কম্পিউটারের স্টোরেজ আপগ্রেড করতে গেলে বেশ চিন্তাভাবনা করে প্ল্যান করার প্রয়োজন পড়ে। বলা বাহুল্য, বর্তমানের স্টোরেজ প্রযুক্তির ভিন্নতা এর অন্যতম কারণ। এছাড়া দাম, পারফমেন্স এবং কম্পিউটারের সক্ষমতার ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হয়। তাই, সবদিক বিবেচনা করে, এসএসডি, হাইব্রীড নাকি হার্ডডিস্ক ড্রাইভ কোনটা নেওয়া উচিত হবে সেটা নিয়ে অনেক সময়ই হিমশিম খেতে হয় ক্রেতাকে।

আমাদের আজকের এই লেখায় বেশকিছু মানদন্ডে এই তিন ধরণের স্টোরেজকে তুলনা করবো। এবং জানার চেষ্টা করবো কোন স্টোরেজটি কাদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হবে। আশাকরি, এই লেখা শেষে এ নিয়ে আপনার দ্বিধার অবসান হবে।

এসএসডি, হাইব্রীড এবং হার্ডডিস্ক ড্রাইভ এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়

কম্পিউটারের এই তিন ধরণের স্টোরেজের মধ্য হার্ডডিস্ক ড্রাইভ অপেক্ষাকৃত পুরাতন এবং স্থিতিশীল প্রযুক্তির মেমরি ডিভাইস। এতে ডাটা বা তথ্য সংরক্ষণের চৌম্বক পৃষ্ট যুক্ত ধাতব ডিস্ক ব্যবহার করা হয়। যেটা কম্পিউটার যতক্ষণ চালু থাকে ততক্ষণ অবিরত ভাবে ঘুরতে থাকে।

অন্যদিকে এসএসডি বা সলিড স্টেট ড্রাইভে এধরণের কোন মেকানিক্যাল পার্টস থাকে না। এটা আসলে আমাদের চির পরিচিত মাইক্রোএসডি কার্ড বা মেমরি কার্ডের একটি বর্ধিত সংস্করণ। যেখানে তথ্য সংরক্ষণের জন্য সিলিকন চিপ ব্যবহার করা হয়। আর এজন্য এতে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যায়, যা হার্ডডিস্কে পাওয়া যায় না। সুবিধাগুলো সম্পর্কে নিচে আমরা জানবো।

এসএসডি, হাইব্রীড এবং হার্ডডিস্ক ড্রাইভ

আর হাইব্রীড ড্রাইভ হচ্ছে, এসএসডি এবং এইচডিডির একটি সম্মিলিত রূপ। যেখানে দুই ধরণের ড্রাইভেরই সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো বিদ্যমান। একে অনেক সময় এসএসএইচডি নামেও ডাকা হয়। তবে, অন্য দুইটির তুলনায় এর প্রচলন বা জনপ্রিয়তা বেশ কম।

দামের মানদন্ডে যার যে অবস্থান

বর্তমানে বাজারে হার্ডডিস্ক ড্রাইভ এর দাম তুলনামূলক ভাবে সবচেয় কম। আপনি যেখানে মাত্র ৩৫০০-৪০০০ টাকায় ১ টেরাবাইট ধারণক্ষমতার একটা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ পেয়ে যাবেন; সেখানে একই পরিমাণ ধারণ ক্ষমতার এসএসডি কিনতে আপনাকে গুনতে হবে প্রায় চার থেকে পাঁচগুন টাকা।

তবে, আশার কথা হচ্ছে, সলিড স্টেট ড্রাইভের দাম প্রতিনিয়তই কিছুটা করে কমছে। দামের দিক থেকে হাইব্রীড ড্রাইভ এই দুইটির মাঝে অবস্থানে পড়ে। ইন্টারনাল মেমরি ড্রাইভ হিসেবে এটা বেশ উপযুক্ত।

গতির মানদন্ডে যেটা এগিয়ে

মেমরি ড্রাইভে গতির বিষয়টি এসেছে মূলত এসএসডির হাত ধরে। সন্দেহাতীত ভাবে এসএসডিতে আপনি সবচেয়ে বেশি গতি পাবেন। এর ফলে একই প্রসসরের একটি এসএসডি যুক্ত কম্পিউটার অন্য একটি হার্ড ডিস্ক যুক্ত কম্পিউটারের চেয়ে বেশি দ্রুত কাজ করে। বিভিন্ন টেস্টে দেখা যায়, একটি এসএসডি সমপরিমাণ ধারণক্ষমতার এইচডিডি থেকে প্রায় চারগুন দ্রুত কাজ করে থাকে।

অনেক বেশি ডাটা প্রসেসিং অর্থাৎ ভিডিও এডিটিং, গেমিং কিংবা ওয়েব সার্ভারের মতো ভারী কাজের জন্য এখন পর্যন্ত এসএসডির বিকল্প কোন স্টোরেজ নেই। এসএসডিতে কোন মেকানিক্যাল পার্ট না থাকায় এই সুবিধাটি পাওয়া যায়।

হাইব্রীড ড্রাইভ গতির ক্ষেত্রেও মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। এতে দুইধরণের ড্রাইভের যন্ত্রাংশ থাকায় এটা জরুরী ফাইলগুলো এর মেমরি চিপের মাধ্যমে প্রসেস এবং সরক্ষণ করে। এছাড়া বাকি সব ফাইল সংরক্ষণ এবং প্রসেস করে মেকানিক্যাল ড্রাইভের দ্বারা। জরুরী ফাইল বলতে এখানে অপারেটিং সিস্টেম এবং বিভিন্ন ক্যাশ ফাইল বোঝানো হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেনঃ টরেন্ট ফাইল কী? টরেন্ট ফাইল তৈরির উপায়

বুঝতেই পারছেন, গতির ক্ষেত্রে সবার শেষে অবস্থান করছে হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ। বেশি ভারী কাজ করতে চাইলে এটা খুব বেশি উপযুক্ত হবে না, অন্য ড্রাইভগুলোর তুলনায়।

ধারণক্ষমতা

ধারণক্ষমতার দিকটা চিন্তা করলে এখন পর্যন্ত হার্ডডিস্ক ড্রাইভই এগিয়ে থাকবে। বাজারে সর্বোচ্চ ১৮ টেরাবাইট পর্যন্ত ধারণক্ষমতার হার্ডডিস্ক পাবেন। অন্য দিকে বাজে এসএসডি পাবেন সর্বোচ্চ ২ টেরাবাইট ধারণ ক্ষমতার। যদিও বর্তমানে এসএসডির বাড়ছে আরও।

অদূর ভবিষ্যতে এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়। হার্ডডিস্ক আর হাইব্রীড ড্রাইভ ধারণক্ষমতা দিক থেকে পাশাপাশি অবস্থান করে। অর্থাৎ এতে আপনি এসএসডির চেয়ে অনেক বেশি ধারণক্ষমতার হাইব্রীড ড্রাইভ খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।

সাইজ ও পোর্টাবিলিটি

মেকানিক্যাল পার্ট না থাকার অনেকগুলো সুবিধার মধ্য একটি সুবিধা হচ্ছে, সাইজে ছোট হওয়া। এসএসডিতে যেটা পুরোপুরিভাবে পাওয়া যায়। হার্ডডিস্ক ড্রাইভের তুলনায় মূলত একারণেই এসএসডি যথেষ্ট ছোট সাইযের হতে পারে। ৫০০ গিগাবাইটের একটি হার্ডডিস্কের তুলনায় ৫০০ গিগাবাইটের একটি এসএসডি সাইজে প্রায় অর্ধেক হয়। তবে, একথা অবশ্য সবসময়ের জন্য সত্য নয়।

সাইযে ছোট হওয়ার কারণে পোর্টেবল মেমরি ড্রাইভ হিসেবেও এসএসডি হার্ড ড্রাইভের তুলনায় এগিয়ে। পেনড্রাইভ সাইজের একটি এসএসডিতে যেখানে টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ থাকে; সেখানে যতো অল্প সাইজের হার্ডডিস্ক হোক না কেন সেটা তার এর চারগুণ বড় হয়। সাইজের দিক থেকে হাইব্রীড ড্রাইভ প্রায় হার্ডডিস্কের প্রায় সমানই হয়ে থাকে।

স্থায়ীত্ব

মেকানিক্যাল পার্ট না থাকার কারণেও এই মানদন্ডেও হার্ডডিস্কের তুলনায় এগিয়ে থাকছে এসএসডি। হার্ডডিস্কের ভিতরের অংশ সবসময় ঘুরতে থাকার কারণে, এটা নিজেই বেশ উত্তপ্ত হয়ে যায়।

ডেস্কটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে বিষয়টি অনেকে যথেষ্ট আমলে না নিলেও, ল্যাপটপের বেলার এটা পুরো কম্পিউটারেরই তাপমাত্রা বাড়িয়ে ফেলে। যেটা হার্ডডিস্ক নিজে সহ কম্পিউটারের অন্যান্য যন্ত্রাংশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়। এসএসডিতে এই সমস্যা প্রায় নেই বললেই চলে।

একে তো নিজে তেমন একটা তাপ উৎপন্ন করে না। পাশাপাশি হার্ডডিস্কের চেয়ে বেশি তাপমাত্রাতেও এটা টিকে থাকতে পারে। আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা হার্ডডিস্কের চেয়ে এসএসডির বেশি।

তবে, হার্ডডিস্ক পুড়ে গেলে কিংবা মারাত্মক ড্যামেজ হলেও সেখান থেকে ডাটা রিকভার করার ভালো সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে এসএসডির মেমরি চিপ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেখান থেকে ডাটা রিকভার করা প্রায় অসম্ভব। হাইব্রীড ড্রাইভের অবস্থান এক্ষেত্রেও মাঝামাঝি।

একটি হাইব্রীড ড্রাইভের বিভিন্ন অংশ

ব্যাটারি লাইফ বা পাওয়ার ইউজ

হার্ডডিস্কের মতো এসএসডিতে মেকানিক্যাল পার্ট না থাকার আরও একটা বড় সুবিধা হচ্ছে, এটা খুব অল্প পাওয়ার ইউজ করে। আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফ বেশ কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারে এসএসডি। হাইব্রীড ড্রাইভ পাওয়ার ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি।

সিদ্ধান্ত

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, কোন ধরণের মেমরি ড্রাইভের কেমন সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। কোনটাকেই এখন পর্যন্ত সবদিক দিয়ে পারফেক্ট বলার উপায় নেই।

আপনি যদি ল্যাপটপ ইউজার হন এবং আপনার কাছে যদি পর্যাপ্ত টাকা থাকে, তাহলে হার্ডডিস্ক বা হাইব্রীড ড্রাইভের পরিবর্তে এসএসডি লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে করে ল্যাপটপের পারফরমেন্স এবং স্থায়ীত্ব দুইটাই বৃদ্ধি পাবে। তবে, খুব বেশি ইন্টারনাল স্টোরেজের আশা আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে। স্টোরেজের ঘাটতি সেক্ষেত্রে এক্সটার্নাল ড্রাইভ ব্যবহার করে পূরণ করে নিতে হবে আপনাকে।

আরও পড়তে পারেনঃ উইন্ডোজ ১০-এ জাভা ভার্সন দেখবেন যেভাবে

অন্যদিকে আপনি যদি মোটামুটি ভারী কাজের জন্য একটা স্মুথ এবং বেশি স্টোরেজের ডেস্কটপ পিসি সাজাতে চান, তাহলে হাইব্রীড ড্রাইভকে পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন। টাকা পয়সা নিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় থাকলে পুরো পিসি হার্ডডিস্ক দিয়েও করতে পারেন। খুব বেশি সমস্যায় পড়বেন না আশা করি।

সবশেষে আপনি যদি হ্যাভি ইউজের জন্য পিসি আপগ্রেড বা নতুন পিসি বানাতে চান তাহলে পুরো পিসিটা এসএসডি দিয়ে তৈরী করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পাশাপাশি স্টোরেজের জন্য দুইএকটা হার্ডডিস্কও রাখতে পারেন। অথযা বেশি টাকা খরচ করার হাত থেকে বাঁচবেন।

ব্যাকআপ রাখার জন্য এখনও পোর্টেবল বা এক্সটারনাল ড্রাইভের ক্ষেত্রে আমার কাছে এখনও এক্সটারনাল হার্ডডিস্ককেই বেশি উপযুক্ত মনে হয়। তাই, একাজে হাইব্রীড বা এসএসডির দিকে না জেনে হার্ডডিস্কই নিতে পারে।

যাইহোক, এই ছিলো এসএসডি, হাইব্রীড এবং হার্ডডিস্ক ড্রাইভ আমাদের আজকের লেখা। আপনার কনফিউশন কিছুটা দূর হয়েছে কী? লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত বা যে কোন প্রশ্ন জানিয়ে দিন আমাদের কমেন্ট বক্সে।

লাইফওয়্যার অবলম্বনে


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved