ক্লাউডে ডাটা রাখার বেশ ঝামেলামুক্ত। যে কোন জায়গা, যে কোন ডিভাইস থেকে যে কোন সময় এক্সেস করা যায়। সহজে ডাটা শেয়ার করা যায়। এসব কারণে ক্লাউড শুরু থেকেই দারুণ সম্ভাবনাময় ছিলো। বর্তমানে ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় এর চাহিদা এবং ব্যবহার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা প্রায় সবাই এখন কোন না কোনভাবে ক্লাউড স্টোরেজে আমাদের ফাইল বা ডাটা রাখছি। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্লাউড কতোটা নিরাপদ এই ডাটা সংরক্ষণে?

সম্পূর্ণ লেখা জুড়েই থাকবে ক্লাউড কতোটা নিরাপদ সে নিয়ে আলোচনা। পুরোটা পড়লে আশাকরি, এসম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন। এর আগে চাইলে ক্লাউড কম্পিউটিং কী সে সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল লেখায় প্রবেশ করি।

ক্লাউড কতোটা নিরাপদ ডাটা সংরক্ষণে?

ক্লাউড কতোটা নিরাপদ

বিশ্বজুড়ে আমার কিংবা আপনার মতো একক ব্যবহারকারীরা যে শুধু মাত্র ক্লাউড ব্যবহার করে এমনটা নয়। বরং গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফট বা অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তো বটেই; এছাড়াও বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান ক্লাউড সেবা ব্যবহার করে থাকে।

তাই স্বাভাবিকভাবেই ক্লাউড সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডাটার নিরাপত্তা নিয়ে বেশ সচেতন হয়ে থাকে। ভার্চুয়াল এবং ফিজিক্যাল দুইভাবেই ডাটা সেন্টারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। নাহলে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয় না।

ভালো খারাপ সব জায়গাতেই যেমন থাকে, তেমনি এখানেও সব ক্লাউড সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা একরকম হয় না। তবে, মানসম্পন্ন সব প্রতিষ্ঠানই তাদের ক্লাউডে থাকা ডাটার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে থাকে। কীভাবে করে এবার চলুন সেগুলো জেনে নিই।

নিয়মিত সিকিউরিটি ব্যাবস্থা পর্যবেক্ষন ও হালনাগাদ

ডিজিটাল ডাটা মাত্রই সেটি হ্যাক বা বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ক্লাউড সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এদিকটাতে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাই প্রতিনিয়ত সিকিউরিটি সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করে। এবং হালনাগাদ করে।

যে কোন ডাটা সেন্টারেই হার্ডওয়্যার ফেইলরের ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়। হার্ডওয়্যার ফেইলরের কারণে ক্লাউড সেবা বা ডাটার কোন ক্ষতি হওয়াটাই তাই, স্বাভাবিক। তবে, এই ঝুঁকি এড়াতে একই ডাটাকে পৃথিবীর একাধিক ডাটা সেন্টারে স্টোর করা হয়। যাতে করে একটা সার্ভার নষ্ট হলে তাৎক্ষণিক ভাবে অন্য সার্ভার থেকে নিরিবিচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া যায়।

তৃতীয় পক্ষ এর নিরাপত্তা পর্যালোচনা করে

ক্লাউড সেবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন শক্তিশালী সেটা দেখার জন্য প্রায়শই তৃতীয় পক্ষ (ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান)-কে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। যারা সাইবার সিকিউরিটি ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। এছাড়া তাদের নিজস্ব সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ তো থাকেই।

আরও পড়তে পারেনঃ অ্যান্ড্রয়েড সার্টিফাইড ডিভাইস কী? আন-সার্টিফাইড হলে কী সমস্যা?

নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য সামান্য ত্রুটি খুজে পেলেও সেটা সাথে সাথে দূর করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এমনকি সমস্যা না থাকলেও তৃতীয় পক্ষের এই পর্যবেক্ষণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কীভাবে আরও জোরদার করা যায় সে ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকে।

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার

নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্লাউড সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। যার সাহায্য ব্যবহারকারীর গতিবিধি বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। কোন অপ্রত্যাশিত বা ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাক্টিভিটি সনাক্ত করতে সক্ষম এসব কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা।

এর ফলে ডাটা বেহাত বা হ্যাক হওয়ার পূর্বেই সতর্ক হতে পারে ক্লাউড সার্ভারের সিকিউরিটি টিম। এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে। এছাড়া আপনার ফাইলে যেন কোনভাবেই কোন ম্যালওয়ার বা ভাইরাস প্রবেশ করতে না পারে সেটা নিশ্চিত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ফায়ারওয়্যাল ব্যবহার করে ক্লাউড স্টোরেজগুলো।

ক্লাউড ডাটা সেন্টারের ফিজিক্যাল সিকিউরিটি

ক্লাউড স্টোরেজে আমরা যেসব ফাইল বা ডাটা রাখি, সেগুলো পৃথিবীর একাধিক ডাটা সেন্টারে রাখা হার্ডডিস্কে জমা থাকে মূলত। ভার্চুয়াল ভাবে যেমন ডাটাগুলো হ্যাক বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি ফিজিক্যালি এসব ডাটা সেন্টার থেকেও ডাটা চুরি বা অন্য কোনভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরও পড়তে পারেনঃ টরেন্ট কী? কীভাবে কাজ করে? টরেন্ট বৈধ না অবৈধ?

এই সমস্যা এড়াতে ডাটা সেন্টারগুলোকে পৃথিবী সবচেয়ে শক্তিশালী স্থাপনাগুলোর মতো করে তৈরী করা হয়। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবী ধ্বংস না হলে এসব ডাটা সেন্টার ধ্বংস হওয়া সম্ভব নয়। যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে এসব ডাটা সেন্টার অক্ষত থাকে।
দুবৃত্তের হামলা প্রতিরোধের জন্য ডাটা সেন্টারে থাকে অত্যাধুনিক এবং শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উপেক্ষা করে কোন ব্যাক্তি ঢোকা কিংবা বের হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

সার্ভারে ডিফল্ট এনক্রিপশন সুবিধা

ডাটাকে আরও বেশি সুরক্ষিত রাখতে অনেক ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে সার্ভার সাইড এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন। যার অর্থ আপনি ডাটা বা ফাইল ঐ ক্লাউড স্টোরেজে আপলোড করা মাত্র তা এনক্রিপটেড হয়ে যায়। একমাত্র আপনি বা আপনি যাদের এক্সেস দিবে তারা ছাড়া আর কেউ ফাইলটি ব্যবহার করতে পারবে না।

যার ফলে কোনভাবে আপনার রাখা ফাইল যদি হ্যাকারদের হাতে চলেও যায়, সেটা তারা ব্যবহার করতে পারবে না। এমনকি ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও আপনার ফাইলটি চাইলে দেখতে পারবে না। তবে, এই সব ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে না। আপনি কোন ক্লাউড সার্ভিসে সাবক্রিপশন করার আগে, এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন আছে কিনা তা যাচাই করে নিতে পারেন।

এছাড়া আপনি চাইলে, ক্লাউডে ফাইল আপলোড করার আগে সেটা এনক্রিপডেট করে নিতে পারেন। এতে আপনার ডাটার সুরক্ষা আরও বেশি নিশ্চিত হবে।

আরও পড়তে পারেনঃ পিডিএফ ফাইল কী? পিডিএফ সম্পর্কে আপনার যা জানা দরকার

শেষকথা

ক্লাউডে ডাটা স্টোর করার সময় নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি যে দুশ্চিন্তায় পড়ি সেটা হচ্ছে, ডাটা বেহাত হয়ে যাবে কিনা। আর ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এই জায়গাতেই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে থাকে। ডাটা যাতে বেহাত না হয়, সেভাবেই তাদের সিকিউরিটি সিস্টেম ডিজাইন করে। তাই, এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার বেশি সুযোগ নেই।

নিরাপত্তা নিয়ে আরেকটা যে দুশ্চিন্তা সেটা হচ্ছে, ডাটা নষ্ট হয়ে যাবে কিনা। প্রতিষ্ঠিত ভালো কোন ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হলে এই জায়গাতে আপনি একেবারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একদিক দিয়ে ডাটা যেমন তারা একাধিক যায়গায় স্টোর করে রাখে, তেমনি ডাটা সেন্টারগুলোর পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থাপনারগুলোর মধ্য অন্যতম।

তবে, আগে যেমনটা বলেছিলাম। সবকিছুরই ভালো মন্দ দুইটা দিক থাকে। ক্লাউড সেবাদানকারী সব প্রতিষ্ঠানেই যে আপনি নিরাপত্তার এমন নিশ্চয়তা পাবেন সেটা সত্য নয়। তবে গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ক্লাউড ব্যবহারে ডাটা সংরক্ষণে নিরাপত্তা নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকা যায়।

এরপরও পরামর্শ থাকবে, ক্লাউড সার্ভিসে সাবক্রিপশন করার আগে ঐ ক্লাউড সার্ভিসের নিরাপত্তা ফিচার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়ার। কম মূল্যে কেউ সেবা দেখে বা ফ্রী স্টোরেজের পরিমাণ দেখে ক্লাউড সার্ভিসে সাবক্রিপশন করা উচিত নয়। নিরাপত্তাকেই সবার আগে প্রাধান্য দিবেন।

ক্লাউড কতোটা নিরাপদ তার একটা ধারণা আশাকরি পেয়েছেন। লেখাটি নিয়ে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট বক্সে। আর ভালো লাগলে লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করে নিতে ভুলবেন না।


Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved