ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসে অসাধারণ সব ফিচার দেখে আমরা প্রতিবছরই চমৎকৃত হয়। প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার হচ্ছে সবখানে। যার ছোঁয়া পাওয়া যায় এসব ফ্ল্যাগশিপ ফোনে। পৃথিবীজুড়ে প্রতিবছর যে পরিমাণ ফোন বিক্রি হয়, তাঁর খুবই ছোট একটি অংশ এই ফ্লাগশিপ ফোন।

অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষের কপালেই ফ্লাগশিপ ফোন জোটে না। তাই, ফোন কোম্পানিগুলো ফ্লাগশিপ ফোনের ফিচার থেকে একটা বা দুইটা করে ফিচার মিড-রেঞ্জ বা বাজেট স্মার্টফোনেও যুক্ত করে দেয়। প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ফিচারের ফোন বেছে নিতে হয় ক্রেতাকে। নির্দিষ্ট কোন ফিচারকে হয়ত বাদ দিতে হয় বুঝে শুনেই।

যাইহোক এরকম ব্যাপার বাজেট স্মার্টফোনের ডিসপ্লের ক্ষেত্রে এখন খুব দেখা যায়। অ্যামোলেড নাকি হাই রিফ্রেশরেট দুইটার মধ্য যে কোন একটা বেছে নিতে হয়। কিন্তু কোনটা আপনার জন্য বেশি ভালো হবে? ১২০ হার্জের এলসিডি ডিসপ্লে? নাকি ৬০ হার্জের অ্যামোলেড ডিসপ্লে? চলুন আজকের এই লেখায় সেটাই জেনে নেওয়া যাক।

অ্যামোলেড নাকি হাই রিফ্রেশরেট

অ্যামোলেড নাকি হাই রিফ্রেশরেট

হাই রিফ্রেশরেট কেন ভালো?

কোন স্ক্রিনের এনিমেশন বা কালার মুভমেন্ট কতো সুন্দর দেখাবে সেটা নির্ভর করে স্কীনের রিফ্রেশ রেটের উপর। অর্থাৎ রিফ্রেশরেট এর কারণে এনিমেশনকে আরও স্মুথভাবে দেখা যায়। ল্যাগ করার মতো সমস্যা কমে যায়।

হায়ার রিফ্রেশরেট এর ব্যাপারটা জনপ্রিয়তা পায় ওয়ানপ্লাসের কল্যাণে। আগে স্মার্টফোনের ডিসপ্লেগুলো হতো সাধারণত ৬০ হার্জ রিফ্রেশরেট এর। ২০১৮ সালে প্রথম হাই রিফ্রেশরেটের ফোন আসুসের ROG Phone বাজারে আসে। তবে, হাই রিফ্রেশরেট ব্যাপারটা জনপ্রিয় করে তোলার পিছনে ওয়ানপ্লাসকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যাইহোক, ২০১৮-১৯ সালে বাজারে আসা আসুস বা ওয়ানপ্লাসের সেই ফোনগুলোর পরে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে এখন। সময়ের সাথে সাথে এই প্রযুক্তিতে হয়েছে উন্নয়ন। বর্তমানে কিছু কিছু ফোন ১৪৪+ হার্জের ডিসপ্লে নিয়েও আসছে। এর মধ্য বেশিরভাগ অবশ্য চাইনিজ ব্রান্ডের স্মার্টফোন।

হাই রিফ্রেশরেট এর সুবিধাটা বোঝা যায় মূলত গেমিং করার সময়। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রোলিং এর সময়েও এটা নজরে পড়ে। এছাড়া স্মার্টফোনের অন্যান্য ব্যবহারের সময় হাই রিফ্রেশরেট বোঝার তেমন কোন সুযোগ নেই।

রিফ্রেশরেট বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে স্ক্রিনের স্মুথনেস বাড়ে একথা সত্যি। তবে, সেই বেড়ে যাওয়ার হারটা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অর্থাৎ, ৬০ হার্জ থেকে ৯০ হার্জ এর রিফ্রেশরেটের ক্ষেত্রে স্মুথনেসের ব্যাপারটা ৫০% আপগ্রেড হয়। কিন্তু ৯০ হার্জ থেকে ১২০ হার্জের বেলায় স্মুথনেস আপগ্রেড হয় মাত্র ৩৩.৩৩%। আবার ১২০ থেকে ১৪৪ হার্জের বেলায় সেটা আরও কমে মাত্র ২০% আপগ্রেড হয়।

তাই বুঝতেই পারছেন, ১২০ হার্জের উপরে গিয়ে আপনি পার্থক্য টের পাবেন না। স্মার্টফোনের জন্য ১২০ হার্জকেই পারফেক্ট পয়েন্ট মনে করে থাকেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাই, ফোন কোম্পানির নাম্বার গেমে পড়ে বাড়তি দামে আরও বেশি হাই রিফ্রেশরেটের ফোন কেনার তেমন যৌক্তিকতা নেই।

অ্যামোলেড ডিসপ্লে কেন ভালো?

রেগুলার LCD ডিসপ্লের তুলনায় অনেক বেশি ভিভিড কোয়ালিটির ইমেজ পাওয়া যায় অ্যামোলেড ডিসপ্লে তে। একই সাথে অ্যামোলেড ডিসপ্লে কম পাওয়ার ব্যবহার করে, স্ক্রিনের গ্লেয়ার বা রিফ্লেকশনও কম থাকে অ্যামোলেড-এ। ফলে, অ্যামোলেড ডিসপ্লেতে আপনি যে কন্টেন্টই দেখেন না কেন, তা হয় অনেক পরিষ্কার, উজ্জ্বল ও কালারফুল। একই সাথে এটা ফোনের ব্যাটারিও কম খরচ করে।

আরও পড়তে পারেনঃ কতোখানি স্টোরেজ প্রয়োজন আপনার ফোনের জন্য?

অ্যামোলেড ডিসপ্লেতে প্রতিটা পিক্সেল নিজস্বভাবে আলো তৈরী করে। যেখানে LCD টেকনোলজিতে ব্যকলাইট ব্যবহার করে ডিসপ্লেকে আলোকিত করা হয়। এ কারণে, এদের চেয়ে অ্যামোলেড ডিসপ্লে অনেক বেশি ডার্ক এবং ডীপ কালার দেখাতে পারে। অন্যদিকে এলসিডি ডিসপ্লেতে ডীপ কালার বা ডার্ক অবস্থায় সেটা কিছুটা ফ্যাকাসে দেখা যায়।

ডার্ক মোড বা নাইটমোডের সবচেয়ে সেরা ফলাফল পাওয়া যায় অ্যামোলেড ডিসপ্লেতেই। কারণ, ডার্কমোডে যে জায়গাগুলো কালো বা ডার্ক, সেই জায়গার পিক্সেলগুলোর আলো আক্ষরিক অর্থেই বন্ধ থাকে অ্যামোলেড ডিসপ্লেতে। যে জায়গাতে রঙ থাকে, শুধু মাত্র সেই জায়গার পিক্সেলগুলোরই আলো জ্বলে অ্যামোলেড ডিসপ্লেতে। ফলাফল হিসেবে, ডার্কমোডের যেমন নিখুঁত আউটপুট পাওয়া যায়, তেমনি পিক্সেলের আলো বন্ধ থাকার কারণে ব্যাটারি লাইফ বেড়ে যায়।

হাই রিফ্রেশরেট বনাম অ্যামোলেড ডিসপ্লে

আপনি যদি ফোনে গেম খেলতে পছন্দ করেন, তাহলে অ্যামোলেড এর তুলনায় হাই রিফ্রেশরেটের ডিসপ্লে আপনার বেশি কাজে আসবে। স্মুথ গেমিং এর স্বাদ পাবেন তাতে। তবে, এ জন্য আপনাকে ব্যাটারি বেশি খরচ করতে হবে। কারণ, হাই রিফ্রেশরেট মানেই বেশি ব্যাটারি খরচ। যতোবেশি রিফ্রেশরেটে ফোন ব্যবহার করবেন ততটাই কম যাবে ফোনের চার্জ।

পাশাপাশি এটা মনে রাখাও জরুরী যে, স্মার্টফোনের অনেক গেমই ৬০ হার্জ পর্যন্ত সাপোর্ট করে। অর্থাৎ আপনার ডিসপ্লে ১২০ হার্জের হলেও গেমটিতে কোন পরিবর্তন হবে না। অতিরিক্ত রিফ্রেশ রেটের কোন সুবধা আপনি পাবেন না। তাই, বেশি রিফ্রেশরেটের সুবিধা নিতে হলে সেরকমই গেম প্লে করতে হবে। গেমিং ছাড়া ডেইলি লাইফে হাই রিফ্রেশরেট খুব বড় কোন প্রভাব ফেলে না।

আরও পড়তে পারেনঃ স্মার্টফোনের ৫টি স্মার্ট ব্যবহার সাহায্য করবে প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে

অন্যদিকে, আপনি যদি স্মার্টফোনে ভিডিও দেখা, ছবি তোলা বা সাধারণ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে থাকেন। তাহলে নিঃসন্দেহে অ্যামোলেড ডিসপ্লে আপনার জন্য উপযুক্ত হবে। কারণ এতে যেমন প্রায় নিখুঁত রঙের দেখা পাবেন, তেমনি উজ্জ্বলতা বা ডার্ক কালার নিয়ে পাবন অসাধারণ অভিজ্ঞতা। যেটা আপনি প্রতিটা মুহূর্তেই টের পাবেন। এছাড়া ব্যাটারি খরচ কম হওয়ার কারণে, সেটাও একটা প্লাস পয়েন্ট হবে আপনার জন্য।

স্বল্প দামে সেরা ফিচার

প্রিমিয়াম বা ফ্লাগশিপ ফোনে দুইটা ফিচারই একই সাথে পাওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু মিড-বাজেটের ফোনগুলোতে সেটা হয় না। একটা নিলে একটা ছাড়তে হয়। তাই, এখানে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বেছে নিতে হয়।

আলোচনার পরে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, আপনার বাজেট অল্প হলে ডিসপ্লের ব্যাপারে কোন জিনিসটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। হ্যাঁ, অ্যামোলেডের কথাই বলছি। আপনার বাজেটের মধ্য অ্যামোলেড আর হাই রিফ্রেশরেট যুক্ত ডিসপ্লের মাঝে যেকোন একটি বেছে নেওয়ার যদি পরিস্থিতি আসে তাহলে অ্যামোলেড ডিসপ্লেরটাই নিতে পারেন।

মিড-বাজেটের ফোনের আরেকটা দিক হচ্ছে, এতে প্রসেসর বা জিপিইউ খুব বেশি ভালো থাকে না। ফলে কোম্পানিগুলো যতোই গেম ফোন বলে প্রচারণা চালাক না কেন, আসলে সেগুলোর পারফরমেন্স বা স্থায়িত্ব খুব একটা ভালো হয় না। গেমিং করলে ফোন গরম হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। সব মিলিয়ে এসব ফোনে অনেক হায়ার রিফ্রেশরেট থাকলেও হয়ত আপনি সেটার পুরো সুবিধাটা নিতে পারবেন না।

অন্যদিকে অ্যামোলেডের ডিসপ্লের সুবিধাটা আপনি ফোন ব্যবহারের প্রতিটা মুহূর্তেই বুঝতে পারবেন। ফোনে আপনার কাজ যাই হোক না কেন, অ্যামোলেডের অভিজ্ঞতা নিতে কোন অসুবিধা হবে না।

যাইহোক, অ্যামোলেড নাকি হাই রিফ্রেশরেট ডিসপ্লে নিয়ে এই ছিলো আমাদের আজকের আলোচনা। আশাকরি, সম্পূর্ণ লেখাটি বুঝতে পেরেছেন। কেমন লাগলো লেখাটি, তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। চাইলে লেখাটি ফেসবুকে আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করে নিতে পারেন।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2023 © KendroBangla | All Rights Reserved