কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম জগতে উইন্ডোজের একছত্র আধিপত্য ছিলো একটা সময়। ফ্রী, ওপেনসোর্স এবং নিরাপদ অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স বাজারে আসার পর সেই আধিপত্য অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। মোবাইলফোন, গ্যাজেট, বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ, সার্ভার সহ প্রযুক্তিপ্রেমীদের পারসোনাল কম্পিউটারেও এখন লিনাক্স জায়গা করে নিচ্ছে ধীরে ধীরে।

এতোসব কিছুর পরও বর্তমানে কিন্তু পৃথিবীজুড়ে পারসোনাল কম্পিউটারের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ। কেন এখনও উইন্ডোজ লিনাক্সের চেয়ে এগিয়ে তারই ১০টি কারণ জানার চেষ্টা করবো এই লেখায়।

যে ৫টি কারণে এখনও উইন্ডোজ লিনাক্সের চেয়ে এগিয়ে

ডিস্ট্রিবিউশন

নতুন একজন ইউজার লিনাক্স ব্যবহার শুরু করতে চাইলে সর্বপ্রথম যে সমস্যাটিতে পড়ে, সেটা ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে। বর্তমানে প্রায় ৬০০ টিরও বেশি ডিস্ট্রিবিউশন বা লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং রয়েছে। ইউজার এবং কাজকে প্রাধান্য দিয়ে লিনাক্সের একেকটি ড্রিস্ট্রিবিউশন তৈরী করা হয়।

সব ডিস্ট্রিবিউশন যেমন সব কাজের জন্য আদর্শ না, তেমনি সবধরণের ব্যবহারকারীর জন্যও ইউজার ফ্রেন্ডলি না এসব ডিস্ট্রিবিউশন। তাই, লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটলের পূর্বে সঠিক ডিস্ট্রিবিউশন বেছে নিতে তাই বেশ ঘাম ঝড়াতে হয়।

আরও পড়তে পারেনঃ লো-এন্ড কম্পিউটারের জন্য ৫টি সেরা লিনাক্স ডিস্ট্রো

অন্যদিকে উইন্ডোজ ব্যবহারের জন্য এতোসব অপশনের বালাই নেই। বর্তমানে শুধুমাত্র উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমকেই মাইক্রোসফট সাপোর্ট দেয়। যার ফলে, খুব সহজেই চোখ বন্ধ করে একজন ব্যবহারকারী উইন্ডোজ ১০ বেছে নিতে পারে।

উইন্ডোজ লিনাক্সের চেয়ে এগিয়ে থাকার কারণ

উইন্ডোজ ১০ এর যদিও অনেকগুলো ভার্সন আছে। যেমন, প্রো, হোম, স্টুডেন্ট ইত্যাদি। কিন্তু সেটাও কোন ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায় না একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য। কারণ, এগুলোর মধ্য এমন কোন বড়সড় পার্থক্য নেই যেটা ব্যবহারকারীর সামনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে।

ফলে, একজন সাধারণ ব্যবহারকারী ডিস্ট্রিবিউশন বেছে নেওয়ার ঝামেলা এড়াতে উইন্ডোজ ব্যবহার করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

ওএস ইনস্টলেশন

উইন্ডোজ লিনাক্সের চেয়ে এগিয়ে থাকার আরও একটা কারণ হচ্ছে, এটা ইনস্টল করা সহজ। কম্পিউটার বিষয়ক তেমন কোন জ্ঞান না থাকলেও উইন্ডোজ ইনস্টল করে ফেলা যায়। লিনাক্সের বেলায় ব্যপারটা কিছুটা জটিল।

সোয়াপ মেমরি, স্টোরেজ ফরম্যাট পরিবর্তন বা ফোল্ডার ডেস্টিনেশন নির্বাচন করার মতো বেশ কিছু জটিল বিষয়ের মুখোমুখী হতে হয় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার সময়। একটু ভুল হলে সমস্ত ডাটা মুছে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে, একজন সাধারণ ব্যবহারকারো কাছে লিনাক্স ইনস্টল করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সফটওয়্যার

লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের আরও একটা বড় দুর্বলতার জায়গা হচ্ছে, সফটওয়্যার। উইন্ডোজ বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের জন্য যেমন প্রচুর সফটওয়্যার পাওয়া যায়, তেমনটা পাওয়া যায় না লিনাক্সের বেলায়। অনেক প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার, যেমন,

  • মাইক্রোসফট অফিস
  • অ্যাডোবি সফটওয়্যার
  • ড্রিমওয়েভার
  • ফাইনাল কাট প্রো
  • ৭-জিপ
  • বর্ণ কীবোর্ড। ইত্যাদি লিনাক্সের জন্য তৈরী করা হয় না। যার ফলে, সাধারণ একজন ব্যবহারকারী লিনাক্স ব্যবহার করতে গিয়ে ভালো রকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন।

যদিও লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের জন্য উপরের সব সফটওয়্যারেই বিকল্প সফটওয়্যার আছে। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো সম্পূর্ণ ফ্রী। তবে, সেগুলোতে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় এবং নতুন হওয়ায় ব্যবহারকারীরা তাতে স্বাছন্দ্য করেন না।

ওয়াইন কিংবা ইমুলেটরের মতো মাধ্যম ব্যবহার করে অবশ্য উইন্ডোজ এর সফটওয়্যার লিনাক্সে ব্যবহার করা যায়। তবে সেটা বেশ ঝামেলার। এবং পারফরমেন্সও তেমন পাওয়া যায় না।

এছাড়া লিনাক্সে সফটওয়্যার ইন্সটল করার ব্যাপারটিও ভিন্ন। উইন্ডোজে যেখানে মাউস দিয়ে কিছু ক্লিক করেই সফটওয়্যার ইনস্টল করা যায় সেখানে, লিনাক্সে সফটওয়্যার ইনস্টলের জন্য টার্মিনালে কমান্ড লিখতে হয়। নিরাপত্তার জন্য বিষয়টি অবশ্যই ভালো এবং প্রয়োজনীয়। কিন্তু সাধারণ ব্যবহাকারীর নিকট সেটা বেশ ঝামেলার মনে হয়। উইন্ডোজ লিনাক্সের চেয়ে এগিয়ে থাকার সবচেয়ে বড় একটা কারণ বলে বিবেচনা করা হয় এই সফটওয়্যার স্বল্পতাকে।

ইউজার এক্সপেরিয়েন্স

বর্তমানে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম টার্মিনাল ব্যবহার বা একটা কমান্ড লাইন না লিখেও ব্যবহার করা যায়। তারপরও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় সেটা কিছুটা জটিল মনে হতে পারে একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে। অপ্রচলিত শব্দ বা বেশি টেকনিক্যাল টার্ম ব্যবহার এর কারণ হতে পারে।

এছাড়া ডেস্কটপ এনভায়রোমেন্ট (DE) ভেদে লিনাক্সের ইউজার ইন্টারফেসের বেশ পার্থক্য দেখা যায়। কম্পিউটার বিষয়ে একটু টেকনিক্যাল জ্ঞান না থাকলে যেটা বেশ ঝামেলার মনে হয়।

উইন্ডোজের অপারেটিং সিস্টেমের বেলায় এধরণের সমস্যা একেবারেই নেই। শুধুমাত্র মাউস চালাতে জানলেই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সমস্ত কাজ করে ফেলা যায়। ফলে সব ধরণের ব্যবহারকারীর কাছেই সেটা সহজ মনে হয়।

হার্ডওয়্যার এবং সাপোর্ট

অনেকদিন হলো কম্পিউটারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ। যার ফলে, হার্ডওয়্যার নির্মাতা কোম্পানিগুলোও তাদের পণ্য তৈরী করে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে সাপোর্ট করবে কিনা সেটা চিন্তা করে। যার ফলে, উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের হার্ডওয়্যার নিয়ে কোন চিন্তা করার প্রয়োজন পড়ে না।

লিনাক্স ব্যবহার করলে খুব সামান্য হলেও হার্ডওয়্যার সংক্রান্ত সমস্যায় পড়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। অনেকসময় প্রয়োজনীয় ড্রাইভার পাওয়া যায় না। ড্রাইভার আপডেটও উইন্ডজের মতো নিয়মিত পাওয়া যায় না লিনাক্সে।

এছাড়া উইন্ডোজ ব্যবহারকারী হিসেবে যে কোন সমস্যার সমাধান ইউটিউব বা ব্লগে খুব সহজে পাওয়া যায়। তাদের সাপোর্ট সেন্টারও খুবই অ্যাক্টিভ। অন্যদিকে লিনাক্সে কোন সমস্যায় পরলে সেটা সমাধান পাওয়াটা একটু কঠিন হয়ে যায়। যদিও এখন লিনাক্সের উপরে প্রচুর মানুষ ভিডিও বানাচ্ছেন বা ব্লগ লিখছেন, কিন্তু সেসবের বেশিরভাগই ইংরেজিতে। তাই, অন্য ভাষাভাষীদের জন্য বেশিরভাগ সময়ই কাজে আসে না। উইন্ডোজ লিনাক্সের চেয়ে এগিয়ে থাকার এটাও একটা বড় কারণ।

উইন্ডোজ লিনাক্সের চেয়ে এগিয়ে থাকার ৫টি কারণ নিয়ে এই ছিলো আজকের লেখা। লেখাটি কেমন লাগলো? আপনার কাছে উইন্ডোজ না লিনাক্স কোনটিকে সহজ মনে হয়? জানিয়ে দিন কমেন্ট করে।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved