এনএফটি হচ্ছে এক ধরণের প্রযুক্তি, যেটা কোন ডিজিটাল অবজেক্ট এর মালিক কেন সেটা চিহ্নিত করে। এই ডিজিটাল অবজেক্ট যে কোন কিছু হতে পারে।

অডিও, ছবি, ভিডিও বা কোন স্যোশাল মিডিয়ার পোস্ট, যেকোন কিছু। এমনি ডিজিটাল গেম বা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের জমিও এনএফটি হতে পারে।

সম্প্রতি, একরকমই আউটসাইডার নামের ভার্চুয়াল ওয়ার্ডের একটুকরো ডিজিটাল জমি এনএফটি হিসেবে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৬০০০ মার্কিন ডলারে।

এনএফটি

এনএফটি-র পরিচয়

এনএফটি-র পূর্ণরূপ হচ্ছে নন-ফানজিবল টোকেন। যদি কোনকিছু নন-ফাঞ্জিবল হয়, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে, কোনকিছু দিয়েই এর প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে এই জিনিস শুধুমাত্র একটাই আছে।

উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে। ধরুন, আপনার কাছে একটা ১০ টাকার নোট আছে। এখন আপনি এই ১০ টাকার নোটটা যে কারো একটা ১০ টাকার নোটের সাথে পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। তাতে ১০ টাকার মান কমে যাবে না। ১০ টাকাই থাকবে সেটা। এই যে ১০ টাকার নোট বদলালেও যে মান কমলো না, এই ব্যাপারটিকে বলা হয় ফাঞ্জিবল।

চিত্রকর্মের মতো অনেক ক্রিয়েটিভ বিষয় আছে, যেগুলো হচ্ছে নন-ফাঞ্জিবল। নির্দিষ্ট কোন চিত্রকর্ম কিন্তু একটাই থাকে। আপনি সেটার কপি করতে পারেন বা ছবি তুলতে পারেন কিন্তু ঠিক ঐ চিত্রকর্মটি আর হবে না। যদি আপনি সেই চিত্রকর্মটি কিনে এনে বাড়িতে রাখেন তাহলে আপনি এর মালিক হবেন। পৃথিবীর সবার কাছে যদি সেটার কপি থেকেও থাকে, আসল মালিক শুধু আপনিই হবেন। একই কথা অন্যান্য ক্রিয়েটিভ জিনিসের বেলাতেও খাটে।

ডিজিটাল মাধ্যমে এনএফটি যেভাবে কাজ করে

ডিজিটাল দুনিয়ায় কোন কিছুর একমাত্র মালিক হওয়া বেশ কঠিন। কারণ এখানে হুবহু কপি করা যায়। বিন্দুমাত্র এদিক সেদিক হয় না। অনলাইনে কোন জিনিস দেখলে আপনি সেটা সরাসরি আপনার কম্পিউটারে সেভ করে ফেলতে পারেন। হয়ে গেল নিজের জিনিস। এখানেই আসে এনএফটির প্রয়োজনীয়তা।

আরও পড়তে পারেনঃ এসএসডি, হাইব্রীড এবং হার্ডডিস্ক ড্রাইভ এর মধ্য কোনটা ব্যবহার করবেন? কেন করবেন?

আপনি যদি কারো ডিজিটাল পেইন্টিং এনএফটি হিসেবে কেনেন, তাহলে আপনার কেনার একটা রেকর্ড থেকে যায় ব্লকচেইনে। ব্লকচেইন হলো বিশাল এক ডাটাবেস। যা পৃথিবীর অনেক মানুষ তাদের কম্পিউটার থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই ডাটাবেসে কোন তথ্য বদলে দেওয়া প্রায় অসম্ভব একটা কাজ।

একবার কোন তথ্য যখন ব্লক চেইনে ঢুকে যায় সেটা চিরদিনের মতো সেখানে স্টোর হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আপনি যে পেইন্টিং বা এনএফটি অবজেক্ট কিনলেন। সেটা কেনার সময়ে মালিকানা বদলের রেকর্ডটা চিরদিনের মতো ব্লকচেইনে সেভ হয়ে গেল।

এবার যে যেভাবেই যেখান থেকেই সে জিনিসটা দেখুক না কেন, মালিকানা আপনারই থাকবে। এমনকি কেউ যদি কপিও করে, তারপরও সেটা আপনার থাকবে। যতোক্ষণ না বিক্রি করছেন, ততক্ষণ ঐ ডিজিটাল অবজেক্ট এর মালিক কেবল আপনি।

এনএফটির আকাশছোঁয়া দাম

কিছু কিছু ডিজিটাল অবজেক্ট এর দাম অনেক বেশি হয়। উদাহরণ হিসেবে ২০২১ সালে বিক্রিত হওয়া প্রথম টুইটটার কথাই ধরা যায়। প্রায় ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছিলো পাঁচ শব্দের এই টুইটটা। কিন্তু কেন এই আকাশছোঁয়া দাম?

প্রথমকথা হচ্ছে, সব এনএফটির দামই কিন্তু এমন অস্বাভাবিক না। বরং বেশিরভাগ এনএফটির দামই বেশ কম। আমরা সেগুলোর খবর পাই না। যেগুলোর দাম বেশি হয়, সেগুলো নিয়েই আলোচনা হয় বেশি। একই ব্যাপার বাস্তব দুনিয়ার কোন চিত্রকর্মের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

আলোচনাটা ঘুরপাক খায় অস্বাভাবিক দামের চিত্রকর্মগুলোর চারপাশে। এর বাইরে কতো শতো আর্ট যে পানি মূল্যে বিক্রি হয়ে যায় সেটা আমরা জানি না।

যাইহোক, বাস্তব দুনিয়ার ক্রিয়েটিভ অবজেক্টের মতো ডিজিটাল দুনিয়ারও এনএফটির দাম নির্ভর করে মূলত ক্রেতার চাহিদার উপর। কতোজন ক্রেতা এর জন্য পয়সা খরচ করতে রাজি, সেটার উপরে দাম নির্ভর করে। এছাড়াও আরও কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে এর দাম।

আরও পড়তে পারেনঃ স্যোশাল মিডিয়া অ্যালগরিদম : যা আপনাকে আসক্ত করে তোলে

যিনি এটা কিনছেন তিনি যদি মনে করেন, এটা সুন্দর বা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাহলে তার কাছে টাকা কোন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। খুশি মনেই প্রচুর টাকা করে মালিকানা নিজের করে নেন।

যে লোকটি ৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে টুইট কিনেছিলেন, তিনি কেনার পর তার অভিব্যাক্তি জানিয়েছিলেন এভাবে “এটা শুধু একটা টুইট নয়। আমি মনে করি কিছু বছর পরে মানুষ এই টুইটের মূল্য বুঝতে পারবে। যেমনটা মোনালিসা চিত্রকর্মটির ক্ষেত্রে হয়েছিলো।”

অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, আপাতত দৃষ্টিতে টুইটটা আমার বা আপনার কাছে খুব সামান্য হলেও যিনি কিনেছেন তার কাছে এটা অনেক বড় বিষয় ছিলো।

এর পাশাপাশি প্রথম টুইট হিসেবে এর ইউনিক এবং ঐতিহাসিক মূল্য, এর মালিক হওয়ার গৌরব এসব তো ছিলোই। একমাত্র মানুষ হিসেবে তিনিই শুধু দাবী করতে পারবেন, পৃথিবীর প্রথম টুইটের মালিকানা।

এই ব্যাপারটি শুধু টুইট নয়, সব দামী এনএফটির ক্ষেত্রেই প্রযেজ্য। একটি এনএফটির দাম কতো বেশি হবে, সেটা নির্ভর করে এর চাহিদা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি অনেকগুলো বিষয়ের উপরে।

জনপ্রিয় ও দাম বেশি হওয়ার আরও কারণ

এনএফটির দাম বাড়ার পিছনে আরেকটা কারণ আছে। অর্থনীতিবিদরা যা বাবল বলে থাকেন। অনেকসময় যিনি এধরণের নন-ফাঞ্জিবল অবজেক্ট কেনেন, তিনি ইচ্ছে করেই বেশি দাম হাকিয়ে নেন।

শুধু এই কারণে যে, বেশি দামে কেনার কারণে জিনিসটার একটা অস্বাভাবিক মূল্য মার্কেটে তৈরি হয়। এবং কিছু সময় পরেই যেন তিনি লাভ সমেত জিনিসটি আবার বিক্রি করে দিতে পারেন।

এর পাশাপাশি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডকেও এনএফটির অস্বাভাবিক দাম এবং জনপ্রিয়তার কারণ বলে মনে করেন অনেকে। ইতিমধ্যই ফেসবুক তাদের ভার্চুয়াল জগৎ মেটাভার্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এধরণের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের সংখ্যা বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

শোনা যায়, সেসব ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে ব্যবহার করা যাবে এসব এনএফটি। বাস্তব দুনিয়ায় যেমন আপনি আপনার ঘরে নিজের কেনা আসবাব বা পেইন্টিং ব্যবহার করেন, ভার্চুয়াল দুনিয়াতেও সেটা করতে হবে। এটা কতোটা সত্যি বা যৌক্তিক সেটা প্রশ্নের। তবে, এমন আশংকার কারণে যে এনএফটি জনপ্রিয় হতে পারে, সেটা সত্য।

দ্য কনভার্সেশন অবলম্বনে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved