদান ঘটে।

ডিভাইসের ভিতরে থাকা প্রসেসর এসব ইলেক্ট্রনের ঘনত্ব বিশ্লেষণ করে কোন জায়গায় চাপ দেওয়া হয়েছে সেটা শনাক্ত করে।

স্ক্রিনের কোন জায়গায় চাপ দিলে সেই জায়গায় বৈদ্যুতিক চার্জের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনই মূলত প্রসেসর বুঝতে পারে এবং তাৎক্ষনিকভাবে সেই জায়গায় ক্লিক করা হয়েছে বলে নির্দেশ গ্রহণ করে।

আরও পড়তে পারেনঃ স্যোশাল মিডিয়া অ্যালগরিদম : যা আপনাকে আসক্ত করে তোলে

যেহেতু চার্জের পরিবর্তন এখানে মূখ্য বিষয়, তাই শুধুমাত্র চার্জিত বস্তুই এই স্ক্রিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একারণে ক্যাপাসিটিভ টাচ-স্ক্রিনে হাতের স্পর্শ ছাড়া কাজ করা যায় না।

ক্যাপাসিটিভ স্ক্রিন বেশ দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে। এবং একই সাথে একাধিক স্পর্শ বা মাল্টিটাস্কিং শনাক্ত করতে পারে।

রেসিস্ট্যান্ট টাচস্ক্রিন

সত্তর এর দশকে স্যামুয়েল হার্স্ট উদ্ভাবন করেন রেসিস্ট্যান্ট টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি। বর্তমানে রেসিট্যান্ট টাচ স্ক্রিনের প্রচলন খুব বেশি দেখা যায় না। তবে, এর প্রথমদিককার টাচ-স্ক্রিন ডিভাইসগুলোতে এটা খুব ব্যবহার হতো।

আর জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনা করলে ক্যাপাসিটিভ টাচ-স্ক্রিনের পরেই রাখতে পারেন একে। ক্যাপাসিটিভ টাচ-স্ক্রিনের সাথের এর মূল পার্থক্য হচ্ছে, এখানে স্পর্শের সাথে সাথে কিছুটা বল প্রয়োগও করতে হয়। পাশাপাশি যে কোন বস্তুর সাহায্যই এই টাচ-স্ক্রিন অপারেট করা যায়।

কীভাবে কাজ করে এই টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি?

রেজিস্ট্যান্ট টাচ-স্ক্রিনের ক্ষেত্রে মূল স্ক্রিন বা ডিসপ্লের উপরে দুই স্তরে ইন্ডিয়াম টিন অক্সাইডের পাতলা পর্দা থাকে।

SAO বা সারফেস অ্যাকোস্টিক ওয়েভ টাচস্ক্রিন

ক্যাপাসিটিভ বা রেজিস্ট্যান্ট টাচ-স্ক্রিনের মতো এতোটা জনপ্রিয় বা ব্যবহারযোগ্য নয় সারফেস অ্যাকোয়াস্টিক ওয়েভ টাচ-স্ক্রিন। তবে, এটা তুলনামূলক কম খরচে তৈরী করা যায়। পাশাপাশি এতে মূল ডিসপ্লের ছবিও খুব পরিষ্কার বোঝা যায়।

এটিএম মেশিন বা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে এই প্রযুক্তির টাচস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর রেসপন্স টাইমও কিছুটা স্লো।

কীভাবে কাজ করে এই টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি?

এটার কার্যপ্রনালী অনেকটাই ইনফ্রারেড টাচ-স্ক্রিনের মতো। পার্থক্য শুধু ইনফ্রারেড টাচস্ক্রিনে যেখানে অবলাল আলোক রশ্মি বা তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়, সেখানে এই প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা শব্দ তরঙ্গ!

টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের আলোচনা। কেমন লাগলো আপনার কাছে? আপনার মূলবান মতামত বা যে কোন প্রশ্ন জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট বক্সে। আর লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে নিতে বন্ধুদের সাথে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved